রেল খাতে ভারতের বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচকঃ ড. মোয়াজ্জেম

Published in নয়া দিগন্ত on Wednesday, 4 October 2017 

ভারতের ঋণে তিনটি অর্থনৈতিক জোন

আশুগঞ্জ নৌ-ট্রানজিট বন্দরের জন্য ৩৭.৬৪ কোটি ডলার

হামিদ সরকার

ভারতের কাছ থেকে নেয়া রাষ্ট্রীয় ঋণের বাস্তবায়ন চুক্তি আজ হতে যাচ্ছে। এই ঋণের একটি অংশ দিয়ে ভারতের জন্য মংলা, বাগেরহাট ও ভেড়ামারাতে তিনটি অর্থনৈতিক জোন করা হবে। অন্য দিকে, ভারত এখন যে নৌ-ট্রানজিট ব্যবহার করছে সেই আশুগঞ্জ নৌবন্দরের উন্নয়নে দেয়া হচ্ছে দুই প্রকল্পে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ ছাড়া, সড়ক পরিবহনের চারটি, রেলের তিনটি, স্বাস্থ্য খাতের চারটি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, বেজা, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিপিং খাতে একটি করে প্রকল্পে এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে। নির্মাণকাজের ৬৫ শতাংশ এবং অন্য প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ মালামাল ও সেবা ভারত থেকে আনতে হবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।

ইআরডির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে প্রথম ধাপে এক বিলিয়ন ডলার ও দ্বিতীয় ধাপে দুই বিলিয়ন ডলারের এলওসির পর এবার আরো সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার আসছে। ফলে তিন ধাপে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার। থার্ড এলওসির শর্তও অভিন্ন। ঋণে বাস্তবায়িত প্রকল্পে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে ভারতীয় ঠিকাদারেরা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের দেয়া প্রস্তাবনার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১৭টি প্রকল্প বাছাই করেছে ইআরডি। তবে দুই দেশের অর্থমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরই চূড়ান্ত হবে প্রকল্পগুলো।

পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে ডিপিপি অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো, পরিবহন খাতের বিআরটিসির জন্য ট্রাক ক্রয়, দ্বিতলা ও এক তলা শীততাপনিয়ন্ত্রিত এবং সাধারণ বাস কেনা, আশুগঞ্জ নৌবন্দরের উন্নয়নে সড়ক চার লেন করা (৩৩.৮৭৭ কোটি ডলার), সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ কেনা, খুলনা-দর্শনার সেকশনের ডাবল লাইন প্রকল্প (৩৯.৬০ কোটি ডলার), পার্বতীপুর-কাউনিয়া সেকশনের মিটার গেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে উন্নয়ন (১৪.২৭৩ কোটি ডলার), বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪ শ’ কেভি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন (৩৬.৬৩১ কোটি ডলার), পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ বাড়াতে (৩৮.০৬২ কোটি ডলার), ১২ জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপন (২০.৫১৪ কোটি ডলার), আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নৌবন্দর স্থাপন (৩.৭৬ কোটি ডলার), চারটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং একটি জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন (২৫ কোটি ডলার)।

এ ছাড়া খসড়ায় রয়েছে-আশুগঞ্জ নৌরুট খনন, পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ডুয়ালগেজ রেলপথ ও ঈশ্বরদীতে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ, স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের আধুনিকায়ন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা) ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, ভারতের সাথে এলওসির আওতায় নেয়া বেশ কিছু প্রকল্প, বিশেষ করে রেল খাতের বিনিয়োগ আমাদের কাছে ইতিবাচক। কারণ এ খাতে আমাদের বিনিয়োগ কম। তেমন কোনো বিনিয়োগ আমরা দেখি না। সড়কের পাশাপাশি এই খাতের উন্নয়ন আমাদের জন্য বড়ই প্রয়োজন। তবে আমাদেরকে দেখতে হবে উন্নয়ন যেন কোনো কোনো অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে বিনিয়োগ হবে তা আমাদের কাজে দেবে। তবে কিছু কিছু খাতে আমরা ত্বরিত ফলাফল পাবো না।

ঋণের শর্তের ব্যাপারটি উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মোয়াজ্জেম বলেন, শর্তগুলো আমাদেরকে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। প্রথম দফায় চুক্তির সময় যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল সে সময় আমাদের শর্তগুলো নিয়ে আপত্তি ছিল। ওই সময় শর্ত ছিল ৮৫ শতাংশ প্রকিউরমেন্ট ভারত থেকে নিতে হবে। এখন হয়তো সেটা কমিয়ে আনার কথা। তিনি বলেন, নতুন নতুন উৎস থেকে, বিশেষ করে ভারত ও চীন থেকে যেসব ঋণ নেয়া হচ্ছে তাতে আন্তর্জাতিক বিডিং করার সুযোগ কম। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের একটা পরিষ্কার অবস্থান তাদেরকে জানিয়ে দেয়া দরকার। ক্রয় কাজে আন্তর্জাতিক বিডিংয়ের বিষয়টি শক্তভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন।

অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, বগি, ওয়েল ট্যাঙ্কার, বাস, ট্রাক, ইঞ্জিন, ড্রেজার কেনার প্রকল্পগুলোতে অর্থছাড় এগিয়েছে। কিন্তু সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই ছাড় সময় নিচ্ছে। এলওসি খাতে নেয়া যেসব প্রকল্পে সহজে কেনাকাটা করা যায় তাতে ছাড় বেশি থাকে। সরকারের উচিত সব খাতের প্রকল্পে অর্থ ছাড় যেন সমানতালে হয় সে জন্য জোরালো অবস্থান নেয়া।