Professor Mustafizur Rahman on export earnings from India

Published in Samakal on Thursday, 9 April 2015.

ভারতে রফতানি আয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ

আবু হেনা মুহিব

cpd-mustafizur-rahman-export-earnings-india-apr-2015

ভারতে পণ্য রফতানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়কালে রফতানি বেড়েছে আগের একই সময়ের তুলনায় ১১ কোটি ডলারেরও বেশি। শতকরা হিসেবে যা প্রায় ৪০ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে গত নয় মাসে রফতানি পরিস্থিতিতে বেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কেননা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি কমেছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশ।

গত নয় মাসে রফতানি বৃদ্ধির এ হারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং রফতানিকারকরা। তবে প্রতিবেশী দেশটিতে পণ্য রফতানির এ হার মোটেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, শুল্কমুক্ত সুবিধা ও বড় বাজার হলেও প্রতিবেশী দেশটিতে রফতানির পরিমাণ খুবই কম।

এ জন্য অশুল্ক ও আধা শুল্ক বাধা, আস্থার সংকট এবং অবকাঠামো দুর্বলতা বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রধান বাধা বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, এসব কারণে বাংলাদেশের সামর্থ্য অনুযায়ী, ভারতে রফতানি বর্তমানের কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে দেশটিতে রফতানি হয়েছে ৩৯ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল প্রায় ২৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে বৃদ্ধির পরিমাণ ১১ কোটি ১৯ লাখ ডলার বা প্রায় ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৪৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি কমেছিল প্রায় ৩৬ শতাংশ।

এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১ সালে ভারতে এদেশের পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পরের বছরে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ কমে যায়। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এসে আবার বৃদ্ধি পায়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পোশাক খাতের ৪১ পণ্য এবং ওই বছরের নভেম্বর থেকে আরও ১৫ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে ভারত।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে পোশাক খাতের ওভেন রফতানি আগের বছরের একই সময়ের ৫ কোটি ৯৭ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। নিট পণ্য রফতানি ১ কোটি ২১ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে প্রতিবেশী দেশটিতে প্লাস্টিক, গরুর হাড়, শুকনা খাবার, গুড় ইত্যাদিও বড় অঙ্কে রফতানি হয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ভারতে রফতানি বাড়ার প্রবণতা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় সুখবর। প্রতিবেশী দেশটি আমাদের জন্য সম্ভাবনাময় বড় বাজার। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির অর্থনীতিতে নতুন গতি এসেছে। ভারত বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিশাল এ বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকায় বাংলাদেশের সেখানে বড় জায়গা করে নেওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রফতানিকারকদের সক্ষমতা রয়েছে আরও পণ্য পাঠানোর। এ সক্ষমতা কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেওয়া উচিত। কাঙ্ক্ষিত হারে রফতানি বাড়াতে তিনি অশুল্ক বাধা দূর করার পাশাপাশি ল্যাব টেস্ট ও মান সনদের স্বীকৃতির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে উদ্যোগ নিতে সরকারকে পরামর্শ দেন। তিনি অবকাঠামো খাতের উন্নয়নেও বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেন।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সমালকে বলেন, ভারতে অনেক বিদেশি ব্র্যান্ড শোরুম খুলছে। এতে করে সেখানে পোশাকের চাহিদা আরও বাড়বে। একই সঙ্গে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজার বাড়াতে হবে। সেদিক থেকে ভারতীয় বাজার হবে অনেক বড় সুযোগ। প্রতিবেশী দেশটিতে রফতানি অন্যান্য দেশের চেয়ে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী জানিয়ে তিনি বলেন, মাত্র ছয় দিনে ভারতে পণ্য পেঁৗছানো যায়। ১০ দিনের মধ্যে শোরুম থেকে বিক্রি শুরু করা হয়। যেখানে ইউরোপে লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিন এবং যুক্তরাষ্ট্রে লাগে ৪০ থেকে ৪৫ দিন।

কাঙ্ক্ষিত হারে রফতানি বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ভারতের লিলিপুট কোম্পানি এ দেশের কিছু কারখানা থেকে পোশাক নেওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে পাওনা পরিশোধে টালবাহানা করছে। দুু’দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনেক দেনদরবারের পরেও অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। এটি আস্থার সংকট তৈরি করেছে রফতানিকারকদের মধ্যে। তবে আস্তে আস্তে ভারত বড় বাজার হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।