টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে: রেহমান সোবহান

Published in প্রথম আলো on Monday, 20 March 2017

ব্র্যাক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

টেকসই উন্নয়নে সরকার-এনজিওর ‘স্বস্তিকর সহাবস্থান’ জরুরি

brac-day
ব্র্যাক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘এনজিও এবং উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য দেন l ছবি: প্রথম আলো

 

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনেও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সরকার-এনজিওর ‘স্বস্তিকর সহাবস্থান’ জরুরি।

গতকাল রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘এনজিও এবং উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ব্র্যাক দিবস উপলক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সরকার এবং এনজিওগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারলে ভালো। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ‘ক্ষুদ্রঋণ’ কর্মসূচি ‘বিস্ময়কর’ ভূমিকা পালন করছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের বড় এনজিও হিসেবে ব্র্যাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে ক্ষুদ্রঋণের বাইরে ব্র্যাকের সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগগুলোকে আরও ফলপ্রসূ করতে উৎপাদনকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান আমূলের উদাহরণ তুলে ধরেন। ব্র্যাকের ৮০ লাখ গ্রাহককে একটি বড় শক্তি মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

রেহমান সোবহান বলেন, এনজিওগুলোতে বিদেশি অর্থায়ন কমে আসছে। কাজেই এনজিওগুলো এখন স্বনির্ভর হওয়ার কথা ভাবতে পারে। তবে শিক্ষাসহ নানা সেবার ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের কথা ভাবতে হবে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যেন আর দশটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না হয়। দরিদ্র ছেলেমেয়েরা যেন সেখানে লেখাপড়ার সুযোগ পায়।

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এনজিওগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক অস্বস্তিকর সহাবস্থানের মতো। আমি মনে করি, এটাকে “স্বস্তিকর সহাবস্থানে” নিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, শুধু দারিদ্র্য বিমোচনে নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ, মেয়েদের ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনজিওগুলো বড় ভূমিকা পালন করছে। যে দেশে এনজিওগুলো নানা ক্ষেত্রে এত অগ্রগতি অর্জন করেছে, সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধেও এনজিওগুলো কাজ করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার এনজিওগুলোর সঙ্গে কাজ করতে চায়। এসডিজি অর্জনে এনজিওগুলো চাইলে তাদের পরামর্শ সরকারকে দিতে পারে।

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ঋণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল বায়েস বলেন, সরকার ও দাতা সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ব্র্যাকের মাধ্যমে যাঁরা অতিদারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাঁদের ৯০ শতাংশেরই স্থায়ী উন্নয়ন ঘটেছে। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ব্র্যাক দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখছে, পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক উন্নয়নেও সহায়তা করে যাচ্ছে। সংস্থাটি এ পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৩০ লাখ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করেছে। দেশব্যাপী ৫ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং তিন কোটি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা সরবরাহ করেছে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ মুসা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। যুক্তরাজ্যের আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস আর ওসমানী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।


 

Published in সমকাল on Monday, 20 March 2017

ব্র্যাকের আলোচনা সভায় বক্তারা

জঙ্গিবাদ রোধে এনজিওগুলোকে যুক্ত করতে পারে সরকার

সমকাল প্রতিবেদক

উন্নয়নে এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন উপায়ে ভূমিকা রাখছে। সময়ে সময়ে তাদের কার্যক্রমের পটপরিবর্তন হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে উঠেছে। সমাজ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে তারা। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকার এনজিওগুলোকে যুক্ত করতে পারে।

গতকাল রোববার ‘এনজিও এবং উন্নয়ন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সংস্থাটির গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এর আয়োজন করে। আগামীকাল মঙ্গলবার ‘ব্র্যাক ডে’ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

আলোচনা সভায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকার এনজিওগুলোকে যুক্ত করতে পারে। এনজিওগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে উঠেছে। সরকার একে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগালে জঙ্গিবাদসহ নতুন নতুন সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে জিততে হলে সব পক্ষকে এক হতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এনজিওগুলো সমাজ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে। ধর্মভীরু মানুষকে সচেতন করে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করানোর মতো কাজ করেছে। ফলে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমমানের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি এগিয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে সরকারের বড় উদ্যোগ রয়েছে। এনজিওগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ‘অস্বস্তিকর সহাবস্থান’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্পর্ক হতে হবে সহযোগিতার।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, উন্নয়নে এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণসহ বিভিন্ন উপায়ে ভূমিকা রাখছে। ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য দূরীকরণে ‘ম্যাজিক বুলেট’ হিসেবে কাজ করেছে। আগামীতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে এনজিওগুলোকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, এতদিন ক্ষুদ্রঋণ হয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কিন্তু বাজারে প্রবেশাধিকারে ব্যক্তির চেয়ে গোষ্ঠীর সক্ষমতা বেশি। এ জন্য এখন গোষ্ঠীগত ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ভাবা যেতে পারে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আড়ংয়ের মতো করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর পণ্য সরবরাহকারীদের মুনাফার অংশ দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সময়ে সময়ে এনজিওগুলোর কার্যক্রমের পটপরিবর্তন হয়েছে। সত্তরের দশকে এনজিওগুলো প্রধানত ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করেছে। আশির দশকে সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে গণতান্ত্রিক সরকার আসার পর মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। একুশ শতকে এসে এনজিওগুলো পরিবেশ, সুশাসন, স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করছে। এভাবে দেশের উন্নয়নে এনজিওগুলো ভূমিকা রেখেছে। তবে সম্প্রতি এনজিওগুলো মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে ব্যবসা করছে এমন অভিযোগ উঠছে। সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। গবির মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সামাজিক সেবা দেওয়া এনজিওগুলোর কাজ নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক

আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো এনজিওর অস্বচ্ছতা রয়েছে। কিন্তু দেশের স্বার্থেই সবাইকে স্বচ্ছ হওয়া দরকার। এসডিজি বাস্তবায়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল বায়েস বলেন, অতি দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক উন্নয়নে এনজিওগুলো ভূমিকা রেখে আসছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান ওসমানি বলেন, এনজিওগুলো নিজেদের মতো করে অনেক কাজ করলেও তা সমাজকে প্রভাবিত করেছে, উন্নয়নে সহযোগিতা করেছে। এখন সরকারের উচিত এনজিওগুলোকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মাদ মুসা। অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।