CPD IRBD study on revenue deficit cited

Published in Kaler Kantho on Wednesday, 11 March 2015.

রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলোও

আবুল কাশেম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেসরকারি খাত থেকে কর আদায়ে যতটা কড়া, ঠিক ততটাই ঢিলেঢালা সরকারের ক্ষেত্রে। ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পভিত্তিক কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, প্রকল্পভুক্ত জনবলের বেতন-ভাতা, পরামর্শক ফির ওপর আরোপিত উৎসে কর অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। নিয়ম মেনে মন্ত্রণালয়গুলো উৎসে কর কাটছে না। আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয় কর কাটলেও কোষাগারে জমা দিচ্ছে না। এ অবস্থায় নিয়ম মেনে উৎসে কর সংগ্রহ করে সরকারের রাজস্ব কোষাগারে জমা দিতে সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি দিয়েছে এনবিআর।

আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, উৎসে কর কর্তন ও জমাদানে ব্যর্থ কর্তৃপক্ষকে খেলাপি করদাতা হিসেবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সময়মতো কর পরিশোধে ব্যর্থ কর্তৃপক্ষকে অনাদায়ী সময়ের জন্য উল্লিখিত করের ওপর প্রতি মাসে ২ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হয়। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১৬৪ ধারা মোতাবেক খেলাপি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিধান রয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর-অধিদপ্তরগুলোর উৎসে কর কর্তন না করা ও কোষাগারে জমা না দেওয়ায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলোর কাছ থেকে যাতে উৎসে কর পাওয়া যায়, সে জন্য অনুরোধ জানিয়ে সব সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদকে অনুরোধ করেছি, তিনি যাতে বিষয়টি দেখেন।’

নজিবুর রহমান বলেন, সরকারের অনেক কাজকর্ম হচ্ছে। আইনানুযায়ী সেসব কাজের বিলসহ পণ্য ও সেবা কেনাকাটা, পরামর্শক ফি, বেতন-ভাতাসহ নানা খাতে উৎসে কর কেটে কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ করছে না।

সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে কর পাওয়ার ক্ষেত্রে চার ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদৌ কর কাটা হচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে নির্দিষ্ট হারের তুলনায় কম কর কাটা হচ্ছে। আবার কর সংগ্রহ করার পরও তা কোষাগারে জমা দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া কোনো কোনো কর্তৃপক্ষ উৎসে কর পরিশোধ করলেও বিধি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা দিচ্ছে না। অথচ সঠিকভাবে কর কোষাগারে জমা না দিলে জরিমানাসহ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এসব সমস্যা দূর করতে হলে উৎসে কর কর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান।

আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী, বর্তমানে ৫৮টি খাত থেকে উৎসে কর সংগ্রহের বিধান রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে চিকিৎসকদের ফির ওপর ১০, পেশাগত ও কারিগরি সেবা ফির ওপর ১০-১৫, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্সি কমিশনের ওপর ১০, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দেওয়া ক্ষতিপূরণের ওপর ১-২, ঋণপত্রের বিপরীতে ৫, বিদেশ থেকে পাওয়া সম্মানীর ওপর ১০, বাড়িভাড়ায় ৫, জনশক্তি রপ্তানিতে ১০, বোতলজাত খাবার পানির ভিত্তি মূল্যের ওপর ৩, লিজ দলিল রেজিস্ট্রেশনে দলিল মূল্যের ওপর ৪, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬, ট্রেজারি বন্ড, ট্রেজারি বিল বা ডিবেঞ্চারের সুদের ওপর ৫, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর প্রাপ্ত কমিশন ও ইনসেনটিভ বোনাস কিংবা একই ধরনের কোনো প্রাপ্তির ওপর ৩ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করেছে সরকার।

উন্নত বিশ্বে আয়কর রাজস্বের সিংহ ভাগই আদায় হয়ে থাকে উৎসে কর থেকে। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার মাত্র ৫৪ শতাংশ। মন্ত্রণালয়গুলোর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নকালে বেতন-ভাতা, পরামর্শক ফি পরিশোধ, পণ্য ও সেবা ক্রয় ইত্যাদি বাবদ অর্থ পরিশোধের সময় উৎসে কর কাটার বিধান রয়েছে। আর যথানিয়মে কর সংগ্রহ বা জমা দিতে ব্যর্থ হলে বিভিন্ন শাস্তির বিধান রয়েছে।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি রোধে তৎপর রয়েছেন তাঁরা। বেসরকারি খাতে কর ফাঁকি বন্ধের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব আদায়ে তৎপর হয়ে উঠেছে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে সচিবদের কর পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

এনবিআরের হিসাব মতে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সাত (জুলাই-জানুয়ারি) মাসে আদায় হয়েছে ৬৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা কম। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও অর্থবছর শেষে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকতে পারে বলে মনে করছে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ। আরেক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি জানিয়েছে, অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৫ হাজার কোটি টাকা।