অর্থবছর ‘বারো’র জন্য তেরো শিক্ষা

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০১০-১১ অর্থবছর ছিল একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং সময়। বছরের শুরুতে যে বিষয়গুলো ছিল উদ্বেগের, বছরের মাঝামাঝি এসে তা অর্থনৈতিক ভারসাম্যের ওপর গুরুতর চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপই প্রকাশিত হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং জাতীয় মুদ্রা টাকার বিনিময়মূল্য কমে আসার মাধ্যমে। এর পেছনে একদিকে যেমন বৈশ্বিক পরিস্থিতি কাজ করেছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও দায়ী। ২০১০-১১ অর্থবছরে অর্জিত দৃষ্টিকাড়া প্রবৃদ্ধি পরের বছরের লক্ষ্য নির্ধারণে ভালো ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু আগামী অর্থবছরে আরও উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সমাপ্তপ্রায় অর্থবছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।

চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি: বিশ্বব্যাপী আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের পর বহির্বিশ্বে চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রায় সব দেশেই অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির গুরুত্ব নতুন করে মনোযোগ পাচ্ছে। তাই ২০১০-১১ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিকারী শস্য উৎপাদন, গ্রামীণ অকৃষি খাত, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ইত্যাদিকে সরকার সমর্থন দিয়ে এসেছে। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় মাত্রার প্রসারও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিকে জোরদার করেছে। এ ছাড়া সরকার আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংযুক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বাজারে দেশীয় পণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য নীতি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি: ২০১০-১১ অর্থবছরে চমৎকৃত হওয়ার মতো ৬ দশমিক ৭ শতাংশ (মতান্তরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে দেখা গেছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই অর্জিত প্রবৃদ্ধিতে উচ্চতর হারে অবদান রেখেছে কৃষি ও শিল্প খাত। কৃষি-প্রবৃদ্ধি গ্রামীণ আয় বাড়ায় এবং শিল্পের বিকাশ বাংলাদেশে আবশ্যিকভাবে শ্রমঘন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। তাই ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের চেয়ে বেশি দারিদ্র্যবান্ধব হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে আরও উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণের সময় রাখতে হবে, তা যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় এবং দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য কমাতে ভূমিকা রাখে।

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার প্রচেষ্টা: ২০১০-১১ অর্থবছরের অন্যতম প্রধান শিক্ষাটি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার উদ্যোগ, বিশেষ করে, খাদ্যমূল্য সম্পর্কিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা, খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রির ব্যবস্থা, দুস্থদের জন্য খাদ্য বিতরণের ব্যাপক কর্মসূচি চালু রাখা এবং বড় আকারে খাদ্য মজুদ দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অর্থনৈতিক ক্রিয়া-প্রকরণগুলোর বিচক্ষণভাবে এক গতিশীল মিশ্রণ ঘটাতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগগুলোতে সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দিকেই মূলত জোর দেওয়া হয়েছে। মধ্য ও নিম্ন আয়ের নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে আরও আয় বৃদ্ধিকারী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

রাজস্ব আহরণ: ২০১০-১১ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আহরণে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এনবিআরের এই সাফল্যই যথেষ্ট নয়। সরকারের সম্পদের ঝুড়ি ভরাতে হলে কার্যকরভাবে এনবিআর-বহির্ভূত কর এবং কর-বহির্ভূত আয়ের উৎস জোরদার করতে হবে। ক্রমবর্ধমান সরকারি ব্যয় এবং হ্রাসমান বৈদেশিক সাহায্যের পটভূমিতে আগামী অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর আহরণের বর্তমান ধারা বজায় রাখতে হবে। বিবিধ সরকারি সেবার মূল্যও পুনর্বিবেচনা এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মুনাফা নিশ্চিত করতে হবে। রেলওয়েসহ অন্যান্য গণসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ফাঁকি কমিয়ে আনতে হবে। সরকারি সম্পদের ইজারাদানও (যেমন ঘাট ও জলমহাল) দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ: জ্বালানি খাতের সমস্যা সমাধানে ভাড়ায় ‘ত্বরিত’ আনা বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ‘বিলম্বিত’ হয়ে যাচ্ছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কারণে আর্থিক ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ পড়ছে। অন্যদিকে এ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনক্ষমতার পুরোটাও সরবরাহ করছে না। পিডিবির পুরোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রগুলো ক্রমাগতভাবে নষ্ট থাকায় নিট বিদ্যুৎ সরবরাহ খুব একটা বাড়েনি। মধ্যমেয়াদি সমাধান হিসেবে পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়নও দ্রুত অগ্রাধিকার পায়নি। সময় থাকতে বেশ কিছু বড় আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বন্দোবস্তও নেওয়া হয়নি। তবে প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের অপ্রতুলতাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। ২০১১-১২ অর্থবছরে গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকর এবং স্থানীয় কয়লা উত্তোলন সমস্যার যৌক্তিক সমাধান ছাড়া কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদ্যুৎ খাতের উন্নতি ঘটানো সম্ভব নয়। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে জ্বালানির মূল্যও যৌক্তিক মাত্রায় সমন্বয় করতে হবে।

