Professor Mustafizur Rahman on insurance policy

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের বীমা পলিসি দারিদ্র্যবান্ধব নয়। দরিদ্র পরিবারের লোকদের টাকা সঞ্চয়ের মতো আর্থিক অবস্থা থাকে না। ধনীদের হাতে টাকা থাকলেও তারা আস্থা সঙ্কটের কারণে বীমার দিকে ঝুঁকছেন না। তাছাড়া গ্রামীণ পর্যায়ে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ না করায় এ সেবার আওতা বাড়ছে না। বীমার দাবি নিষ্পত্তি ও আস্থার সঙ্কটের কারণে মানুষ এ সেবায় সম্পৃক্ত হচ্ছে না বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এম বাকী খলীলি। তিনি বলেন, দেশে ৭৭টি বীমা কোম্পানি থাকলেও তাদের সেবার বিষয়ে মানুষের আস্থা তৈরি হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পলিসি খোলার পর দাবি নিষ্পত্তি হয় না। ৫-২৫ বছর মেয়াদী পলিসি খোলার পর বিভিন্ন কারণে তামাদি হয়ে পড়েন ৫০-৭০ শতাংশ। এতে একবার এ সেবায় এসে ফিরে গিয়ে আবার নতুন করে খুব কমসংখ্যক পরিবার যুক্ত হয়। এছাড়া সব বীমা কোম্পানির পর্যাপ্ত এজেন্ট না থাকায় গ্রামীণ পর্যায়ে এ সেবার আওতা বাড়ছে না।

Published in Janakantha on Sunday, 6 September 2015.

আর্থিক সেবায় সবচেয়ে পিছিয়ে বীমা খাত
মাত্র ১২ শতাংশ পরিবার এ সেবার আওতায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

জনগণের কাছ আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বীমা খাত। সারাদেশে ৮৮ শতাংশ পরিবার আর্থিক সেবার আওতায় এলেও বীমা সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা মাত্র ১২ শতাংশ পরিবার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বীমা দাবি নিষ্পত্তি, আস্থার সঙ্কট, এজেন্টদের জালিয়াতি, সরকারী পর্যায়ে বাধ্যবাধকতা না থাকা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় এ খাতে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে না।

বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের (আইএনএম) গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও শহরের পরিবারগুলো এ সেবায় কিছুটা সম্পৃক্ত হলেও গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ হার একেবারেই কম। ৫০ শতাংশের বেশি পরিবার বীমা বিষয়ে সচেতন হলেও তামাদি হয়ে যাওয়া ও প্রতারণার কারণে এগিয়ে আসছেন না তারা।

সরকারী জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কোম্পানির পাশাপাশি বিগত কয়েক দশকে ৭৫টি বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যক্তি, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় চালু হচ্ছে নতুন নতুন বীমা পলিসি। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে আছে এসব কোম্পানির এজেন্ট। ৫-২৫ বছর মেয়াদী বিভিন্ন পলিসিতে স্বল্প বিনিয়োগের ব্যবস্থা থাকলেও কাক্সিক্ষত পরিমাণে বাড়ছে না মানুষের বীমা সেবা গ্রহণের হার। সম্প্রতি সারাদেশে ৬৪ জেলার ৯০০ পরিবারের মধ্যে জরিপ করে এমন তথ্য পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজস্ব জরিপের পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হাউসহোল্ড সার্ভারের প্রতিবেদনের সহায়তা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আইএনএমের গবেষণায় দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে বীমার বিষয়ে সচেতন রয়েছেন ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ শতাংশ পরিবার জীবন বীমা ও ২ দশমিক ৬১ শতাংশ সাধারণ বীমা গ্রহণ করছেন। আর এ সেবার বাইরে ৮৮ শতাংশ পরিবার।

গ্রামীণ পর্যায়ে বীমা বিষয়ে সচেতন ৪৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে সেবা গ্রহণ করছেন ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ। শহরে বীমা বিষয়ে সচেতন ৬৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে সেবা গ্রহণ করেছেন ১৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ধনীদের মধ্যে বীমা বিষয়ে সচেতন ৫৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, যার মধ্যে সেবা গ্রহণ করেছেন ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ মানুষ। বীমা বিষয়ে সচেতনতা ও সেবা গ্রহণের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো। তাদের মধ্যে বীমা বিষয়ে সচেতন ৪৫ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ। আর সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ১০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের বীমা পলিসি দারিদ্র্যবান্ধব নয়। দরিদ্র পরিবারের লোকদের টাকা সঞ্চয়ের মতো আর্থিক অবস্থা থাকে না। ধনীদের হাতে টাকা থাকলেও তারা আস্থা সঙ্কটের কারণে বীমার দিকে ঝুঁকছেন না। তাছাড়া গ্রামীণ পর্যায়ে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ না করায় এ সেবার আওতা বাড়ছে না। বীমার দাবি নিষ্পত্তি ও আস্থার সঙ্কটের কারণে মানুষ এ সেবায় সম্পৃক্ত হচ্ছে না বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এম বাকী খলীলি।

তিনি বলেন, দেশে ৭৭টি বীমা কোম্পানি থাকলেও তাদের সেবার বিষয়ে মানুষের আস্থা তৈরি হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পলিসি খোলার পর দাবি নিষ্পত্তি হয় না। ৫-২৫ বছর মেয়াদী পলিসি খোলার পর বিভিন্ন কারণে তামাদি হয়ে পড়েন ৫০-৭০ শতাংশ। এতে একবার এ সেবায় এসে ফিরে গিয়ে আবার নতুন করে খুব কমসংখ্যক পরিবার যুক্ত হয়। এছাড়া সব বীমা কোম্পানির পর্যাপ্ত এজেন্ট না থাকায় গ্রামীণ পর্যায়ে এ সেবার আওতা বাড়ছে না।

বীমার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ) তথ্য মতে, দেশে সরকারী জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনসহ মোট ৭৭টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ বীমা কোম্পানি ৪৫টি ও জীবন বীমা কোম্পানি ৩০টি। বিদেশী কোম্পানি একটি। এসব কোম্পানি সাধারণ বীমা, অগ্নিবীমা, নৌবীমা, দুর্ঘটনা বীমা, মোটরযান বীমা, শস্য বীমাসহ নানা ধরনের পলিসি করে থাকে। সূত্রমতে, ২০১৪ সালে সারাদেশে বীমা সেবা নিয়েছেন ১ কোটি ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯০ জন। এর মধ্যে জীবন বীমা সেবা নিয়েছেন ৯১ লাখ ৭৩ হাজার ৮১৮ জন। ২০১৩ সালে উভয় খাতে মোট পলিসিধারী ছিল ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯০ জন। ২০১৪ সালে এ পলিসি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ।

সরকারের উদ্যোগ ও মানুষের সচেতনতার অভাবে বীমা সেবা নেয়ার হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বাড়ছে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, এর পেছনে মূল কারণ সতর্কতার অভাব। অন্যদিকে আমাদের দেশে বীমা করা বাধ্যতামূলক না। একই সঙ্গে মানুষ মনে করে বীমা করলে টাকা পাওয়া যাবে মরণের পরে। তাই তারা বীমার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে না। তিনি বলেন, উন্নত দেশে সরকারের নির্দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বীমা বাধ্যতামূলক করতে হয়। আমাদের দেশে সেটি নেই। ফলে আমাদের দেশে বীমার সেবা গ্রহণের হার কম।