Professor Mustafizur Rahman on GSP

Published in Amader Shomoy on Thursday, 27 August 2015.

অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে জিএসপি চায় বাংলাদেশ

রুমানা রাখি

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ প্রায় শেষ। তাই অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে জিএসপি সুবিধা চায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) আগামী বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরে ওই বৈঠকেই জিএসপি সুবিধা পুনবর্হালের প্রতিশ্রুতি পেতে চায় বাংলাদেশ। তার আগে আগামী মাসে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে। ওই সফরের সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রম মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ ও বেপজা। এছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন সরেজমিন যাচাই করতে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন পোশাকখাতের মালিকদের সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনার সবকিছু তুলে ধরা হবে তাদের কাছে। সর্বশেষ কাজ নিয়ে অ্যাকশন প্লান-২০১৩ বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ইউএসটিআর, অ্যালায়েন্স বা সামনে টিকফার বৈঠকে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব চিত্র তুলে ধরা হবে বলে জানান তারা।

অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর প্রসঙ্গে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের পরিদর্শন জোট অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন আমাদের সময়কে বলেন, গত দুই বছরের অ্যালায়েন্সের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে বৈঠকে। তাছাড়া তারা আমাদের দেশের কারখানাগুলোর বর্তমান অবস্থা যাচাই-বাছাই করবে।

ইউএসটিআরের তথ্য মতে, ১৯৭৪ সালের এক আইনের ভিত্তিতে ১৯৭৬ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য জিএসপি সুবিধা চালু করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর ওই বছরের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র, যা ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়। অন্যদিকে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই ওই জিএসপি স্কিমের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কংগ্রেসে অনুমোদনের পর গত ২৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জিএসপি স্কিম নবায়নের বিলে স্বাক্ষর করেন, যা গত ২৯ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের ১২২টি দেশ ও অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫ হাজার রকমের পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারবে। যেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। জিএসপি স্কিম জুলাই থেকে কার্যকর হয়ে বহাল থাকবে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

কর্মপরিকল্পনা দেওয়ার পর গত বছর জিএসপি ফিরে পেতে ইউএসটিআরে অনুষ্ঠিত এক দফা শুনানিতে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্ত পূরণের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট না হয়ে এ ব্যাপারে আরও অগ্রগতি অর্জনের পরামর্শ দেয়।

এদিকে গত ১৮ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েক রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। এ সময় বার্নিকাট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশের কারখানাগুলোয় কর্মপরিবেশের আরও অগ্রগতি অর্জন করতে হবে। গাজীপুরে ১২ আগস্ট কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন শেষেও একই মন্তব্য করেছিলেন বার্নিকাট।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন এ ব্যাপারে আমাদের সময়কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করেছে, সেটাই ঠিক হয়নি। আর এখন যে আটকে রাখছে, তাও ন্যায্য হচ্ছে না। কারণ জিএসপির সঙ্গে শ্রমমানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কাজ করেছি। তারা তা ভালোভাবে দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারত।

এছাড়া আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফার আওতায় বৈঠক হবে বাংলাদেশের। ইউএসটিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দুই দফা বৈঠকে জিএসপির সুরাহা না হলে বিষয়টি পরে টিকফার বৈঠকেও তোলা হবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।

১৬টি শর্তের প্রথম শর্ত অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শনের জন্য ২২৫ পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অগ্নি নির্বাপক ও সিভিল ডিফেন্সে ২১৮ জন ও রাজউকের ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯১ জন। কারখানার বিভিন্ন দিক পরিদর্শন করে ৩৪টি কারখানা সাময়িকভাবে ও ৩৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও সরকারি উদ্যোগে সর্বমোট ৩ হাজার ৬৮৫টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৩ হাজার ৩৭৫টি পরিদর্শন ও মান উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। পোশাক খাতের ডেটাবেইজ তৈরির কাজ সরকারিভাবে করা হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রম আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সংসদে পাঠানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, কর্মপরিকল্পনার ১৬টি শর্তের প্রায় সবই পূরণ হয়েছে। শ্রম বিধিমালা জিএসপির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র এতে জোর দিচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটিও হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে শ্রম আইন বাস্তবায়নে শ্রমবিধি প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এক অনুষ্ঠানে জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) শেষে আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই এর গেজেট হবে।

পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকা- ও রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারপরও আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সব কর্মপরিকল্পনা এরই মধ্যে শেষ করেছি। ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছিল, প্রায় ৩৩০টি ট্রেড ইউনিয়ন আছে আমাদের বিভিন্ন কারখানায়। তাই আমরা কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই জিএসপি চাইছি।

এ বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্কিম না পাওয়ার পরও হয়তো সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে দীর্ঘমেয়াদি একটা প্রভাব পড়বে। তাছাড়া জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে যে কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে তাও বাস্তবায়নের পথে। তাই জিএসপি পাওয়াটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  আমাদের কাজের স্বীকৃতি তাদের কাছে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলেই জিএসপি ফিরে পাওয়া সম্ভব ।