Professor Mustafizur Rahman on GSP

Published in Shokaler Khobor on Monday, 31 August 2015.

পোশাক খাতে জিএসপি ও টিপিপির প্রভাব

আবদুল হাই রঞ্জু

এ ক সময় রফতানি আয়ের প্রধান খাত ছিল পাট। সময়ের বিবর্তনে পাটশিল্প ধ্বংস হওয়ায় এখন দেশের রফতানির আয়ের বড় উত্স হচ্ছে পোশাক খাত। বর্তমানে পোশাক খাতের বদৌলতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন, রেকর্ড পরিমাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভসহ মধ্যম আয়ের দেশ বিনির্মাণের পথে আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। সস্তা শ্রমের ওপর ভর করে আশির দশকে এ দেশে পোশাক শিল্পের উত্থান ঘটে। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নিয়োজিত কর্মীদের নৈপুণ্যতা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সুবাদে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এ শিল্পের অভাবনীয় সফলতা আসে। ফলে এই শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের। যার মধ্যে ৭০ ভাগই নারী। যারা জীবন-জীবিকার তাগিদে স্বল্প মজুরিতে বাসাবাড়িসহ নানা পেশায় জড়িত ছিল। একমাত্র পোশাক শিল্পের উত্থানের ফলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে দেশে কোটি কোটি মানুষের রুটি-রুজির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এক সময় গ্রামগঞ্জে পেটে-ভাতে এ দেশের নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের কাজ করতে হতো। সেখানে ছিল না কোনো কর্মঘণ্টা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে কাজ করতে হতো। আজ আর সেই প্রেক্ষাপট নেই। এখন সস্তা শ্রমের মজুর গ্রামাঞ্চলেও পাওয়া দুষ্কর। সবাই এখন শহরমুখী। যেখানে খুব সহজেই মেলে কাজের সুযোগ, আবার খাটতে হয় শ্রম আইন অনুযায়ী। কেউ বেশি শ্রম দিলে ভাগ্যে জোটে ওভারটাইমের শ্রমমূল্য। এ সবই সম্ভব হয়েছে পোশাক শিল্পের বদৌলতে। সেই পোশাক শিল্পকে আজ নানা কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

বিপর্যয়ের সূত্রপাত ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে। নিচিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ শ্রমিককে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। এ ঘটনার দেড় মাস পর ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে স্মার্ট এক্সপোর্ট লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে সাত নারী শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ওই সময় মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে থাকায় তারা স্বচক্ষে এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। মর্মান্তিক এ ঘটনার ক’মাস পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারে স্মরণকালের ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আমেরিকান ফেডারেল অব লেবার কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএলসিআইও) বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ বা ইউএসটিআর কার্যালয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সাভারের মর্মান্তিক ভবন ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায় দুই মাস পর ৯ ডেমোক্রেট সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত রেখে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় কর্মনিরাপত্তা বিধান করাসহ শ্রম আইন সংশোধনের রোডম্যাপ তৈরি করে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে ওবামা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৭ জুন ওবামা প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে।

বিশ্বজুড়ে ১২৭টি সুবিধাভোগী দেশ থেকে আমদানি করা প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধাই হচ্ছে জিএসপি। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমদানি করা পণ্যে মার্কিন সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করে মার্কিন নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। জিএসপির অধীনে শুল্কমুক্ত বাংলাদেশের যেসব পণ্য সুবিধা পায় তার মধ্যে রয়েছে—বহু রকমের রাসায়নিক দ্রব্য, খনিজ দ্রব্য, বিল্ডিং স্টোন, জুয়েলারি, নানা ধরনের কার্পেট, কিছু কৃষি ও মত্স্যজাত পণ্য। পক্ষান্তরে যেসব পণ্য জিএসপি সুবিধা পায় না তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেশিরভাগ বস্ত্র ও পোশাকসামগ্রী, বেশিরভাগ জুতা ও হাতব্যাগ। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের পোশাকসামগ্রী মার্কিন বাজারে কোনো প্রকার শুল্কমুক্ত বা জিএসপি সুবিধা পায় না। বরং যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে গড়ে ১৫.৩ শতাংশ এবং কোনো কোনো পণ্যে এর চেয়েও বেশি শুল্ক গুনতে হয়। যে শিল্পে যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রকার শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয় না, সেই শিল্পে দুর্ঘটনার কথা বলে অন্যান্য পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা স্থগিত করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয় বলে এ দেশের মানুষ মনে করে। উল্টো এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশি পণ্য মার্কিন বাজারে রফতানি করে যে পরিমাণ শুল্ক প্রদান করতে হয় তা বাংলাদেশকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ বা অনুদানের ছয় গুণেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রফতানির মাত্র দশমিক পাঁচ শতাংশ পণ্য জিএসপি সুবিধা ভোগ করত।

অথচ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে মোট উত্পাদনের ৬০ ভাগ বিক্রি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয়। যে দেশগুলোয় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিক্রিতে কোনো প্রকার শুল্কও দিতে হয় না। যারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নানা সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের মাত্র ২৫ ভাগ বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখলেও নানা অজুহাতে তা প্রত্যাহার করছে না। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে, এরপরও বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধার আওতায় না আনায় সংশ্লিষ্ট সবাই অবাক হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সব শর্ত পূরণ করার পরও শুধু রাজনৈতিক কারণে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ শর্তের চেয়েও যদি আমরা বেশি কিছু করি তারপরও তারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে না। তিনি আশা করেন, যেহেতু আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টিকফা চুক্তি আছে, সেহেতু এর আওতায় তারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে পারে।

