Professor Mustafizur Rahman on regional connectivity following Modi’s visit

Published in Samakal on Tuesday, 9 June 2015.

অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনবে ‘কানেক্টিভিটি’

সমকাল প্রতিবেদক

ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের পাশাপাশি উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বা সংযোগের বিভিন্ন চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে। দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে। এ প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে হলে অবকাঠামো খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশের প্রস্তুতি এখন সেদিকেই। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে সই হওয়া চুক্তিগুলোতে অনেক শর্ত এখনও পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের যে চুক্তি হতে যাচ্ছে, তার অনেক কিছুই এখনও জানা যায়নি। সরকারের উচিত হবে বিষয়গুলো পরিষ্কার করা এবং চুক্তি বাস্তবায়নে যথাসম্ভব দ্রুত একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। সরকারি নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে-ভারতের ক্ষেত্রে শিগগিরই শুরু হবে চুক্তি ও সমঝোতা বাস্তবায়নের পালা। তবে এ প্রক্রিয়ার জন্য উভয় দেশের মধ্যে আরও আলোচনার প্রয়োজন হবে।

এদিকে, গতকাল চারটি দেশের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আগামী ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এই চুক্তি সই হওয়ার কথা। তবে ভবিষ্যতে এই চার দেশের সম্মতিতে অন্য দেশও এতে যুক্ত হতে পারবে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, আগামী বছর থেকে এই চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচল শুরু হবে।

বাংলাদেশ-ভারত কানেক্টিভিটি :ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়াতে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_ কোস্টাল শিপিং বা উপকূলীয় সহযোগিতা, বাণিজ্য নবায়ন, নৌ প্রটোকল চুক্তি, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস ও ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা বাস সার্ভিস ইত্যাদি। এ ছাড়া রেল, সড়কসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে নতুন করে ২০০ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে। সুদৃঢ় হবে সম্পর্ক। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের।

যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সমকালকে বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়াতে উভয় দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি সই হয়েছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের এখন প্রধান কাজ হবে চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় করণীয় দিকগুলো ঠিক করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। সরকারি নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি সইয়ের পর বাস্তবায়নে কিছু প্রক্রিয়া আছে। এগুলো করতে সময় লাগবে।

অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল চুক্তি তিন বছর পরপর নবায়ন হতো, যা ১৯৭২ সাল থেকেই হয়ে আসছে। এবারের চুক্তিতে পাঁচ বছর পরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের কথা বলা হয়েছে। এই চুক্তি সই হলেও নৌপথে জাহাজ চলাচলের জন্য ফি-চার্জের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়লেও অধিক সুবিধা পাবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ। এতদিন তাদের দীর্ঘ ঘুরপথে কলকাতা বা ভারতের অন্যান্য পথে যেতে হতো। এখন তারা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সেসব জায়গায় যেতে পারবে। অন্যদিকে ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে। এতে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প লাভবান হবে। তবে এই পরিবহন ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ভাড়া ও মাশুল হিসেবে কী সুবিধা পাবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আবার কোস্টাল শিপিং বা উপকূলীয় পরিবহন দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে। কারণ, এই চুক্তি কার্যকর হলে উভয় দেশের আমদানি ও রফতানি পণ্যের পরিবহন ব্যয় কমবে। কিন্তু চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তার বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পরিমাণ মাশুল পাবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি চুক্তিতে। ভারত চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে নৌ ও সড়ক_ দুটি পরিবহনই ব্যবহার করতে চাইবে। তা ছাড়া কোস্টাল শিপিং চুক্তিতে পণ্য পরিবহনের জন্য কী পরিমাণ মাশুল বা ফি নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়াতে ভারতের সঙ্গে সই হওয়া চুক্তিগুলোয় অনেক শর্ত এখনও অস্পষ্ট। সরকারের উচিত হবে শর্তগুলো পরিষ্কার করে চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া। তিনি বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ কমে যাবে। ফলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ৯০ ভাগই হয় স্থলপথে। উপকূলীয় বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়ন হলে সমুদ্রপথে বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বলেন, ভারত কিংবা এ অঞ্চলের সঙ্গে ‘কানেক্টিভিটি’ প্রশ্নে বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের দরকার হবে। ভারত নতুন যে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা দিয়ে রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা যাবে।

চার দেশে যান চলাচলে চুক্তির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন :ইউরোপের আদলে সার্কভুক্ত চারটি দেশে বাধাহীন সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল সরকারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে এই চুক্তি চূড়ান্ত রূপ পেলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। প্রাথমিকভাবে এই চারটি দেশের পণ্যবাহী গাড়ি, পর্যটকবাহী পরিবহনসহ মোটরযান তিনটি রুটে নির্বিঘ্ন চলাচল করতে পারবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হলে সার্কভুক্ত এই চারটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন শুধু ভারতে প্রবেশ করতে পারে। পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেটকার নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে ছুটতে পারবে পর্বতঘেরা হিমালয়ের দেশ নেপালে বা দ্বীপরাষ্ট্র ভুটানে।

সার্কভুক্ত এই চার দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ থেকে তিনটি রুটে যান চলাচল করতে পারবে। ঢাকা থেকে ভুটান যেতে হলে ঢাকা-বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে ৯০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জয়গাঁ-ফুয়েসারেং হয়ে থিম্পু; ঢাকা থেকে নেপাল যেতে ঢাকা-বাংলাবান্ধা-ফুলগাড়ীর বর্ডার হয়ে ভারতের মধ্যে ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে কাকারভিটা-পানির ট্যাংক হয়ে নেপাল-কাঠমান্ডু। আর ঢাকা থেকে ভারতের রাজধানী দিলি্লতে পেঁৗছাতে হবে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কলকাতা হয়ে।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান, চার দেশের সড়ক পরিবহনমন্ত্রীরা ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চুক্তিটি স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে সার্কের কাঠমান্ডু সম্মেলনে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন না থাকায় তখন তা সম্ভব হয়নি।

চার দেশীয় সড়ক যোগাযোগের এই চুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ চুক্তির আওতায় নির্ধারিত রুট ব্যবহার করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচল করা যানবাহনকে ফি দিতে হবে। যে দেশের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে, রাস্তার দূরত্বসহ বিভিন্ন স্থাপনার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ এসব যানবাহনের ফি নির্ধারণ করবে। থিম্পুতে যোগাযোগমন্ত্রীদের স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে করা প্রটোকলে এসব বিষয়ের বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি নেপাল থেকে কোনো যানবাহন ভারতের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে আসে, তবে ভারতে ও বাংলাদেশে প্রবেশের সময় দুই পয়েন্টে ফি দিতে হবে। আমাদের দেশ থেকে কোনো যানবাহন নেপাল গেলে তাকেও একইভাবে ফি পরিশোধ করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শুধু নির্ধারিত ফি পরিশোধ করলেই যে কোনো যানবাহন এই চার দেশীয় আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করতে পারবে না। চার দেশীয় এই সড়ক ব্যবহার করতে হলে সংশ্লিষ্ট যানবাহনকে চুক্তির খসড়া অনুযায়ী রুট পারমিট নিতে হবে। এক দেশে থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মধ্যবর্তী দেশের কোথাও কোনো যাত্রী বা মালামাল যানবাহন থেকে নামানো বা তোলা যাবে না। যে দেশের ওপর দিয়ে যানবাহন যাবে, ওই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে যানবাহন থামিয়ে তার সার্চ এবং ইন্সপেকশন করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, তিন বছর পরপর এই চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে। কোনো দেশ যদি ইচ্ছা করে, তাহলে ছয় মাসের নোটিশ দিয়ে এই কানেক্টিভিটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। আবার সার্কভুক্ত অন্য কোনো দেশ এই রোড কানেক্টিভিটিতে যুক্ত হতে চাইলে চার দেশের সম্মতিতে নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে পারবে।

 

Published in Prothom Alo 

চুক্তির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
বাংলাদেশ ভুটান ভারত ও নেপালের মধ্যে যান চলবে সড়কপথে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে সড়কপথে যাত্রীবাহী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করবে। এ-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া গতকাল সোমবার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৫ জুন ভুটানে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে এই চার দেশের মধ্যে এই ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই হতে যাচ্ছে।

সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, এই চুক্তির ফলে চার দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে।

বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দৃঢ় করার জন্য নেওয়া এ উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশ এর সুযোগ নিয়ে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিরও সুযোগ পাবে।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১৪ সালে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সার্ক সম্মেলনে সার্কের পাঁচটি দেশের মধ্যে চুক্তিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি দেশ (পাকিস্তান) অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারায় তখন চুক্তিটি হয়নি। তবে এই চার দেশ সম্মত হলে পরে সার্কভুক্ত অন্য দেশও এতে যোগ দিতে পারবে। তিনি বলেন, যান চলাচলে রুট পারমিট নিতে হবে। আবার এক দেশের গাড়ি আরেক দেশের ভেতর দিয়ে গেলেও মাঝপথের দেশে যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না। ইচ্ছা করলে যে দেশ দিয়ে যানবাহন যাবে, তারা সেটি তল্লাশি করতে পারবে।

চুক্তির খসড়া অনুযায়ী যান চলাচলের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। যে দেশের ভেতর দিয়ে যানবাহন যাবে, সেই দেশ ফি ঠিক করবে। যে দেশে যে পণ্য নিষিদ্ধ, সে দেশের ভেতর দিয়ে সেই পণ্য বহন করা যাবে না। তিন বছর পরপর চুক্তি নবায়ন হবে। তবে কোনো দেশ চাইলে ছয় মাসের নোটিশ দিয়ে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে একটি যান প্রবেশ করে, তাহলে ভারত ও বাংলাদেশকে ফি দিতে হবে। চলাচলে যাত্রীদের ভিসা লাগবে। তিনি বলেন, এটি একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি।

কবে চুক্তি কার্যকর হবে—পরে এ প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির পর আরেকটি চুক্তি ও প্রটোকল হবে। সব কাজ শেষ করে এটি বাস্তবায়ন করতে সর্বোচ্চ ছয় মাস লাগতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব সীমান্ত পথে শুল্ক ও বহিরাগমন কার্যালয় (কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন) আছে, সেখান দিয়েই যান প্রবেশ করতে পারবে। তবে যাত্রীবাহী বাসকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রুট পারমিট দেওয়া হবে। অন্যান্য গাড়ির জন্য যে দেশ থেকে গাড়ি যাবে, সেই দেশের অনুমোদন নিতে হবে। যানবাহন যে দেশে যাবে, সেই দেশকে ফি দিতে হবে। এই ফি হবে ন্যূনতম।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে আলোচনা হয়। কয়েকজন মন্ত্রী এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। মন্ত্রিসভা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে। সভায় তিস্তার পানির সমস্যা নিয়েও অনির্ধারিত আলোচনা হয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সূত্র জানায়, আপাতত ভুটানের সঙ্গে দুটি পথে যান চলবে। একটি হলো বাংলাদেশের বুড়িমারী দিয়ে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে প্রবেশ করে জায়গাঁও হয়ে ভুটানের সীমান্ত এলাকা ফুন্টসোলিং দিয়ে থিম্পু যাবে। আরেকটি হলো সিলেটের তামাবিল হয়ে ভারতের শিলং-গুয়াহাটি দিয়ে ভুটানের সামদ্রুপ যাবে। নেপালে যাবে বাংলাবান্ধা দিয়ে প্রবেশ করে ভারতের বিভিন্ন সড়ক হয়ে কাঁকরভিটা দিয়ে।

নরেন্দ্র মোদি গত শনি ও রোববার বাংলাদেশ সফর করেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে নৌবাহিনী (সংশোধন) আইন, ২০১৫-এর খসড়াও নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০১৫ সভায় উত্থাপন হলেও মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনসহ অন্যান্য সড়কের ভূমি ব্যবহার নিয়ে একটি সমন্বিত নীতিমালা করা হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত নীতিমালাটি ফেরত দিয়ে নতুন করে তা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে মূল ভূমিকা রাখবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

 

Published in Samakal

মোদির ঢাকা সফর: বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
শুরু হলো নবযাত্রা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার বিশাল দ্বার খুলে গেছে। শুরু হলো নবযাত্রা। এটাই হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সমকালের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক কূটনীতিক এবং কূটনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, কতগুলো চুক্তি কিংবা সমঝোতা সই হয়েছে, এগুলো থেকে কোন দেশের কতটা লাভ হয়েছে, সেসব নিয়ে নানা বিশ্লেষণ থাকতে পারে। কিন্তু বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, দু’দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে নতুন একটি ধারণার উন্মেষ হয়েছে।

