পোশাক রফতানি বাড়াতে স্থানীয়ভাবে সব দেশে অফিস খুলতে হবে: মোস্তাফিজুর রহমান

Published in সমকাল on Monday, 22 January 2018

নতুন বাজারে পোশাক রফতানিতে গতি কম

আবু হেনা মুহিব

তৈরি পোশাকের প্রচলিত বাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নতুন বাজারে রফতানি উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। রফতানি বাড়াতে প্রায়ই সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি দল এসব দেশে যাচ্ছে। তবে সম্ভাবনা অনুযায়ী সাড়া মিলছে না নতুন বাজার শ্রেণির ২৫ দেশ থেকে। তৈরি পোশাকের মোট রফতানি আয়ে এসব দেশের অবদান আরও কমেছে।

চলতি অর্থবছরে ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সামগ্রিকভাবে পোশাক রফতানি বেড়েছে আগের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। তবে নতুন বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। নতুন বাজারে গত ছয় মাসে বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে নতুন বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশের বেশি। গত ছয় মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পোশাকের রফতানি বেড়েছে ১১ শতাংশ।

প্রচলিত রফতানি বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সাল থেকে বিকল্প বাজারে মনোযোগ দেন রফতানিকারকরা। এসব বাজারে রফতানি উৎসাহিত করতে ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

প্রচলিত বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮ দেশকে বিবেচনা করে থাকেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এর বাইরে গত এক দশক ধরে ২৫টি দেশকে নতুন বাজার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১১টি দেশকে নতুন বাজার শ্রেণির বড় বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব বাজারের আটটিতেই রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। আলোচ্য ছয় মাসে নতুন বাজারে ২১৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, শুধু নতুন বাজার নয়, ইউরোপের বাইরের অন্য কোনো বাজারে রফতানি আশানুরূপ নয়। এসব বাজারে রফতানি বাড়াতে যোগাযোগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এসব বাজারে রফতানি বাড়াতে স্থানীয়ভাবে সব দেশে অফিস খুলতে হবে। পণ্য সম্পর্কে স্থানীয়দের ধারণা দিতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলো কোন কৌশলে এসব বাজারে রফতানি বাড়াচ্ছে, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য সম্পর্ক দিন দিন গুরুত্ব হয়ে উঠছে। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে এশিয়ার বড় বাজারগুলো টার্গেট করে সেখান থেকে বিনিয়োগ আনার বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। নতুন বাজারে শ্রেণিতে তুরস্ক, চীন, জাপান ও ভারতকে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত ছয় মাসে চীনে রফতানি কমেছে ১২ শতাংশের বেশি। ১৯ কোটি থেকে ১৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে রফতানি। জাপানে কমেছে ১ শতাংশ। ৩৭ কোটি থেকে ৩৬ কোটি ডলারে নেমেছে রফতানি। সবচেয়ে বেশি ৫০ শতাংশ কমেছে তুরস্কে। ২২ কোটি ডলারের রফতানি ১১ কোটিতে নেমে এসেছে। তবে ভারতে রফতানি বেড়েছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। ছয় কোটি থেকে রফতানি বেড়ে হয়েছে ১১ কোটি ডলার। অস্ট্রেলিয়ায়ও রফতানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। রাশিয়ায় বেড়েছে ১৫ শতাংশ।

কেন নতুন বাজারে আশানুরূপ রফতানি নেই- জানতে চাইলে ক্ল্যাসিক গার্মেন্টের এমডি এবং বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের প্রধান কাজ নতুন বাজার সম্প্রসারণ। সে দায়িত্ব পালন করছে না তারা। বাংলাদেশের রফতানি পণ্য নিয়ে খুব ভালো ধারণাও নেই তাদের। আবার এ শ্রেণিতে বড় বাজার ছিল তুরস্ক। নিজেদের পোশাকে সুরক্ষা দিতে চার বছর আগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ২৭ শতাংশ শুল্ক্ক আরোপ করে তারা। এর পর থেকেই সেখানে রফতানিতে ধস নামে। চীনও বড় বাজার। তবে সেখানে উচ্চমূল্যের পোশাকের চাহিদা বেশি।

বাংলাদেশ এখনও ওই মানের পোশাকের জন্য প্রস্তুত নয়। কারণ, উচ্চ প্রযুক্তি এবং বড় অঙ্কের বিনিয়োগের বিষয় আছে এখানে। জাপানের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে প্রতিযোগী দেশের মতো সরকার যদি বরাদ্দ রাখে, তাহলে নতুন এসব বড় বাজার কাজে লাগানো যাবে। সেটা না হলে নতুন বাজার নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।