বিভিন্ন পরিবহন চুক্তি কাজে লাগানো গেলে সেবা খাতে রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব: মোস্তাফিজুর রহমান

Published in দৈনিক সমকাল on Friday, 10 November 2017

বৈচিত্র্য আনতে হবে রফতানি পণ্যে

সমকাল প্রতিবেদক

রফতানি বিষয়ক এক কর্মশালায় বিশিষ্টজন বলেছেন, রফতানি খাত তৈরি পোশাকনির্ভর হয়ে পড়ছে। ৮০ শতাংশেরও বেশি রফতানি আয় আসে এ একটি মাত্র খাত থেকে। একক পণ্যনির্ভরতায় ঝুঁকিতে রয়েছে রফতানি খাত। এ অবস্থার উত্তরণে রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। বরাবরের মতো বেসরকারি খাতকেই এ বৈচিত্র্যকরণের কাজটি করতে হবে। এতে সব ধরনের নীতি ও নগদ সহায়তা দিতে হবে সরকারকে। বেসরকারি উদ্যোগ এবং সরকারি নীতি সহায়তা ছাড়া রফতানিতে বৈচিত্র্য আসবে না। এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা প্রয়োজন। কারণ, রফতানি খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি ছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

‘রফতানি বহুমুখীকরণ :সমস্যা এবং অগ্রাধিকার’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব মতামত দিয়েছেন বক্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আইএফআইসি টাওয়ারে এ কর্মশালার আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই)। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিইআইর বোর্ড অব গভরনর্স চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করতে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা দেবে সরকার। বিশেষ করে রফতানিতে গতি বাড়াতে শিল্প উৎপাদনে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব অবকাঠামো নিশ্চিত করা হবে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত হারে রফতানি না বাড়ার পেছনে পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাবকেই প্রধান কারণ বলে মনে করেন তিনি। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রফতানি প্রবৃদ্ধি ছাড়া মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না। পশ্চিমা দেশগুলোতে রফতানি শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভারত ও চীনের মতো দেশে রফতানি বাড়াতে মনোযোগ বাড়াতে হবে। পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। এ পণ্যের মূল্য সংযোজনের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রফতানি আয় বাড়াতে উচ্চ মূল্যে পোশাক রফতানিতে নজর দিতে হবে। ওষুধ, চামড়াসহ অন্য সব পণ্য বহুমুখীকরণে বাণিজ্য সহায়তা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পরিবহন চুক্তির প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, এসব চুক্তিকে কাজে লাগানো গেলে সেবা খাতে আরও সাড়ে পাঁচশ’ কোটি ডলারের রফতানি আয় বাড়ানো সম্ভব।

সালমান এফ রহমান বলেন, রফতানি খাতের সব পণ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করা দরকার। শুল্ক্ক সুবিধার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, রফতানি পণ্যের জন্য শুল্ক্কমুক্ত আমদানি সুবিধা পোশাক খাতের পাশাপাশি সব খাতেই দেওয়া প্রয়োজন। জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, পোশাক খাতের মতো সব খাতে বন্ড সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ বিষয়ে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, রফতানি খাত বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত কৃষি শিল্প খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে পর্যালোচনার প্রয়োজন। শিল্পায়নে সৃজনশীল পরিকল্পনা ও কর্মী দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশে একটা গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। চট্টগ্রাম বন্দর চলে মাত্র ৪টি ক্রেন দিয়ে। বিমানবন্দরের অবস্থাও বেহাল। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলো ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলেও বাংলাদেশে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। এতে রফতানিকারক উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে দেশে শিল্পায়নের একটি বড় ভিত্তি তৈরি হয়েছে। এখন সমস্যা দক্ষতার ঘাটতি। এসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধে বিইআইর বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক প্রজেক্ট লিডার ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক রফতানি প্রবণতায় নেতিবাচক পরিস্থিতি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জরুরিভিত্তিতে বাণিজ্যনীতি মূল্যায়ন, সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে পোশাক খাতকে আরও শক্তিশালী করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেন। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সরকারের নীতিসুবিধা ও প্রণোদনা কাঠামো পর্যালোচনা, নতুন বাজার উন্নয়ন, পণ্যের মান উন্নয়ন, অবকাঠামো সমস্যা দূর করা, দক্ষতা উন্নয়ন, মুদ্রা বিনিময় হার পর্যালোচনা।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বিইআই সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী ফারুক সোবহান, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।