Dr Khondaker Golam Moazzem on manpower export

Published in Bhorer Kagoj on Monday, 16 March 2015.

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক রপ্তানি, প্রাণ ফিরবে রেমিটেন্সে

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

সৌদি আরব ও কাতারে শ্রমিক রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় আগামী বছর থেকেই দেশে রেমিটেন্স বা বিদেশ থেকে শ্রমিকদের পাঠানো টাকা আসার পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারকে বাংলাদেশ থেকে পুনরায় শ্রমিক আমদানিতে রাজি করাতে অভাবনীয় সাফল্য প্রদর্শন করার পর এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতারও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা রেমিটেন্স প্রবাহে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল তা দূর হয়ে আগামী বছর থেকেই রেমিটেন্সে গতি ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রায় ছয় বছর পর সৌদি আরব তাদের শ্রম বাজারের দরজা বাংলাদেশের জন্য পুনরায় খুলে দেয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানিতে অনিয়ম এবং সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বে-আইনী কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব।

তা সত্ত্বেও সৌদি আরবই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানির প্রধান গন্তব্য হিসেবে রয়ে যায় এবং ওই দেশটি থেকেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পেয়ে আসছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি আরব শুধুমাত্র নারী গৃহকর্মী নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যা রেমিটেন্স প্রবাহে খুব বেশি একটা প্রভাব ফেলবে না। যদি পুরুষ শ্রমিকদের জন্যও পুনরায় সৌদি আরবের শ্রমবাজারের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং দেশটির সরকার তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে তাহলেই শুধুমাত্র সৌদি আরব থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের প্রবাহে প্রাণ ফিরে আসবে।

২০১৪ সালে বিদেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের মোট পরিমাণ ছিল ১৪,৯৪২.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৯১ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা)।

২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ১০৭১৭.৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০০৩ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৩১৭৭.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। (তথ্যসূত্র: বিএমইটি)

২০১৪ সালে বাংলাদেশ সৌদি আরব থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পায়। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সৌদি আরব থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ৩১১৮.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগের বছর, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৮২৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার চলতি বছরে বিপুল সংখ্যক (সম্ভবত আড়াই লাখ) শ্রমিক সৌদি আরবে পাঠাতে পারবে। আর চাহিদা বাড়ার প্রেক্ষিতে সামনের বছরগুলোতে আরো বেশি শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের সঙ্গে ১২টি ক্যাটাগরিতে শ্রমিক পাঠানোর একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোই শ্রমিকদের বিদেশ গমণের সকল খরচ বহন করবে বলে বন্দোবস্ত করা হয়।

এরপর ২ মার্চ কাতার সফর শেষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বলেন, অভিবাসন ফি ছাড়াই কাতার বাংলাদেশ থেকে এ বছর দেড় লাখ শ্রমিক নেবে।

সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সৌদি আরবেও অল্প খরচে বেশি শ্রমিক রপ্তানি করা গেলে তা আমাদের রেমিটেন্সের জন্য বিশাল সুফল বয়ে আনবে।

বিএমইটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ৯১ লাখ ৭১ হাজার ১৩৯ জন শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যায়। এর মধ্যে শুধু ২০১৩ সালেই যায় ৪ লাখ ৯ হাজার ২৫৩ জন, ২০১২ সালে যায় ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৯৬ জন আর ২০১১ সালে যায় ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ জন।

উদ্বাস্তু ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা ইউনিট (আরএমএমআরইউ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তাসনিম সিদ্দিকি বলেন, সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানোর দরজা পুনরায় খুলে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। কারণ সৌদি আরব শুধুমাত্র নারী গৃহশ্রমিক নেয়ার কথা বলেছে। পুরুষ শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরবের শ্রমবাজারের দরজা পুনরায় উম্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিদেশ থেকে আসা বাংলাদেশের রেমিটেন্সের প্রবাহে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক রপ্তানি হয়েছে। এর পরিমাণ ২৬ লাখ ৪০ হাজার ৫৩৮ জন। মধ্যপ্রাচ্যের অপর দুটি বড় শ্রম বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৫ জন এবং ওমানে গেছে ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৫ জন।