ভর্তুকি: দারিদ্র্যবান্ধব প্রবৃদ্ধির জন্য উৎপাদনশীল খাতে ভর্তুকির একটি বড় ভূমিকা আছে। তবে বেশি করে ‘ভালো’ ভর্তুকি বরাদ্দ রাখার বিষয়টি অনেকাংশেই নির্ভর করে রাজস্বব্যবস্থার সক্ষমতার ওপর। খেয়াল রাখতে হবে, ক্রমবর্ধমান ভর্তুকির চাহিদা যেন সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাবকে দুর্বল না করে দেয়। সাম্প্রতিক বাজার অবস্থার নিরিখে ভর্তুকি-সম্পর্কিত ব্যয়ের যৌক্তিকতাগুলো পুনর্নিরীক্ষা করা প্রয়োজন এবং সেই সঙ্গে এর প্রকৃত ফলাফলও বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে এ ধরনের ব্যয়ের যৌক্তিকীকরণ এবং সমন্বয় করতে হবে।

পুঁজিবাজার: ২০১০-১১ অর্থবছরে পুঁজিবাজার থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আমরা পেয়েছি, তা হলো নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর তদারকি সংস্থার অনুপস্থিতি বা দ্রুত বাজারকে বিকৃত ও বিপর্যস্ত করে ফেলে। স্বল্প আয়ের পরিবারের কাউকে কিংবা ব্যাংকসহ অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনা ও পুনরায় প্রাণসঞ্চার করার জন্য শুধু সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কর্মকর্তা অদল-বদল করলেই কাজ হবে না। প্রভাবশালী বাজার সংগঠকদের কর্মকাণ্ডে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা জোরালো না করে শুধু তারল্য সঞ্চালন করলে বাজারমূল্য আবার পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে। পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে পুঁজিবাজারের জন্য কোনো সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচি সরকার নেয় কি না, নাকি অসংলগ্ন গুরুত্বহীন কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দায় শেষ করে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ব্যাংকিং খাত: ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোতে সুদের হারের সীমা বেঁধে দেওয়া এবং আমানতকারীর মুনাফার হার কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক মধ্যস্থতার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়নি। এর ফলে ঋণ উদ্দিষ্ট জায়গায় ব্যবহূত না হয়ে অন্যত্র প্রবাহিত হয়েছে; পাশাপাশি ব্যাংকিং ব্যবস্থাও তারল্য সংকটে পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতির হার এবং আমদানি-ব্যয় বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সুদের হারের সীমাকে অংশত পরিত্যাগ করতে হয়েছে।

২০১০-১১ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে বিপুল মুনাফা করেছে, বিশেষ করে, পুঁজিবাজারে তাদের অনুমোদিত সীমার বাইরে গিয়ে ফাটকা বিনিয়োগের মাধ্যমে; এতে যথাযথ নজরদারি চালাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাফিলতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি জোরদার করা খুব জরুরি। শেষ পর্যন্ত তারল্য সংকট বা ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের কারণে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ড যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

