Dr Khondaker Golam Moazzem on foreign investment

Published in Samakal on Sunday, 15 March 2015.

বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধনে মন্দা

আবু হেনা মুহিব

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গত বছরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) মন্দা দেখা দিয়েছে। নিবন্ধন কমেছে অর্ধেকেরও বেশি হারে। আর নিবন্ধিত বিনিয়োগের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়। এ কারণে প্রকৃত বিনিয়োগের অবস্থা আরও করুণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিওআই) সর্বশেষ হিসেবে ২০১৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৩ সালের ২৬২ কোটি ১৫ লাখ ডলার নিবন্ধনের তুলনায় তা ১৬৯ কোটি ডলার কম। প্রকল্পের সংখ্যাও ২০১৩ সালের ১৮১ থেকে ১২৩টিতে নেমে এসেছে। সঙ্গত কারণে সম্ভাব্য কর্মসংস্থানের প্রাক্কলনও ৩৩ হাজার থেকে ২১ হাজারে নেমেছে।

দেশে ২০১৩ সালের মে থেকে নতুন নিয়মে বিনিয়োগ নিবন্ধনের হিসেব করা হচ্ছে। আগে সব খাতের নিবন্ধন বিওআইতে করা হতো। আর এ সময়ের পর থেকে বস্ত্র খাতের নিবন্ধন করা হচ্ছে বস্ত্র পরিদফতরে। এ কারণে বিওআইএর তথ্য অনুযায়ী বস্ত্র ছাড়া সব খাতে মন্দা বিরাজ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বস্ত্র পরিদফতরের বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মে থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বস্ত্র খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধনের মোট পরিমাণ ৭৬৭ কোটি টাকা। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী তা প্রায় ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

ব্যাপক হারে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন কমে যাওয়ার এ তথ্যকে ‘চিন্তার কারণ’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই আশঙ্কাজনক হারে নিবন্ধন কমে যাওয়ার কারণ মনে করছেন তারা।

নিবন্ধন কমে যাওয়ার বিষয়ে বিওআইর ব্যাখ্যা হচ্ছে, ২০১৩ সালের মে থেকে আলাদাভাবে বস্ত্র খাতের বিনিয়োগ নিবন্ধন হচ্ছে। এ কারণে বিওআইর তথ্যে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন সন্তোষজনক নয়। এর সঙ্গে বস্ত্র খাতের তথ্য যোগ করা হলে তা খুব বেশি আশঙ্কাজনক নয় বলে মনে করছেন সংস্থার কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক পরস্থিতির উন্নতি হলে মন্দা কাটিয়ে বিনিয়োগে সুদিন ফিরবে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা।

বিওআইর নির্বাহী সদস্য নাভাশ চন্দ্র মণ্ডল সমকালকে বলেন, আগের অভিজ্ঞতা বলছে নির্বাচনের বছর বিনিয়োগ নিবন্ধন সাধারণত কম হয়ে থাকে। বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি বুঝতে সময় নেন। এ ছাড়া গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বস্ত্র খাতের বিনিয়োগ নিবন্ধন পৃথক করা হয়েছে। ফলে আগের বছরগুলোর তুলনায় গত বছর বিওআইতে নিবন্ধিত বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে। আগামী কয়েক মাসে বিনিয়োগ নিবন্ধনও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বস্ত্র পরিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল সমকালকে বলেন, বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ কম হলেও তা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে দেশি বিনিয়োগও বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টাকার হিসেবে ২০১৪ সালে দেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ৫ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার। প্রতিদিনই দেশি উদ্যোক্তারা নিবন্ধন করতে প্রস্তাব পরিদফতরে জমা দিচ্ছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিদেশি বিনিয়োগে মন্দার বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশি বিনিয়োগ বাড়ার প্রবণতার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ কেন কমছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে গত বছরের শুরুতে নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতার কারণে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। একই সঙ্গে বছরের শুরু থেকে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি নিয়ে থাকতে পারেন। এ কারণে বিনিয়োগ কম হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তার মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ খাতের মতো অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে কিছুটা উন্নতি হলেও শিল্পের বিবেচনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে অনেক ধীর। তিনি বলেন, সাধারণত সেবা এবং জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি হয়। কিন্তু এ দু’খাতে বিনিয়োগ প্রান্তিক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। খনিজ সম্পদ খাতেও বিনিয়োগ হয়নি। এসব খাতের মূলধনি অবকাঠামোয় বিনিয়োগ না হওয়ায় আগামীতেও খুব বেশি বিনিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ পরিস্থিতিতে গত জুনে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আঙ্কটাড প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ, বিনিয়োগের সুবিধা বাড়ানো, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো ইত্যাদি।