সেটি হচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে একসূত্রে গাঁথা দুটি প্রতিবেশী দেশের উন্নয়ন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। যে কারণে বৈরী মনোভাব নয়, বন্ধুত্বের বন্ধনই আগামী দিনগুলোতে দৃঢ় করতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার বক্তব্যেও সহযোগিতা, বন্ধুত্ব জোরদার করার বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে। দু’দেশের জনগণের জন্যই এটি স্বস্তির এবং সুখবর।

এ সফরে যেসব বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে_ দু’দেশের মধ্যে সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ চুক্তি। এর ফলে দু’দেশের জনগণই যেমন উপকৃত হবে, তেমনি পণ্য পরিবহন এবং দু’দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে নৌপথে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা খুলে যাবে। বিশ্লেষকরা বলেন, যোগাযোগের সুফল আরও বেশি পাওয়ার জন্য দুই দেশের এ যোগাযোগ সম্পর্ক এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের বাণিজ্যের জন্য এ যোগাযোগ সম্পর্ক আরও বেশি কার্যকর হবে। বিশ্লেষকরা বলেন, বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে।

বিশেষ করে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের সুযোগ সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি।

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় কিছুটা হতাশার কথাও জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তবে তারা বলেন, নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতা দ্বিপক্ষীয় অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে আশার সঞ্চার করেছে। তিনি যেভাবে দক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বাধা দূর করেছেন, তেমনিভাবে তার মেয়াদেই তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানেও পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করা যায়।

ওয়ালিউর রহমান: সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান সমকালকে বলেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হয়েছে। বিশেষ করে একসময় দেশের ভেতরে যে ভারত বিরোধিতার রাজনীতি দেখা যেত, তা বিলীন হয়ে গেছে। কারণ, এতদিন রাজনীতিতে যারা ভারত বিরোধিতাকে পুঁজি করতেন, তারাই এবার সুর বদলে বলে দিয়েছেন, তারা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান। তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্বটিও সফলভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

একই সঙ্গে প্রমাণ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল নয়, সব সরকারের সঙ্গেই সুসম্পর্ক তৈরি করে এবং বজায় রেখে দেশের স্বার্থ পূরণ করতে পারে। স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নই তার প্রমাণ।

ওয়ালিউর রহমান বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নকে শুধু ৪১ বছরের একটি অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখলে চলবে না। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র কীভাবে সীমান্ত ও ভূমি সমস্যার মতো জটিল বিষয়ের সমাধান করতে পারে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিমর্মভাবে নিহত না হলে চুক্তি বাস্তবায়ন এত বিলম্বিত হতো না। কারণ, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাসহ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কোনো সরকারই স্থল সীমান্ত বাস্তবায়নে নূ্যনতম কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা এবং ভারতের জন্য বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি। কারণ, ভারতের সহযোগিতায় আগামী পাঁচ বছরে আরও পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলে ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে। ফলে উন্নয়নের প্রধান শর্ত বিদ্যুৎ নিয়ে আর সংকট থাকবে না। আর অর্থনৈতিক জোন হলে সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বড় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তিনি এ সম্ভাবনা সামনে রেখে কারখানা পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরিতে এখন থেকেই উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন। টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া করবে না বলে যে প্রতিশ্রুতি মোদি দিয়েছেন, তাও বড় অর্জন বলে তিনি মত দেন।

এম হুমায়ূন কবির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির সমকালকে বলেন, নরেন্দ্র মোদির সফরের তাৎপর্য মিশ্র। বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পর বিষয়টি হচ্ছে, এবার ঢাকা সফরে আসার আগে নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন বিল পাস করে সেই বার্তা নিয়ে এসেছেন। স্বাভাবিকভাবে এ সফরে প্রত্যাশার পারদও অনেক উঁচুতে ছিল।

সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সেগুলো দু’দেশের উন্নয়ন, সহযোগিতা এবং জনগণের ভেতরে আন্তঃসম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, একদিকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন দু’দেশের সম্পর্কের ভেতরে থাকা অন্যান্য সংকট সমাধানের পথ খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে আজকের মোদিও পরিবর্তিত একজন মোদি, যিনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে তার নীতিতে প্রাধান্য দিয়েছেন। ঢাকায় মোদির বক্তৃতায়ও সে কথার প্রতিফলন হয়েছে। ফলে এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অতীতের ভালো-মন্দ, বন্ধুর পথ সব পার হয়ে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত রেখার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, এটা স্পষ্টই বলা যায়।

