জাতীয় রপ্তানি ড্যাটায় এক্সেসরিজকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান ড. মোয়াজ্জেম

Published in দৈনিক ইত্তেফাক on Tuesday, 17 October 2017

‘এক্সেসরিজ খাত না এগিয়ে গেলে পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে’

ইত্তেফাক রিপোর্ট

তৈরি পোশাক শিল্পের এক্সেসরিজ খাত এগিয়ে যেতে না পারলে মূল খাত অর্থাৎ পোশাক খাতের রপ্তানিও এগিযে যেতে পারবে না। তখন রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। বর্তমানে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তুলনামূলক কম দামে মানে উন্নত দেশীয় এক্সেসরিজ সরবরাহ করছেন এসব খাতের উদ্যোক্তারা। এতে সময় এবং অর্থ সাশ্রয়ের সুবিধায় এখন বড় ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে পোশাক খাত। তবে প্রত্যক্ষ এবং প্রচ্ছন্ন রপ্তানি সত্ত্বেও কোন রকম প্রণোদনা না থাকা এবং ৩৫ শতাংশ করপোরেট করসহ নানান নীতি প্রতিকূলতায় খাতটি এখন সংকটের মধ্যে রয়েছে।

মঙ্গলবার এক সেমিনারে এই বক্তব্য তুলে ধরেন উদ্যোক্তারা। ‘পোশাক রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা: এক্সেসরিজ খাতের ভূমিকা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করেছে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএপিএমইএ। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব শুভাশীস বসু, এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজিএপিএমইএ সভাপতি আব্দুল কাদের খান।

অনুষ্ঠানে নিবন্ধ উপস্থাপনকালে বিজিএপিএমইএর সাবেক সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম (রফতানি আদেশে পাওয়ার পর ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌছানো পর্যন্ত সময়) একটা গুরুপূর্ণ বিষয়। গত অর্থবছরে ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানিতে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের স্থানীয় এক্সেসরিজ ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের এক্সেসরিজ সরাসরি রপ্তানি হয়েছে। ২০২১ সালে পোশাক রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে ১২ বিলিয়ন ডলারের এক্সেসরিজ সহায়তা প্রয়োজন হবে। পরে তিনি এ খাতের নানা সংকটের কথা তুলে ধরেন।

ড. মশিউর রহমান বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে। অতি নিয়ন্ত্রণ এবং  সাধারণ আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য থাকায় বন্ডের অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি শুল্ক যৌক্তিক হওয়া উচিৎ। রাজস্ব নীতি শ্ল্পি বিকাশে সহায়ক হতে হবে।

তিনি বলেন, এক্সেসরিজ শিল্প ও মান সম্মত না হলে পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন কম সময়ে এক্সেসরিজ পাওয়া যায় বলে পোশাক খাত সুবিধা পাচ্ছে। এ কারণে এক্সেসরিজের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন।

কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, পোশাক শিল্পের আজকের এ অবস্থান তৈরির নেপথ্যে  সবচেয়ে  বড়  ভূমিকা এক্সেসরিজ শিল্পের। নানা প্রতিকূলতার পরও খাতটি পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজের ৯৫ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। এর ফলে লিড টাইমে সহায়তা পেয়েছে পোশাক খাত। তাই এ খাতের প্রণোদনা দেওয়া একটি নায্য দাবি।

বাণিজ্য সচিব বলেন, এক্সেসরিজ খাতে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। পোশাক খাতের মতো এ খাতেরও করপোরেট কর ১০-১৫ শতাংশে অর্থাৎ একই হারে নামিয়ে আনা উচিৎ। এ খাতেও যৌথ বিদেশি বিনিয়োগ আনতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান তিনি। পোশাক খাতের বিভিন্ন সমস্যা প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন নতুন চক্র তৈরি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নাকি র‌্যাব, পুলিশের মতো নিজস্ব বাহিনী প্রয়োজন। এনবিআরের সক্ষমতা নিয়ে যথেষ্ট কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী  বলেন, পোশাক খাত দুর্বল হলে এক্সেসরিজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার এক্সেসরিজ দুর্বল হলে পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পৃথক রপ্তানি মুদ্রা নীতি এবং এক্সেসরিজের জন্য প্রণোদনাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করেন তিনি।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কোনো সংগঠনে কত জন এমপি আছেন তার ভিত্তিতে নীতি সহায়তা দেওয়া হয়। যেমন পোশাক খাতে এ মুহূর্তে ৩৫ জন এমপি আছেন। মাত্র ৩ জন এমপি নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পাচ্ছে না এক্সেসরিজ খাত। জাতীয় রপ্তানি ড্যাটায় এক্সেসরিজকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।