গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি আয় ও অর্থ পাচারের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিতঃ তৌফিকুল ইসলাম খান

Published in বাংলাদেশ প্রতিদিন on Sunday, 29 January 2017 

গার্মেন্ট রপ্তানির টাকা যায় কোথায়

২৯৭ কনটেইনার পোশাক রপ্তানি । এক ডলারও দেশে আসেনি
bd-pratidin-2017-01-30-01

অর্থ মন্ত্রণালয় সংসদীয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায় চমকে ওঠার মতো তথ্য দিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। স্থায়ী কমিটিকে তিনি জানালেন, একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ২৯৭ কনটেইনার (তৈরি পোশাক) রপ্তানি করেছেন কিন্তু এর বিপরীতে একটি ডলারও দেশে আসেনি। তাহলে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় করা মূল্যবান এই বৈদেশিক মুদ্রা গেল কোথায়? এনবিআর চেয়ারম্যান জানালেন, বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি সভায় বললেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের পরিমাণ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় সেকেন্ড হোম করেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরে একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। ’ এ বিষয়ে উদাহরণস্বরূপ কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করলেন তিনি। জাতীয় সংসদের পশ্চিম ব্লকে ১ নম্বর স্থায়ী কমিটির কক্ষে গত ১১ আগস্ট এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই কার্যবিবরণীতেই পোশাকশিল্প মালিকদের পণ্য রপ্তানির আয় দেশে না এনে বিদেশে রেখে দেওয়ার মতো এমন চমকে দেওয়া তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা পণ্য রপ্তানি করে সেই অর্থ দেশে ফেরত না এনে তাহলে কোথায় পাঠাচ্ছেন? সেই টাকা দিয়ে কী করছেন তারা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, কাস্টমস সবার উচিত সমন্বিতভাবে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা। নয়তো এ ধরনের অর্থপাচার ও রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন না করার ঘটনা ভয়ঙ্কর রকম বেড়ে যাবে। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মওজুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জানা গেছে, উল্লিখিত ওই একটিই নয়, এ ধরনের আরও চার হাজারের বেশি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনবিআর সূত্রগুলো জানায়, রপ্তানি আয় ফেরত না আনা, শুল্ক ফাঁকি দেওয়া, আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং, বন্ডিং সুবিধার অপব্যবহার, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অর্থপাচার-সংক্রান্ত তদন্ত পরিচালনায় এনবিআরের একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। ওই টাস্কফোর্স এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যেখানে চার হাজার ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৫৬২টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের পরিমাণ উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, উৎপাদনে থাকা চার হাজার ৫৮টি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকেই আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করেছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বিদেশে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থপাচার করেছে। এমনকি মালিকদের অনেকের স্ত্রী, সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও বিদেশে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। ওসব বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরবর্তী সময় দফায় দফায় পণ্য আমদানির নামে অর্থপাচার করেছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে অর্থ পাঠিয়ে পরে নিজেরা ওই অর্থ তুলে নিয়েছেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের ঘটনা আমরা শুনে আসছি। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য কাস্টমসের কাছ থেকে আমরা জানতে পারছি, সেটা হচ্ছে : শত শত কনটেইনার পণ্য রপ্তানি করে এক ডলার ফেরত না আনা। তাহলে প্রশ্ন উঠে এই অর্থ যাচ্ছে কোথায়? এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর হওয়ার পাশাপাশি সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত। সিপিডির এই গবেষক বলেন, আমদানি-রপ্তানি যাই হোক না কেন, এর তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে, সেই তথ্যের সঙ্গে কাস্টমসের তথ্য সমন্বয় করে যখনই অনিয়ম ধরা পড়বে, তখনই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে হয়তো এ ধরনের অনিয়ম বা অর্থ পাচারের ঘটনা কিছুটা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।