বিনিয়োগ অর্থায়ন: দেশের বিরাট বিনিয়োগ চাহিদার পুরোটাই কেবল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সহায়তার যথাযথ ব্যবহার না করতে পারা এবং অতিরিক্ত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে না পারার দরুন ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় সব বিনিয়োগই করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। ফলে রাজস্ব ও লেনদেনের ভারসাম্যে নেতিবাচক চাপ পড়ে। ভাড়ায় চালিত জ্বালানি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানির সম্পূর্ণটাই অর্থায়ন করেছে স্থানীয় ব্যাংকগুলো (বিদেশি বিনিয়োগ নয়)। সরকারের ব্যাপক ঋণ নেওয়াও আর্থিক খাতে তারল্য সংকটে ভূমিকা রাখে। তাই ভবিষ্যতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাড়তি বিদেশি অর্থায়ন অত্যন্ত আবশ্যক।

আমদানি অর্থায়ন: জ্বালানি, সার ও খাদ্যশস্যের দামসহ বিশ্ববাজারে নানা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কেউ হয়তো আমদানি-কাঠামো নিয়ে বিশেষ আপত্তি তুলবেন না। শিল্পের যন্ত্রপাতির প্রভূত আমদানি (অংশত জ্বালানি প্রকল্পগুলোর কারণে) বাণিজ্য-ঘাটতি বাড়ার অন্যতম কারণ। রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে পোশাকশিল্পের জন্য বিপুল কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজন হয়েছে। প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ হ্রাস, স্থবির বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহায়তা ব্যবহারের নিম্নহারের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, দেশের লেনদেন ভারসাম্য শুধু বর্ধিত রপ্তানি দিয়েই আমদানির চাহিদা মেটানো যাবে না। ২০১১-১২ অর্থবছরে বর্ধিত ভোগ ও বিনিয়োগের চাহিদা পূরণ করতে, তথা উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে রপ্তানির বাইরে অন্য উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বিনিময় হার: ২০১০-১১ অর্থবছরে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কঠিন বিষয় ছিল। মূল্য স্থিতিশীলতা রক্ষার বিপরীতে রপ্তানি ও প্রবাসী-আয় বৃদ্ধির মতো লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বিধান দরকার ছিল। লেনদেন ভারসাম্যের ওপর চাপ ২০১১-১২ অর্থবছরে তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা থাকায় কার্যকর বিনিময় হার নিশ্চিত করাটা একটি বড় সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার করে টাকার মান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার সুযোগ খুবই সীমিত। বিনিময় হারের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা এড়িয়ে চলা উচিত এবং ব্যাংক ও খোলাবাজারের হারের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য কাম্য নয়। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময়ে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের স্বার্থের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

উন্নয়ন প্রশাসন: ২০১০-১১ অর্থবছরের উন্নয়নের ফল পাওয়া অনেকাংশে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির দুর্বলতার কারণে। স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে উন্নয়ন প্রশাসনের তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যকরভাবে অর্জনসহ উন্নয়নকাজের গতি বৃদ্ধি প্রায় অসম্ভব।

২০১১-১২ অর্থবছরে উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা অনেকাংশে নিরূপিত হবে উন্নয়ন প্রশাসনের পেশাগত সামর্থ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন দ্বারা।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা: আগেই বলেছি, ২০১০-১১ অর্থবছর সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং ছিল। উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সত্ত্বেও বর্তমান বছরের শেষে সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। শেষ হওয়া অর্থবছরের অভিজ্ঞতা ইঙ্গিত দেয় যে অর্থনীতিতে উদ্ভূত নেতিবাচক প্রবণতা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সক্রিয় নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বিত হস্তক্ষেপ ঘটেনি। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরও জোরালো নেতৃত্ব দাবি রাখে।

সামগ্রিকভাবে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে উত্তেজনা সামনের কয়েক মাসে বাড়বে বলে মনে হয়। এ পরিস্থিতিতে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও বেশি যোগ্যতা প্রদর্শন করতে হবে।

পরিশেষে বলি, সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গন ২০১০-১১ অর্থবছর মোটামুটি শান্ত ছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে দেখে আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন প্রচেষ্টা সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা জেগে উঠছে। সুতরাং, সরকার তার উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে রাজনৈতিক দক্ষতা কতটা সফলভাবে কাজে লাগায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সেটাও হবে অন্যতম দেখার বিষয়।