CPD IRBD study on ADP implementation cited

Published in The Daily Inquilab on Monday, 15 June 2015.

এডিপি বাস্তবায়নের হিড়িক

অর্থ বছরের ১১ মাসে এডিপি’র বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৭ শতাংশ। শেষ মাসে বাস্তবায়ন করতে হবে অবশিষ্ট ৩৩ শতাংশ। অতএব, প্রকল্প বাস্তবায়নের হিড়িক পড়ে গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হয় ৩২ শতাংশ, ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ, মার্চ পর্যন্ত ৪৩ শতাংশ, এপ্রিল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ এবং মে পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ। টাকার অংকে ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৫১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে বাকী এক মাসে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করতে হবে। এক মাসে এত হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা তা নিয়ে সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের আওতাধীন প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে। এই তোড়জোড়ের সবচেয়ে বড় কারণ হলো, বাস্তবায়ন সাফল্য দেখিয়ে আসছে বাজেটে বর্ধিত বরাদ্দ নিশ্চিত করা। অর্থবছরের শেষ দিকে বিশেষ করে শেষ মাসে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জাতীয় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব কিনা সে প্রশ্ন কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। উন্নয়ন প্রকল্প যদি যথাসময়ে মানসম্পন্নভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলেই কেবল তা থেকে প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যেতে পারে। সারা বছর বসে থেকে শেষ দু’য়েক মাসে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে তার বাস্তবায়নমান ঠিক থাকার কথা নয়। আর বাস্তবায়নমান ঠিক না থাকলে তা থেকে কাক্সিক্ষত কল্যাণ ও সেবা পাওয়াও সম্ভব নয়। এতে জনগণের ট্যাক্সের এবং বৈদেশিক ঋণের টাকার যে অপচয় হয় তা বহন করার ক্ষমতা অর্থনীতির নেই।প্রতিবছরই আমরা একই চিত্র প্রত্যক্ষ করি। পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, বছর শেষে প্রকল্পের অর্থ খরচের হিড়িক দেখা যায়। এতে প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এ পরিস্থিতি রোধে তিনি প্রতি প্রান্তিকে বরাদ্দের ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা আরোপের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, মেগা প্রকল্পের চক্রে আটকে আছে দেশ। ব্যয় বৃদ্ধির কৌশলে কাজ ফেলে রেখে বছর শেষে তাড়াহুড়ো করে খরচে নেমে পড়ার ফলে প্রকল্পের গুণগতমান থাকছে না। প্রকল্প ফেলে রাখা, যথাসময়ে বাস্তবায়ন না করা এবং বছরের শেষদিকে এসে খরচের বন্যা বইয়ে দেয়ার পেছনে অন্য অনেক কারণের সঙ্গে প্রকল্পের টাকা লুটপাটের কারণও রয়েছে। সম্ভবত, এটাই প্রধান কারণ। শেষদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করাই একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত হয়। এ সময় নজরদারি ও জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতাও তেমন একটা থাকে না। এই সুযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতিবাজ অংশ ও ঠিকাদাররা পরস্পরের সম্মতিতে, যোগসাজশের মাধ্যমে যেনতেনভাবে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে কিংবা অসম্পূর্ণ রেখে বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়ে ভাগাভাগি করে নেয়। এভাবে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশ লুটপাট বা অপচয় হয়ে যায়। এটাও বরাবরই লক্ষ্য করা গিয়েছে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ঠিক বর্ষা মওসুমের এক আধ-মাস আগে কিংবা বর্ষার সময় শুরু করা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই বানে-বন্যায় সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। কাজ পড়ে থাকে কিংবা ‘সমাপ্ত হয়েছে’ বলে সনদ দেয়া হয়। সমাপ্তি সনদের মুদ্দতে অর্থ তুলে নিয়ে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। যাচ্ছেতাইভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থ লুটপাট বছরের পর বছর ধরে চলছে।সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে শুরু ও শেষ করতে হবে। অবশ্যই বর্ষার আগে কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এই তাকিদ ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতা আজ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নমান নিশ্চিত করে যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যে সব বাধা চিহ্নিত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে : বাস্তবায়ন ক্ষমতার অভাব, নির্ধারিত সময়ে অর্থ ছাড় না করা, বিদেশী সংস্থার প্রতিশ্রুত অর্থ যথাসময়ে না পাওয়া, জমি অধিগ্রহণে সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, দীর্ঘসূত্রী বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এই সমস্যাগুলোর সুরাহা না হলে এডিপি বাস্তবায়নের যে ‘সংস্কৃতি’ দাঁড়িয়ে গেছে, তার অবসান হবে না। তার অর্থ এই নয় যে, এ সংস্কৃতি অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্পের গুণগত বা বাস্তবায়নগত মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। প্রতি প্রান্তিকে কাজের হার নির্ধারণ করে দিয়ে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার যে ধারা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে কিংবা যাচ্ছেতাইভাবে বাস্তবায়ন করলে পরবর্তীতে তাদের প্রকল্প দেয়া বা বরাদ্দ বাড়ানো বন্ধ করতে হবে। শেষ মুহূর্তে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থ লোপাট রহিত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রকল্প বাতিল করে দিতে হবে। জনগণের অর্থ, ঋণের অর্থ এত সস্তা নয় যে, এভাবে তার অপচয় অব্যাহত রাখা যাবে।