আমরা নতুন বছরে আর জঙ্গি তৎপরতা দেখতে চাই না : মোস্তাফিজুর রহমান

Published in সংবাদ on Monday, 2 January 2017

বিশিষ্টজনদের প্রত্যাশা

২০১৭ সালে বাংলাদেশ হবে জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশ ২০১৭ সালে হবে জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিমুক্ত। নতুন বছরের প্রথম দিনে এ প্রত্যাশা জানালেন দেশে বিশিষ্টজনেরা। নতুন বছর কেমন দেখতে চান_ এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. একে আজাদ চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী ও ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী সংবাদকে বলেছেন তাদের প্রত্যাশার কথা।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. একে আজাদ চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘নতুন বছরে আমরা পরিশীলিত, জ্ঞাননির্ভর, সমতাভিত্তিক ও জঙ্গিবাদমুক্ত সমাজ চাই। চাই অর্থনৈতিক উন্নতি-সমৃৃদ্ধি, শিক্ষার আরও প্রসার। সমাজ থেকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যও কমাতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য বলেন, ‘আমি এমন এক সমাজ ব্যবস্থা দেখতে চাই- যেখানে প্রত্যেক মানুষই তাদের সমঅধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে। যে সমাজে থাকবে না ধনী-দরিদ্র ও শ্রেণী বৈষম্য, থাকবে না জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস।

মানবাধিকারকর্মী ও ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম সংবাদ’কে বলেন, ২০১৬ সালে গুলশান, শোলাকিয়া, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জে যে হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে এর পুনরাবৃত্তি চাই না। আমি চাই আমাদের বাংলাদেশ হবে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত। অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, গার্মেন্টসসহ অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে। আমি চাই সমতা ও সাম্যের বাংলাদেশ। একজন শিক্ষক হিসেবে চাই তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষায়তনে ও পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংযুক্ত হবে। আমাদের জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সঠিক এবং নির্ভুলভাবে রক্ষিত হোক।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির সংবাদকে বলেন, গত বছরগুলোতে আমাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের যে বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা ছিল তা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এর পাশাপাশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গত বছরের জঙ্গি-মৌলবাদের বহুমাত্রিক তৎপরতা দেখলাম। এর অর্থ হচ্ছে যে জঙ্গিরা এখনও নির্মূল হয়নি। তারা ষড়যন্ত্র করছে। ২০১৭ সালে এটা সরকার ও আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যা মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখনও যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর বিচার শুরু হয়নি। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। এটাও ২০১৭ সালের জন্য চ্যালেঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংবিধান পুনঃপ্রবর্তনে সংগ্রাম আমাদের (নির্মূল কমিটির) অব্যাহত রাখতে হবে। সরকার ও বিরোধীদল অতীতের ভুল উপলব্দি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমাজ গড়ার জন্য একযোগে কাজ করবে বলেই আশা প্রকাশ করেন শাহরিয়ার কবির।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী সংবাদ’কে বলেন, ২০১৬ সালে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনসহ নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক যেসব আইন দেশে রয়েছে সেগুলোর সংশোধন চাই। চাই যৌন নির্যাতনসহ নারী নির্যাতনমুক্ত বাংলাদেশ। অপরাধীদের শাস্তি চাই। যাতে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি ছিল স্থিতিশীল। আমরা আশা করছি নতুন বছরেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে যে জঙ্গি তৎপরতা দেখা দিয়েছে এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণের যে ভূমিকা ছিল, তা নতুন বছরেও অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা নতুন বছরে আর জঙ্গি তৎপড়তা দেখতে চাই না। এজন্য আর্থিক খাতের সুশাসন, আইনি কাঠামোতে সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে বিনিয়োগ ও বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। যা গত বছরের মতো এবছরও সরকার দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।