Dr Khondaker Golam Moazzem on trade balance

Published in কালের কন্ঠ on Wednesday, 23 December 2015

চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে

শেখ শাফায়াত হোসেন

 

0122395-9-1
অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ কোটি ইউএস ডলার

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত কিছুটা বেড়েছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ কোটি ইউএস ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮১ কোটি ডলার বেশি। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল মাত্র ১৩ কোটি ডলার। তবে গত সেপ্টেম্বরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৬ কোটি ডলার। সে হিসেবে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত কমেছে ৬২ কোটি ডলার। সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এখানে উদ্বৃত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে গত অর্থবছরের এই সময়ে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি আরো বেশি ছিল। মূলত রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃৃষ্টি হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯৮ কোটি ডলার। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৮০ কোটি ডলার। আর এর আগের অর্থবছরের প্র্রথম চার মাসে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৬২ কোটি ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পুরো সময়ে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৯১ কোটি ডলার। এর আগের (২০১৩-১৪) অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৬৭৯ কোটি ডলার। ২০১২-১৩ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল যথাক্রমে ৭০১ কোটি এবং ৯৩২ কোটি ডলার। পণ্য বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে, ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে পণ্য রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে পণ্য আমদানি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এটি অবশ্য রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয়ের এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড) ভিত্তিক হিসাব। অর্থাত্ আমদানি-রপ্তানির জন্য জাহাজিকৃত পণ্যের প্রকৃত মূল্যভিত্তিক হিসাব। আর তাই রপ্তানির জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান এবং আমদানির জন্য কাস্টমসের সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) মূল্যের সঙ্গে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। আলোচ্য চার মাসে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৮৭ কোটি ডলার। আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১৮৫ কোটি ডলার।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেবা খাতের বাণিজ্যে এখন অনেক নতুন নতুন অনুষঙ্গ যোগ হচ্ছে। এগুলো আমাদের সেবা খাতের বাণিজ্যের একটি বড় উত্স হতে পারে।’ সামগ্রিকভাবে বৈদেশিক লেনদেনে আয়ের তুলনায় ব্যয় কম হওয়ায় সার্বিক ভারসাম্যে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে সার্বিক ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১২৪ কোটি ডলার।

জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়াটা আমদানি ব্যয় কমাতে সাহায্য করেছে বলে মন্তব্য করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক। তিনি বলেন, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় এর একটা সুবিধা আমদানি ব্যয়ে পড়েছে। তা ছাড়া ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা কিছুটা নমনীয় হওয়ায় রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে আরো দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৫৫ কোটি ডলার, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.৭৭ শতাংশ বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৪৭ কোটি ডলার। আলোচ্য চার মাসে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এসেছে ৫৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়েও মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এসেছিল ৫৮ কোটি ডলার। অর্থাত্ মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে।