ADP implementation loses quality due to rush expenditure at end of FY: Khondaker Golam Moazzem

Published in যায় যায় দিন on Sunday, 15 May 2016

দুই মাসে এডিপির ৪৯ শতাংশ ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ

আবু সাইম

চলতি অর্থ বছরে ১ লাখ কোটি টাকার বিশাল উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে বাকি আছে মাত্র দুই মাস। জুলাই-এপ্রিল সময়ে ১০ মাসে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ-সংস্থা এ থেকে খরচ করতে পেরেছে ৫১ শতাংশ। পুরো কাজ করতে হলে ১০ মাসের সমান বা ৪৯ শতাংশ কাজ আগামী দুই মাসে শেষ করার অসাধ্য সাধন করতে হবে। এ অবস্থায় শেষ দিকে এসে অস্বাভাবিক ব্যয়ের চাপে পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)।

এ চাপের মধ্যেই আগামী অর্থবছরের জন্য ইতোমধ্যেই সোয়া ১ লাখ কোটি টাকার এডিপি নেয়া হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে একই চিত্র দেখা দেবে আগামী বছর শেষেও, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। শেষ মুহূর্তে নিজেদের বরাদ্দ খরচের প্রতিযোগিতায় নামার কারণে উন্নয়ন কাজের মান নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তারা।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম যায়যায়দিনকে বলেন, বছরের শেষদিকে এসে কাজের গতি বাড়ানোর প্রবণতা প্রায় প্রতিবছরই দেখা যায়। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শেষ সময়ের জন্য বসে না থেকে সারা বছর ধরেই উন্নয়ন কাজ চলমান রাখতে হবে। যদিও এর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা শোনা যায়। যেমন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়, মন্ত্রীদের বরাদ্দ বাড়ানো, পরিচালকদের কাজের এলাকায় রাখা ইত্যাদি। এগুলোর পরও কেন কাজ সময়মতো শেষ হয় না তা খুঁজে বের করতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রভাব হিসেবে তিনি বলেন, শেষদিকে এসে তাড়াহুড়ো করে কাজ বাস্তবায়ন করার কারণে গুণগতমানের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে। আবার এক্ষেত্রে প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতাও দেখা যায়। ফলে, এসব প্রকল্প থেকে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক সুবিধা জনগণ পাওয়ার কথা তা পেতে বিলম্ব হয়। অনেক সময় পুরো সুবিধা পাওয়া যায় না।

এডিপির হার নির্ণয়কারী সংস্থা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টাকার অঙ্কে ১০ মাসে ৫৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। মাসে গড় খরচ ৫ হাজার কোটি টাকার নিচে। তারাই এখন আগামী দুই মাসে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা হারে খরচ করতে হবে ৪৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।

চলতি বছরের শুরুতে সরকার এডিপি নেয় ১ লাখ ৯৯৭ কোটি টাকার। তবে বছরে তৃতীয় প্রান্তিকে এসে তা থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে ৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। শতভাগ বাস্তবায়ন করতে না পারার শঙ্কা থেকেই এমনটি করা হয়েছে। তবে সংশোধিত লক্ষ্য অর্জন নিয়েও রয়েছে সংশয়।

এডিপি চিত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত দুই অর্থবছর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও শতাংশ হিসেবে চলতি বছরের চেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময় ৫৬ শতাংশ এবং তার আগের দুই অর্থবছর ছিল ৫৪ শতাংশ করে। সে হিসাবে এবারের বাস্তবায়ন ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে মূল এডিপি বিবেচনায় নিলে বাস্তবায়ন হার আরো নিচে নেমে আসবে।

শেষ সময়ে এসে এ পরিমাণ অর্থ খরচ করতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় ও কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ হয় মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সবসময়ই শেষের দিকে এসে অর্থ ব্যয়ের চাপ বাড়ে। যেনতেনভাবে এ অর্থ ব্যয় করে সরকারের বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলো। এত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগতমান ঠিক থাকে না। তাছাড়া তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার ফলে কাজে প্রচুর অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়াও অবকাঠামোর ভিত্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাতে মেয়াদের আগেই এসব কাজের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায়। একই সঙ্গে শেষদিকে অর্থ ব্যয়ের চাপ বাড়ায় এডিপির শতভাগ বাস্তবায়নও হয় না। তাতে উন্নয়ন কর্মকা-ে সঠিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এজন্য এডিপি বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা।

এ বিষয়ে আইএমইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুসারে ১০ মাসে কম পক্ষে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ৭৫-৮০ ভাগ হওয়ার কথা। কিন্তু কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে। বছরের শুরুতে সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় বাস্তবায়ন গতি কম থাকে। শেষদিকে এসে বরাদ্দ খরচের প্রতিযোগিতায় নামে মন্ত্রণায়গুলো এতে প্রকল্পের মান ও ব্যয় নিয়ে সংশয় থাকে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

তবে, কর্মকর্তারা আরো জানান, বাকি দুই মাসে এই বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা বেশ কঠিন, তবে এ সময়ে বাস্তবায়ন হার আরো বাড়বে। কেননা, ঠিকাদারের বকেয়া বিল শেষ মাসেই পরিশোধ হবে। এতে করে এডিপি বাস্তবায়ন বেড়ে যাবে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে মোট এডিপি বরাদ্দ ৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬১ হাজার ৮৪০ কোটি ও প্রকল্প সাহায্য ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এ পর্যন্ত জিওবি থেকে ৩১ হাজার ৮৭ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে ১৫ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এক হাজার ১৫৫টি প্রকল্পের বিপরীতে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে।