Dr Khondaker Golam Moazzem on FTA with China

Published in Samakal on Monday, 12 January 2015.

চীনের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আবু হেনা মুহিব

চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে কি-না তা নিয়ে বিশ্লেষকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ বলেছেন, এ ধরনের চুক্তি হলে চীনা পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ঢুকে স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারও কারও মতে, এখনও ৪০ শতাংশ পণ্যে উচ্চ শুল্ক দিয়ে দেশটির বাজারে প্রবেশ করতে হয়। বড় বাজার চীনে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে রফতানি বাড়বে বর্তমানের কয়েকগুণ।

ঢাকা সফরকালে সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তার মতে, এফটিএ হলে বাণিজ্য বৈষম্য কমবে অর্থাৎ, চীনে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে। বাংলাদেশ প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, এফটিএ প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ধরনের চুক্তিতে বাংলাদেশ লাভবান হবে না ক্ষতির মুখে পড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তৈরি পোশাক উৎপাদক এবং রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, চীনের সঙ্গে এফটিএ হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গেলে অন্যতম বড় বাজার সেটি। কারণ ১৩০ কোটি জনসংখ্যার চীনে মাথা পিছু আয় বেড়ে ভোক্তাপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া প্রধান রফতানিকারক দেশ হলেও চীনের অভ্যন্তরীণ পোশাক বাজার ৩ হাজার কোটি ডলারের।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ বলেন, এ চুক্তিতে খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশ ইতিমধ্যে চীনা বাজারে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়েছে। সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা না পেলেও রফতানিযোগ্য বড় কোনো পণ্য এই সুবিধার বাইরে নেই। এ অবস্থায় এফটিএ করা হলে অর্থাৎ, বাংলাদেশ যদি আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে চীনা পণ্যে দেশের বাজার সয়লাব হবে। গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এফটিএ হলে দেশের নিজস্ব পণ্য অভ্যন্তরীণ বাজারে কতটা প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে কিংবা এখন কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার পর চীনে বাড়তি আর কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে সে বিষয়গুলো নিয়ে নিবিড় গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-চীন আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বর্তমানে ৮৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৭৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পণ্য। বিপরীতে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৫৪ কোটি ৮ লাখ ডলার। চীনে রফতানি তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি পণ্য ইত্যাদি।