চাহিদার তুলনায় প্রাপ্যতা কম হওয়ার কারণেই ঢাকায় চাপ বাড়ছেঃ ড. ফাহমিদা খাতুন

Published in দৈনিক সমকাল on Sunday, 26 November 2017

আন্তর্জাতিক জরিপে ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যদিও জীবনযাত্রার মান কিংবা বসবাস যোগ্যতার ভিত্তিতে ঢাকার অবস্থান একেবারে নিচের দিকে। তারপরও প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় আসছে। এতে একদিকে যেমন শহরে মানুষের চাপ বাড়ছে তেমনি বাড়ছে আয় বৈষম্যও। ঢাকায় মানুষের ছোটার কারণ, জীবনযাত্রার ব্যয়, আয়ব্যয় বৈষম্য কমানোর পরামর্শ নিয়ে সমকাল অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ( সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাসলিমা তামান্না

যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিষ্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এ বছরের মার্চের জরিপ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর ঢাকা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা মার্কারের জরিপ বলছে, বিশ্বের বড় বড় শহর যেমন- টরন্টো, বার্লিন, মেলবোর্ন, পার্থ কিংবা ওয়াশিংটন থেকেও ব্যয়ের দিক ঢাকা এগিয়ে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

ড. ফাহমিদা খাতুন: সবখাতে খরচ একরকমভাবে বাড়েনি। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে বাসা ভাড়ায়। এর একটা কারণ হলো- বাংলাদেশ আকারে ছোট কিন্তু জনবহুল একটা দেশ। এখানকার বেশিরভাগ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে ঢাকাকেন্দ্রিক। এ কারণে ঢাকার ওপর চাপ বাড়ছে। কোনো পণ্য বা সেবার সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য যেখানে হয়, তার মূল্যটা সেখানেই নির্ধারিত হয়। এখানে মানুষ বাড়ছে কিন্তু জমি বাড়ছে না। ঢাকায় একটা ফ্ল্যাটের ভাড়া আর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের বাসা ভাড়া প্রায় সমান।

এরপরেই বলা যেতে পারে সেবাগুলোর কথা। যেমন- শিক্ষাখাত, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি। যদি কেউ গুণগত শিক্ষা পেতে চান তাহলে তাকে ব্যক্তিখাতের স্কুলগুলোতে যেতে হচ্ছে। ঢাকায় কিছু সরকারি স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীর তুলনায় তা অনেক কম হওয়ায় অনেকেই প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটছে। আর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের যেহেতু চাহিদা বেশি তাই তারা দামটাও সেরকম রাখছে। একই অবস্থা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও। প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলো সরকারি হাসপাতালের তুলনায় সেবা ভালো দেবে, কিন্তু দামটাও রাখবে অনেক বেশি। এখানে কারণটা হলো, দেশে এখনও রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের স্বল্পতা আছে, হাসপাতালের সংখ্যাও অনেক কম। বিশেষ করে মানসম্মত চিকিৎসা সেবার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেশি বেতনে ভালো চিকিৎসক রাখার চেষ্টা করছে। উন্নত প্রযুক্তি এনে চিকিৎসা করছে। সেসব হাসপাতালে গেলে সরকারি হাসপাতালে যতটুকু খরচ হয় তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে জিনিসপত্রের দামও অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এর কারণেও কী ঢাকাকে ব্যয়বহুল শহর বলা হচ্ছে…

ড. ফাহমিদা খাতুন: আমাদের কৃষি উৎপাদন আবহাওয়া কিংবা পরিবেশের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। আমাদের দেশে যেহেতু নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় সে কারণে অনেক সময় উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই বছরটা এমনই একটা বছর যেখানে লম্বা সময় ধরে প্রবল বর্ষণ ছিল। যার ফলে ফসলের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়।  এছাড়া দেশে এবার দুইভাগে বন্যা হয়েছিল। একবার এপ্রিলের শুরুর দিকে অগ্রিম একটা বন্যা হয়। তখন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতিটা পূরণ হতে না হতে জুনের দিকে আবার একটা বন্যা হয়। সেটার ক্ষতিপূরণ এখনও চলছে। এ কারণে শুধু চাল নয়,সব ধরনের কৃষিণ্যের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি হলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হয়,তেমনি পণ্য চলাচলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ঢাকা শহরের সব ধরনের খাদ্য, জিনিসপত্রের চাহিদা পূরণ হয় অন্যান্য জেলা থেকে আসা পণ্য থেকে। এবার  প্রথমত উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আবার যাও বা উৎপন্ন হয়েছে তাও ঢাকায় আসতে দেরী হয়েছে। সুতরাং চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতি থাকায় মূল্য বেড়ে গেছে। তবে এখন সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এলেও ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রবণতা রয়ে গেছে। আসলে আমাদের দেশে একবার যেটার দাম বেড়ে যায় সেটা আর সহজে কমে না।

একদিকে বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা বিশ্বের চতুর্থ নিকৃষ্ট শহর, অন্যদিকে জীবনযাত্রাও অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে কেন?

ড. ফাহমিদা খাতুন: মানুষ সেখানেই যায় যেখানে সে কাজের এবং আয় করার সুবিধা পায়। আমাদের দেশটা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে সব জেলা একইভাবে উন্নয়ন করতে পারেনি। অন্য জেলাগুলোতে ঢাকার মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল,বিপনি কেন্দ্র, বাজারব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা নেই। তাই সবাই ঢাকায় আসছে। কিন্তু মানুষের চাপ বাড়ার সঙ্গে বিভিন্ন সেবার পরিমাণ বাড়ছে না। তারপরও সবাই ঢাকায় আসছে, কারণ অন্যান্য শহরে এতটুকুও তো নেই।

 

ঢাকায় মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বস্তিতে বসবাস করে; যাদের অনেকের আয় ৫ হাজার টাকার কম। তারা এ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করবে। তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ড. ফাহমিদা খাতুন: ঢাকা শহরে যারা থাকেন তাদের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় বাড়ি ভাড়ার পেছনে। নিম্নআয়ের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। দেখা যাচ্ছে,কেউ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করলে এক কামরার জন্য ভাড়ার পেছনেই তিন হাজার টাকা চলে যায়। অনেকেই বাঁচার তাগিদে এখন আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেমন ধরুন, কেউ যদি কোনো অফিসের নিম্ন আয়ের কোনো কর্মচারী হয়, অফিস শেষে আরেকটা কাজে নিজেকে নিযুক্ত করছে। হতে পারে সেটা ছোট একটা দোকান,কিংবা নিজের উদ্যোগে করা ছোট অন্য কোনো ব্যবসা। সবাই একটির বেশি অন্য কোন কাজ করার চেষ্টা করছে। এতে সেই ব্যক্তির উপর চাপ বাড়ছে। তাতে হয়তো তার শরীরমন দুই-ই খারাপ থাকছে।  তাছাড়া এখানে বাজারপণ্য মনিটরিংয়ের ভালো ব্যবস্থা নেই। উন্নত দেশগুলোতে কোনো ভোক্তা যদি কোন পণ্যের মান,দাম নিয়ে খুশী না থাকে তাহলে তার অভিযোগ করার সুযোগ থাকে ভোক্তা অধিকারের আওতায়। আমাদের দেশে ভোক্তা অধিকার আদায়ের জন্য একটা সংগঠন থাকলেও এর কার্যকারিতা নেই। এখানে একজন ভোক্তা পণ্য নিয়ে সন্তুষ্ট না হলেও বিক্রেতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে না।

 

ঢাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভাসানটেকে ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছিল। তাও এখন দখলে চলে গেছে। তাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কী করা যেতে পারে?

ড. ফাহমিদা খাতুন: বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয় সরকারি বেসরকারি দুই খাত থেকেই। এটা আমাদের দেশেও করা যেতে পারে। যারা নিম্ন আয়ের সরকারি চাকরি করেন কিংবা যারা শিল্পকারখানায় কাজ করেন তাদের জন্য স্বল্প খরচে বাসস্থান তৈরি করা যায়। সরকারি কিছু জায়গায় যদি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাসস্থান তৈরি করা যায় তাহলে তাদের বাসস্থান সংকট কিছুটা কাটানো যাবে, জীবনযাত্রার মানও কিছুটা উন্নত করা যাবে। কারণ বস্তিতে বসবাস করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

 

সরকারি উদ্যোগেই কিন্তু ভাসানটেক প্রকল্প তৈরি হয়েছিল …

ড. ফাহমিদা খাতুন: এই ধরনের প্রকল্পের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা জরুরি। নইলে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকে যে দখলদারিত্ব করে থাকে এটা থেকে মুক্তি পাওয়া না গেলে কোনো পদক্ষেপই কার্যকর হবে না।

গ্রামে দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য নানা কর্মসূচি আছে; যা অনেকের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করেছে। কিন্তু শহরে এ ধরনের কর্মসূচি কার্যকর বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে কিছু বলুন?

ড. ফাহমিদা খাতুন: আমাদের দেশে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। সেখানে কৃষি বহির্ভূত অনেক কার্যক্রম হচ্ছে। ছোট ছোট উদ্যোক্তা যেমন বাড়ছে, তেমনি ছোট ছোট সেবাখাতও গড়ে উঠছে। এতে আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন কার্যক্রমও বাড়ছে। যারা কাজ করতে পারে না কিন্তু অতি দরিদ্র,সরকার থেকে তাদের বিভিন্ন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। যেমন-বিধবা,বয়স্ক, মুত্তিযোদ্ধা,প্রতিবন্ধী তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে ছেলেমেয়েদের উপবৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেকনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হয় গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য। শহরকে কেন্দ্র করে আমাদের সেরকম সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি নেই্। কিন্তু এটা লক্ষ্য রাখা দরকার, যারা শহরে আসছে তারা সবাই কাজ পাচ্ছে না। ফলে সব পরিবার তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে নগর দরিদ্র।

 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এ যে লক্ষ্যগুলো আছে তাতে প্রথমেই বলা হয়েছে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের কথা। নগর দরিদ্রদের অবস্থা পরিবর্তন না করে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কি আদৌ সম্ভব?

ড. ফাহমিদা খাতুন: না, সেটা মোটেই সম্ভব না। এখানে শহর এবং গ্রাম- উভয় এলাকায়ই সব ধরনের দারিদ্র্য দূর করতে হবে। গ্রামের মতো নগর দরিদ্রদের অবস্থা পরিবর্তনে নগরমুখী কিছু কিছু কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। যারা কাজ করতে পারে অথচ কাজ পাচ্ছে না এরকম সক্ষম যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তাদের ভোকেশনাল কিংবা টেকনিক্যাল কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। মোটকথা, তাদের উপার্জনকারী কাজের উপযোগী করার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তারা উদ্যোক্তা হতে পারে। তাদের ছোট ছোট ঋণ দেওয়া যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে, অন্যদিকে তাদের মধ্যে অপরাধমূলক কার্যক্রমের প্রবণতা কমে আসবে। স্বল্প শিক্ষিতদের উৎপাদনমুখী,সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত করতে হবে।

 

এক্ষেত্রে বেসরকারি বা ব্যক্তিখাত কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ড. ফাহমিদা খাতুন: আমাদের অর্থনীতির শতকরা ৮০ ভাগই হচ্ছে বেসরকারি খাত। সরকারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। সরকারের কাজ হচ্ছে নীতিমালা নির্ধারণ ও প্রণয়ন করা, ব্যক্তিগত খাতে যারা কাজ করবে তাদের জন্য উপযোগী অবকাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। এসব সুবিধা পেলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি আর ব্যক্তিগত খাতের ভূমিকা অনেকটা পরিপূরকের মতো। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ব্যক্তিখাতের বিকাশ হবে না। আবার ব্যক্তিখাতের অংশগ্রহণ ছাড়া  উন্নয়নে গতিময়তা আনা যাবে না।

 

জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও বড় বড় শপিংমল কিংবা রেস্টুরেন্টে আগের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি কিন্তু বেড়েছে…

ড.ফাহমিদা খাতুন: এর কারণ হলো,সমাজের একটা শ্রেণির হাতে প্রচুর অর্থ আছে। ব্যক্তিখাতের অনেকে আছেন যারা বিনিয়োগ করছেন।তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। তারা অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তার বাইরেও কিছু কিছু লোকের সহজলভ্য টাকা হচ্ছে। এখন ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা চলছে। কেউ কেউ হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে কিন্তু  ফেরত দিচ্ছে না। ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেওয়াটা যেন একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে । এই শ্রেণির মানুষও দ্রব্যমূল্য বাড়ার ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রাখছে। সমাজে আয় বৈষম্য বাড়াচ্ছে। তাদের হাতে প্রচুর সহজলভ্য টাকা থাকলেও কোথাও তারা সেই টাকা বিনিয়োগ করছে না। কেউ কর ফাঁকি দিচ্ছে, কেউ বা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। কেউ বড় বড় কন্ট্রাক্টে কমিশন পাচ্ছে, অনেকে ঘুষ নিচ্ছে। সুতরাং তাদের তো সেই অর্থব্যয় করতে হবে। তবে পাশাপাশি এটাও সত্যি যে বাংলাদেশের মানুষের আয় আগের তুলনায় বেড়েছে। তাদের মধ্যে কনস্যুমারিজম বা ভোগ করার প্রবণতাও বাড়ছে। বিশ্বায়নের ফলে অনেক পণ্যও মানুষের কাছে সহজলভ্য হচ্ছে।

 

আয়ব্যয়ের বৈষম্য কমাতে আপনার পরামর্শ কী?

ড.ফাহমিদা খাতুন: অনেকে এখন কর্মজগতে প্রবেশ করতে পারছেন না। সবার জন্য আমাদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। আমাদের বিনিয়োগ এবং জিডিপির অনুপাত এখনও ২৮ শতাংশের মতো। সেটাকে ৩২ শতাংশে নিতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আর বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকারকে উপযোগী নীতিমালা এবং অবকাঠামোগত সুবিধা তৈরি করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা,নীতিমালা সহজীকরণ এবং নীতিমালার ধারাবাহিকতা রক্ষা করাটাও জরুরি।