শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনের সমন্বয় হলে আইন সংশোধন সম্ভবঃ মোস্তাফিজুর রহমান

Published in প্রথম আলো on Monday, 23 October 2017

শ্রম আইন হতে হবে শ্রমিকবান্ধব

২০০৬ সালে প্রণয়ণ করা নতুন শ্রম আইনে শ্রমিকদের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আইন শ্রমিকবান্ধব করার জন্য শ্রমিকেরা বারবার দাবি তুললেও মালিকদের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী আইনের অধিকাংশ ধারা সংশোধন করা হয়ে থাকে। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হলে শ্রম আইন শ্রমিকবান্ধব করতে হবে। তাই শ্রম আইন আবার সংশোধন অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত ‘শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় শ্রম আইন’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, নানা অজুহাতে সরকার ও মালিকপক্ষ ইপিজেড এবং স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। একইভাবে নতুন শ্রম আইনে ইউনিয়ন গঠনে নানা শর্ত বাধা হিসেবে কাজ করছে। কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই করা সম্পূর্ণভাবে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী, যা শ্রমিকের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা। শ্রমিকদের অসদাচরণের জন্য কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়ে থাকে এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয় না। এটা সম্পূর্ণ অমানবিক।

ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে কর্মস্থলে মারা গেলে মাত্র এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান সম্পূর্ণ অমানবিক। শ্রম আইন সংশোধনের চলমান উদ্যোগে শ্রমিকপক্ষের সুপারিশ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত হোক, এটাই এখন সময়ের দাবি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো (সিপিডি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান শ্রম আইন শ্রমিক স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি সংশোধন জরুরি। দিন দিন শ্রমিকদের ওপর বৈষম্য বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, সে অনুযায়ী শ্রমিকদের আয় বাড়েনি। শ্রমিকদের দাবি পূরণের জন্য শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনের সমন্বয় হলে আইনের সংশোধন সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রম আইন যতবার সংশোধন করা হয়েছে, ততবার মালিকদের সন্তুষ্ট করা হয়েছে। বর্তমান আইনে ২০ ভাগ শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে কিন্তু বড় অংশই এটি থেকে কোনো সুবিধা পাবে না।

শ্রমিকনেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, দেশে দুই লাখ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন আছে মাত্র ৭ হাজার ৮০০টিতে। উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু শ্রমিকদের দুর্দশা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী। সেমিনারে সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্ত, আইনজীবী এ একে এম নাসিম এবং শ্রমিকনেতা কামরুল আহসান বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।