প্রান্তিক মানুষের ওপর একটি বিশেষ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা দরকারঃ মোস্তাফিজুর রহমান

Published in দৈনিক ইত্তেফাক on Thursday, 30 November 2017

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়

গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য

ইত্তেফাক রিপোর্ট

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এ জনগোষ্ঠীর মানুষ পরিচয় সংকটে ভোগে। এ জন্য রাষ্ট্র ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের নীতি কার্যকর করার পদ্ধতিতে ও প্রয়োজন নীতিতে পরিবর্তন করতে হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার-ইনে ‘প্রান্তিক মানুষের জীবনের চালচিত্র’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সংস্কৃতি, দেশের প্রায় তিন কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অধিকার বঞ্চিত। গড়ে ৬০ শতাংশ প্রান্তিক মানুষ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার। স্থানীয় বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জোর-জুলুম, বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার এসব মানুষ। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসে না। অনুষ্ঠানের শুরুতে গবেষণার প্রতিবেদন তুলে ধরেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ এবং টাঙ্গাইল জেলাসহ ১৮ জেলার দুই হাজার পরিবারের মানুষের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, দেশে গড়ে ৩৪ শতাংশ প্রান্তিক মানুষ শারীরিক নির্যাতনের শিকার। যৌনকর্মীদের মধ্যে এ হার সর্বোচ্চ ৫২.২ শতাংশ আর এর পরই রয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ১১.১ শতাংশ। এ ছাড়া ৫.১৪ শতাংশ লোককে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয় ও ২৬.৪ শতাংশ প্রতিবন্ধীকে সম্পদের অধিকার দেওয়া হয় না। গবেষণায় পাওয়া গেছে, শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও ৬১.১০ শতাংশ যৌনকর্মী, ৪১.৬০ দলিত জনগোষ্ঠী, ২৭.৭০ পাহাড়ি আদিবাসী, ৩৯.৮০ সমতল আদিবাসী, ৩৩.৬৭ প্রতিবন্ধী, ২৩.৭০ জেলে ও ২১.৭০ শতাংশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আগামী বাজেটে দলিত শ্রেণির জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে আমি মন্ত্রীর কাছে জোর সুপারিশ করব।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম বলেন, আগামী বাজেটে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অর্থ বরাদ্দ ৪৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হবে ৫২ হাজার কোটি। অনুষ্ঠানের সভাপতি অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রান্তিক কারা, কেন এরা এ অবস্থায় আছেন এবং প্রান্তিকতার নিরসনে করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি।

প্রান্তিক মানুষের ওপর একটি বিশেষ তথ্যভাণ্ডার তৈরি দরকার বলে মত দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হোসেন আবেদ। এমজেএফের গবেষণার ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন এবং বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক কাজী আলী তৌফিক। আলোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা ও সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।