বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানি সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশঃ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

Published in যায় যায় দিন on Wednesday, 22 February 2017

 

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ঊর্ধ্বমুখী

বেলাল মুনতাসির

দেশে অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক হারে বাড়লেও সে হারে বাড়েনি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি। তবে সার্বিকভাবে দেশে পণ্য আমদানি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তির হার থেকে এ চিত্র পাওয়া যায়।

এ সময় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলা বেড়েছে নয় দশমিক ৩০ শতাংশ। আর নিষ্পত্তি বেড়েছে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলার হার বেড়েছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ আর নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ৬৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্পে কাঁচামালের আমদানি ঋণপত্র খোলা ১ দশমিক ৯১ শতাংশ কমলেও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ সময়ে খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেল আমদানিতেও ঋণপত্র খোলার হার বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অর্থনীতিবিদদের হিসাব মতে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধি বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষণ। আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বৃদ্ধির মানে উৎপাদন বৃদ্ধি। অর্থবছরের ছয় মাসে দেশের অবকাঠামোগত বড় প্রকল্পের কাজের জন্যই মূলত যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। যা উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহৃত হয় না।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম যায়াযায়দিনকে বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকগুলোতে শিল্পঋণে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। প্রজেক্ট লোন আকারে যাওয়া এসব ঋণের ফলে যন্ত্রপাতি আমদানিও বাড়ছে। তবে এসব যন্ত্রপাতি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকে গামেন্র্টসহ অন্যান্য খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমেছে, ফলে আমদানির আকার বাড়লেও দামের সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সূচক নেতিবাচক দেখালেও মোট আমদানির পরিমাণ কমেনি বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে দুই হাজার ৩০২ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল দুই হাজার ১০৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। অন্যদিকে এ সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ২৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল দুই হাজার ৩০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল ও গমের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৭৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। সে হিসাবে খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ। তবে খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ছয় দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ সময়ে এই পণ্যগুলোর এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারের। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬২ কোটি ৫১ লাখ ডলার।

এ সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ২৪৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। তবে এ সময়ে রেকর্ড পরিমাণ মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। যার পরিমাণ ২৭৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১৬৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে মূলধনী যন্ত্রপাতির নিষ্পত্তি বেড়েছে ৬৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময়ে পেট্রোলিয়াম তথা জ্বালানি তেল আমদানির ঋণপত্র খোলা ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১৮ কোটি ডলার। তবে এই পণ্যটির এলসি খোলা বাড়লেও নিষ্পত্তি কমেছে ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ সময়ে এই পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪৩ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শিল্পের কাঁচামালের আমদানি ঋণপত্র খোলা ১ দশমিক ৯১ শতাংশ কমলেও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ সময় শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। আর এ সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮০৪ কোটি ২৩ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া এ সময়ে অন্যান্য পণ্য আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।