Dr Khondaker Golam Moazzem on commodity supply and import

Published in Kaler Kantho on Wednesday, 18 February 2015.

ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দ্বিগুণ
আমদানি বাণিজ্য টালমাটাল রাজনৈতিক অস্থিরতায়

শেখ শাফায়াত হোসেন

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পণ্য আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে শিল্প খাতে স্থবিরতা নেমে আসায় রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। তবে খাদ্যের মজুদ স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে চাল ও গম আমদানি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ডাল, পিঁয়াজ, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি মাসে পণ্য আমদানির উদ্দেশ্যে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা কমেছে ৮.৫৪ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ৫.১৮ শতাংশ। গত জানুয়ারিতে পণ্য আমদানিতে ৩১৯ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয় এবং ৩০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়। গত ডিসেম্বরে ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তির হার ছিল যথাক্রমে ৩৪৯ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এবং ৩২০ কোটি ৯২ লাখ ডলার। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার এবং ৩২৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার।

মৌসুমভেদে আমদানির চাহিদা পরিবর্তিত হয়। এ কারণে আমদানির তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণে ঠিক এক বছর আগের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে চাল আমদানিতে পাঁচ কোটি ৩১ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ ডলারের ঋণপত্র খুলেছে সরকার। নিষ্পত্তি হয়েছে ছয় কোটি ডলারের ঋণপত্র, যার মধ্যে পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের ঋণপত্র খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। গত ডিসেম্বরে চাল আমদানিতে সাত কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয় এবং নিষ্পত্তি হয় পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণপত্র। অন্যদিকে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে চাল আমদানিতে মোট ঋণপত্র খোলা হয়েছিল চার কোটি ৬৪ লাখ ডলারের এবং নিষ্পত্তি হয়েছিল দুই কোটি ৮২ লাখ ডলারের।

গম আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে গম আমদানিতে ১০ কোটি ২৭ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের ঋণপত্র খুলেছে সরকার। নিষ্পত্তি হয়েছে পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ ডলারের ঋণপত্র সরকারের।

 

আমদানি বাণিজ্য টালমাটাল রাজনৈতিক অস্থিরতায়

গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চিনি আমদানি কমেছে, বেড়েছে ডিসেম্বরের তুলনায়। গত জানুয়ারিতে চিনি আমদানিতে ৯ কোটি ১৫ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে পাঁচ কোটি ২১ লাখ ডলারের ঋণপত্র। তথ্য বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ছয় কোটি সাত লাখ ডলারের, নিষ্পত্তি হয়েছে পাঁচ কোটি দুই লাখ ডলারের। অন্যদিকে ২০১৪-এর জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে সাত কোটি ৩৭ লাখ এবং তিন কোটি ৮০ লাখ ডলার।

ডাল আমদানিতে পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, নিষ্পত্তি হয়েছে এক কোটি ৫৩ লাখ ডলারের ঋণপত্র। পিঁয়াজ আমদানিতে এক কোটি ৩৮ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, নিষ্পত্তি হয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯১ লাখ এবং দুই কোটি ২০ লাখ ডলার।

পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য আমদানি ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় গত জানুয়ারিতে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য আমদানিতে ১২ কোটি ৫১ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে এবং ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং ৪১ কোটি ২৮ লাখ ডলার।

রপ্তানিমুখী শিল্পের ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা বেড়েছে, নিষ্পত্তি কমেছে। গত জানুয়ারিতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা হয়েছে প্রায় ৬২ কোটি ডলারের। নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ৫২ কোটি ডলারের। অন্যদিকে গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮ কোটি ২৪ লাখ ডলারের ঋণপত্র। ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের কাপড় (ফেব্রিকস), সুতা ও এক্সসেরিজ থাকে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে যে এলসি খোলা হয়েছে সেগুলো আগের অর্ডারের পণ্য সরবরাহের প্রয়োজনে। এ জন্য ডিসেম্বরের তুলনায় সেটা বেড়েছে।’

এদিকে সার আমদানিও কমেছে। গত জানুয়ারিতে রাসায়নিক দ্রব্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয় ২২ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। নিষ্পত্তি হয় ২৩ কোটি ২৬ লাখ ডলারের। শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র খোলা বেড়েছে, কমেছে নিষ্পত্তি। হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হওয়ায় বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে না পারায় ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমে এসেছে। জানুয়ারিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৩১ কোটি ১০ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে জানুয়ারিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি মাত্র ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে কাঁচা তুলা আমদানি করতে ব্যবসায়ীরা ১৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন, যা ডিসেম্বরে খোলা হয়েছিল ১৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের।

আমদানির সাম্প্রতিক এই ধারাকে কিছুটা অস্বাভাবিক মন্তব্য করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়ায় যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে তার একটি প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আমদানির চিত্রে, বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে। সম্প্রতি খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার ফলে পণ্য আমদানির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ যেমনটা বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল, শিল্প-কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি সেভাবে বাড়েনি।’

গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৪৪ লাখ ডলার। ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় দেশের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১৪৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।