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার দোহা এজেন্ডা অনুযায়ী অনুন্নত রাষ্ট্র হিসেবে উন্নত দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত বা জিএসপি সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। উল্টো বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার উন্নত দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হয়েছে, যার সুবাদে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদারনৈতিক বাজারের সুযোগে উন্নত দেশগুলোর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাজার দখল করে নিচ্ছে। এভাবেই জিএসপি সুবিধার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের রফতানি পণ্যে চড়া শুল্ক আদায় করছে। সূত্র মতে, কংগ্রেসে অনুমোদনের পর গত ২৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জিএসপি স্কিম নবায়নের বিলে স্বাক্ষর করেন, যা গত ২৯ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।

এর ফলে বিশ্বের ১২২টি দেশ ও অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫ হাজার রকমের পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি করতে পারলেও বাংলাদেশকে এ সুবিধার বাইরে রাখা হয়েছে। অথচ সম্প্রতি ভিয়েতনামের সঙ্গে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিনাশুল্কে তৈরি পোশাক রফতানির সুযোগ পাবে ভিয়েতনাম। পক্ষান্তরে বাংলাদেশকে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি করতে হবে। ফলে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাতকে এক অসম প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় অবস্থানের জায়গাটি ভিয়েতনাম দখলে নিয়েছে। এর ওপর আবার যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সহিত টিপিপি চুক্তি করায় বাংলাদেশের পোশাক খাত চরম সঙ্কটের মুখে পড়বে। এমনিতেই জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ায় গত দুই অর্থবছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের রফতানি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশের কাছাকাছি।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা না পাওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদি একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মপরিকল্পনা ইতোমধ্যেই পূরণ হতে চলছে, হয়ত জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া কঠিন হবে না। তিনি এও পরামর্শ দেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য বিক্রির জন্য অপেক্ষা না করে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মনোনিবেশ করতে হবে। যেন নতুন বাজারে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিক্রি করতে দীর্ঘমেয়াদি অসুবিধায় পড়তে না হয়। লক্ষণীয় বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সার্কভুক্ত দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও আফগানিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বাংলাদেশকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সঙ্গতকারণেই বাণিজ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়নি। যেখানে আফগানিস্তানের মতো জঙ্গি রাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে জঙ্গি তত্পরতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করার পরও জিএসপি সুবিধা না পাওয়ায় রাজনৈতিক কারণ হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রীর মন্তব্য অযৌক্তিক নয়। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে টিকফা চুক্তির বিষয়ে আগ্রহী থাকলেও বাংলাদেশ সরকার টিকফা চুক্তি থেকে বিরত ছিল। সম্ভবত জিএসপি সুবিধা ধরে রাখার স্বার্থেই মহাজোট সরকার ২০১৩ সালের যে মাসে তড়িঘড়ি করে টিকফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেও শেষ পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা বহাল রাখতে পারেনি।

অথচ টিকফা চুক্তি সম্পাদিত হওয়ায় বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, কম্পিউটার সফটওয়্যারসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাত মার্কিন কোম্পানিগুলোর দখলে চলে যাবে। বিশেষ করে মেধাস্বত্ব আইন কার্যকর হলে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধ দেশে তৈরি করতে পারবে না, ভোক্তাদের বেশি দামে প্যাটেন্ট ওষুধ কিনে খেতে হবে। আবার টিকফার প্রভাবে কৃষিতে প্যাটেন্ট বাস্তবায়ন হলে বহুজাতিক কোম্পানির প্যাটেন্টের কারণে কৃষকদের শস্যবীজ উত্পাদন, সংরক্ষণ, পুনরুত্পাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারও সঙ্কুচিত হবে। মেধাস্বত্ব আইন অনুযায়ী রয়্যালিটি পাবে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। অর্থাত্ টিকফা চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের বদলে ক্ষতিই করবে বেশি। এমতাবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকফা চুক্তি বাতিল করা যৌক্তিক।

আশার বিষয় হচ্ছে, জাপানের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। যদিও পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ বাংলাদেশে পোশাক খাতে জাপানি বিনিয়োগের ঘোর বিরোধী। তবে মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের নিটওয়্যার রফতানির ক্ষেত্রে জিএসপি রুলস অব অরিজিনের শর্ত শিথিলের ঘোষণা দেয় জাপান সরকার। বিকিএমইএ’র মতে, নিটওয়্যার রফতানি করে জাপানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে তুলা, সুতা অথবা নিটপণ্যের যেকোনো দুটি কাজ বাংলাদেশে হওয়ার শর্ত ছিল। এখন শর্ত শিথিল করে তিনটির মধ্যে যেকোনো একটি পর্যায়ের কাজ বাংলাদেশে হলেই জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যেই জাপানি বিনিয়োগ বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ২০১২ সালে জাপানি বিনিয়োগ ছিল তিন কোটি ডলার, ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৯ কোটি ডলার, ২০১৪ সালের প্রথম ৯ মাসে তা দাঁড়ায় ৮ কোটি ১২ লাখ ডলারে। আমরা আশাবাদী, জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ দিলে জাপানে জিএসপি সুবিধাও মিলবে। শুধু জাপান নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধার আশায় না থেকে বরং পৃথিবীর নানা দেশে কূটনৈতিক তত্পরতা বৃদ্ধি করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রফতানির সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাই হবে যৌক্তিক ও সময়োচিত।