এম হুমায়ূন কবির বলেন, কানেক্টিভিটি নিয়ে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার ফলে ভারতের লাভ এ মুহূর্তে কিছুটা বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে সুযোগ রয়েছে, এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে বিস্তৃত করার। সেটি করতে পারলে এ চুক্তি থেকে অর্থবহ বড় অর্জন সম্ভব হবে।

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে এম হুমায়ূন কবির বলেন, তিস্তা চুক্তি না হলেও মোদিই পারেন এ চুক্তি সম্পন্ন করতে। তিনি যেভাবে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও দক্ষতা দেখিয়েছেন, এ ক্ষেত্রেও তার প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করা যায়। তিনি বলেন, শুধু তিস্তা নয়, ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ে সমঝোতার ব্যাপারেও বাংলাদেশের মনোযোগ দেওয়া উচিত।

মুহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মুহাম্মদ জমির সমকালকে বলেন, এ সফরের বড় অর্জন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন যাত্রা শুরু হওয়া। এ সফরের যৌথ ঘোষণায় বেশ কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যেগুলো আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক জোরদার করবে। একই সঙ্গে এখন থেকেই বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে এমন কিছু বাস্তবমুখী চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সহায়তা, বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, নৌ প্রটোকল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঐতিহাসিক। সে সম্পর্কের ভেতরে বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয় দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার কারণে হয়তো আস্থাহীনতার কিছু বিষয়ও জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে নরেন্দ্র মোদির দৃঢ় নেতৃত্বে তা দূর করেছে। এখান থেকেই সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের দ্বার খুলে গেছে। মোদি বাংলাদেশ সফরে এসে তার বক্তৃতায় যে প্রজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার আন্তরিক অনুভূতির যে প্রকাশ ঘটিয়েছেন, তাও দু’দেশের সম্পর্ক আরও গভীর বন্ধনে আবদ্ধ করতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ সফরে নৌ চলাচল নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তা নৌপথে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ-ভারতে বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের ৯২ শতাংশ হয় সড়কপথে। এখন নৌপথে বাণিজ্য বাড়বে, যেটা দু’দেশের অর্থনীতিতেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, যেসব চুক্তি হয়েছে, তার বাস্তবায়নই এখন জরুরি। তিনি আশা করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই এগুলো বাস্তবায়িত হবে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্যে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন সহযোগিতা এবং সমস্যার সমাধানের জন্য। এটি দু’দেশের জনগণের জন্য স্বস্তির এবং সুখবর।

অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত শুধু দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং উভয় দেশের উন্নয়নের জন্য উভয় দেশেরই সহযোগিতার মনোভাব জরুরি। এ সফরের মধ্য দিয়ে সেই সত্য প্রকাশ হয়েছে, এটা খুবই ইতিবাচক। তিনি বলেন, আন্তঃযোগাযোগ ছাড়াও উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষা, জ্ঞান, প্রজ্ঞার সম্মিলন ঘটানোর বিষয়গুলো সফরের যৌথ ঘোষণায় উঠে এসেছে। এ ঘোষণা নতুন প্রজন্মের, নতুন দিশার সন্ধান দেবে, সে সম্ভাবনার কথাই প্রতফিলতি হয়েছে মোদির শেষ বক্তব্যেও।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব সাবিহ উদ্দিন আহমেদ গতকাল সমকালকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া অত্যন্ত ইতিবাচক ঘটনা। আমরা আশা করব, এই সফরের মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে। তিস্তাসহ দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা ভারত নিশ্চিত করবে। দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত সমস্যাগুলো দূর করার ব্যাপারে মোদি যে আশ্বাস দিয়েছেন, তার বাস্তবায়ন ঘটবে বলেও আমরা আশাবাদী।

 

Published in Bhorer Kagoj

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর : পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ

কাগজ প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে ফিরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩৬ ঘণ্টার এ সফরে অনুসমর্থন ও দলিলপত্র বিনিময়ের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে ৪১ বছর আগে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি (এলবিএ)- যা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় ৬৮ বছরের দুর্দশাময় বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাবে ছিটমহলবাসীরা। মোদির ঢাকা সফরে দুদেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল সই হয়েছে। গুরুত্ব পেয়েছে আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটি ও যৌথ নিরাপত্তা। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন করে ২০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণাও দিয়েছে ভারত। মোদির সফরের শেষ দিনে ‘নতুন প্রজন্ম-নয়া দিশা’ শীর্ষক ৬৫ দফা যৌথ ঘোষণায় সহযোগিতার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প করছে না। আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পগুলোতেও বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছে প্রতিবেশী বন্ধু দেশটি। এ সফরের সময় তিস্তা চুক্তি না হলেও মোদি আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুতই তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সুরাহা হবে। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে এলবিএর বিরোধিতা করলেও মোদির কারণেই ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভার পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হয়েছে এবং ওই চুক্তি বাস্তবায়নের পথ সৃষ্টি হয়েছে। এলবিএর মতোই তিস্তা ইস্যুতে মোদির কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশাও অনেক। স্বভাবতই মোদির ঢাকা সফরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব-নিকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশাল প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তির খাতাটা খুব বেশি ভারি না হলেও মোদির সফরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্পর্কের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব পেয়েছে। আঞ্চলিক উন্নয়নে মোদির এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব যে অনেক সে কথাটা মোদি তার বিভিন্ন বক্তব্য ও আলাপ-আলোচনায় তুলে ধরেছেন। সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি দৃঢ় আস্থা জানিয়ে গেছেন মোদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জানিয়েছেন গভীর শ্রদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সার্থক রূপ পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মোদি। তিনি শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে পাশে থাকারও প্রত্যয় জানান। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুযোগ্য প্রতিবেশী হিসেবে হাতে হাত ধরে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়েছেন।

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ক্ষেত্রে পূর্বসূরির পথ বেয়ে চলছেন মোদি এমন মন্তব্য করে সাবেক ক‚টনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, নরেন্দ্র মোদির সফরে অন্যতম ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে দুদেশের সীমান্ত চুক্তিটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর ফলে ছিটমহলবাসীর পরিচয় ও ঠিকানা নিশ্চিত করতে পারাটাই বড় সাফল্য। আরেকটি ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, মোদির সফর নিয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরল ঐকমত্য ছিল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সব দলই আগ্রহ প্রকাশ করেছে, আগের মতো পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়নি। আর মোদি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। ফলে সফরটি সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। তবে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা ইস্যুতে আগের মতোই আশ্বাস ছাড়া কোনো সুরাহা বা স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১১ সালে সে সময়ের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না আসায় তিস্তা চুক্তি হয়নি। মোদির একদিন আগেই এবার মমতা এলেন, তবুও তিস্তা চুক্তি হলো না। এ বিষয়ে মমতা কিংবা মোদি, আশ্বাস ছাড়া কেউই স্পষ্ট কোনো ঘোষণাও দিলেন না।

দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো থেকে কোন দেশ কতটা লাভবান হলো- তা তুলনা করা মুশকিল এমন মন্তব্য করে সাবেক এই ক‚টনীতিক আরো বলেন, পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলানো একটি জটিল বিষয়। কারণ আপাতত ভারত লাভবান হয়েছে বলে মনে হলেও ভবিষ্যতে আমরা যে লাভবান হতে পারব না, তা কিন্তু নয়। দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে

লাভবান হতে হলে আন্তরিকতা, দরকষাকষির সক্ষমতা, সরকারের নীতির পেছনে বিপুল জনসমর্থন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বলিষ্ঠতা থাকতে হয়। এই চারটি বিষয় নিশ্চিত করা না গেলে কোনো কিছুই নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই এই সফরে সৃষ্টি হওয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন মাত্রা ও উচ্চতাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দক্ষতা ও জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে সুফল ঘরে তুলতে হবে।

অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, মোদির সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাধ্যমে বিপুল সম্ভাবনাকে স্পষ্ট করেছে। বিশেষ করে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা জট খুলে যাওয়ায় অন্যসব ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়ানো সহজ হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতাকে কাজে না লাগিয়ে বর্তমান বিশ্বে কোনো দেশের পক্ষেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তির সঙ্গে সহযোগিতার পরিধি বাড়ানো খুবই জরুরি। ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার মধ্যদিয়ে ভারতও বিপুলভাবে লাভবান হচ্ছে। তবে যে কোনো চুক্তি বা সমঝোতার শর্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। আশা করি, দুই দেশ সেভাবেই সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত করবে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময় সব বিষয়ে নিজের লাভালাভ দেখলে চলবে না। একটি খাতে এক দেশের লাভ হবে, অন্য খাতে অপর দেশের লাভ হবে। এভাবেই আসলে সার্বিক উইন উইন পরিস্থিতি তৈরি হয়। তিনি মোদির সফরে কানেকটিভিটির ওপর গুরুত্বারোপকে সময়োপযোগী বলে মনে করেন। তার মতে, দুই দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোও দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের যেমন পশ্চিম ও পূর্বাংশের মধ্যে যোগাযোগ ও পরিবহন সহজ হবে, তেমনই বাংলাদেশের জন্যও উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোসহ নেপাল, ভুটান এমনকি চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ ও পরিবহন সহজ হবে।

মোদির বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মোদির সফরের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিবদমান সমস্যার অনেক সমাধান হয়েছে। বিবদমান যেসব সমস্যা এখনো রয়েছে আস্তে আস্তে তারও সমাধান হবে। মোদি তার বক্তব্যে আমাদের এমনটাই আশ্বস্ত করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এ উপদেষ্টা বলেন, তার সফরে উভয় দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ, পানি প্রাপ্তিসহ বহু সমস্যার সমাধানের দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। যা ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে সমাধান হবে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রশ্নে বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আস্তে আস্তে তার সমাধান হবে। এটাই আমাদের জাতীয় প্রাপ্তি।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, মোদির সফরে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হওয়া ছাড়াও আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান মনে করেন, মোদির সফরে সবার প্রত্যাশা ছিল তিনি তিস্তাসহ স্পর্শকাতর ও ঝুলন্ত ইস্যুগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন এবং দ্রুত সুরাহার মাধ্যমে হয়তো চমকও দেবেন। কিন্তু সফরকালে সে রকম হয়নি। সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধের ব্যাপারেও কিছু বলেননি। আন্তর্জাতিক এই বিশ্লেষকের মতে, ২০১৬ সালের পর তিস্তা চুক্তি হবে। কারণ ২০১৬ সালের শেষদিকে ভারতের বিধানসভা নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনের কারণেই কেন্দ্রিয় সরকারের চাপ সত্ত্বেও তিস্তা নিয়ে মমতা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। আর তিনি ভোটের আগে এমন কিছু করবেন না যা তার নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মোদির সফরের মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার পথ সুগম হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক ক‚টনীতিক ওয়ালি উর রহমান বলেন, উচ্চপর্যায়ের একটি সফরেই সব কিছু আশা করা যায় না। এ ধরনের সফরে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেটিই হয়েছে। এখন দরকার এর ধারাবাহিকতা। বর্ষীয়ান এই ক‚টনীতিক মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন অতীতের অনাস্থা, অবিশ্বাস, দীর্ঘসূত্রতা দূর হবে। এবং পরস্পরের হাত ধরে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ও ভারত।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দুই দলই মনে করে, মোদির সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক, বিশেষ করে যোগাযোগসংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। নরেন্দ্র মোদির সফরের মধ্যদিয়ে দুদেশের মধ্যে বিশ্বাসের যে বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে তাতে, তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যারও সমাধান হবে বলে মনে করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য আশাবাদীও তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যারও সমাধান হবে। যেহেতু দুদেশের মধ্যে একটি বিশ্বাসের বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, আমি আশাবাদী, এই সমস্যারও সমাধান হবে। আর স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নকে অনেক বড় বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মোদির বাংলাদেশ সফরকে খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে মোদির চিন্তাধারা অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি (মোদি) সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আমরা (বাংলাদেশ ও ভারত) একসঙ্গে থাকব, একসঙ্গে দৌড়াব। আমাদের ৬০ বছর আগের অনেক সমস্যা ছিল। স্থলসীমান্ত সমস্যা ছিল সেটা সমাধান হয়ে গেছে। এখন তিস্তা চুক্তিও হবে। এ ব্যাপারে আমরা খুবই আশাবাদী।