Dr Moazzem suggests increasing investment opportunities in poultry industry

Published in The Financial Express on Friday, 29 July 2016

Increased investment, govt backing to help poultry sector realise vision 2021

FHM Humayan Kabir

poultry-industryThe country’s poultry industry needs huge investment, capacity building and government’s policy and fiscal support to achieve vision 2021 ensuring adequate protein supply, experts and businesses said Wednesday.

They said the poultry sector will require doubling its production in each of the segments like meat, eggs, day-old-chicks, feeds, medicine and other ingredients within the next five years.

It is “almost impossible” to attain triple-digit growth within the next five years as the current establishment and capacity are not enough to meet the demands, the industry-people said.

According to the industry data, the country will be required enhancing per capita egg consumption to 104 pieces annually from the current 45 pieces and the meat consumption to 7.0-kg from that of current 3.63-kg by 2021.

In addition, the country’s 20 per cent job-absorbing poultry sector needs the government’s special attention to turn it into an export-oriented industry after meeting the local demands by 2021, they said.

According to the poultry industry data, the demand for per capita egg consumption would rise to 104 pieces, the poultry meat demand to 7.0 kg, the day-old chicks (DOC) to 980 million pieces from current 475 million, the feed to 6.0 million tonnes from current 2.9 million tonnes, the medicine market to Tk 71.17 billion from Tk33.30 billion annually.

According to 2015 data of the Bangladesh Poultry Industries Coordination Committee (BPICC), the local industry could produce nearly 7.12 billion pieces of eggs, 574,629 tonnes of meat, 2.9 million tonnes of feed, and Tk 33.30 billion worth of medicine.

Md Rofiqul Haque, a local poultry industry consultant, said the industry in Bangladesh is growing rapidly.

“But it needs further growth. So it needs more investment, to build capacity and governments’ support to achieve the Vision 2021,” he told the FE.

He said, “Bangladesh is still one of the poorest countries in terms of meat and eggs consumption. The government’s support for the expansion of the industry is imperative.”

Mashiur Rahman, convener of the BPICC and owner of the leading poultry producer Paragon Group, said the present capacity of the country’s poultry industry was not enough to meet the future demand, especially in 2021 when Bangladesh aspires to become a middle-income country.

It needs more investment, policy and fiscal support of the government to double the growth in producing poultry products aimed at fulfilling the vision 2021 target, he told the FE.

The government’s 7th FY Plan said that the target for achieving the goals and objectives will be to raise production levels to meet the growing demand through policy support, institutional capacity building, regulatory streamlining, and easing access to credit, increased private participation, providing training on poultry and livestock management, introduction of insurance for livestock farmers, and direct public investments.

“Policy support will also be provided to help small commercial farms convert into profit-oriented bigger farms following cooperative system. For technology transfer, poultry farms of the Department of Livestock (DLS) would be utilised as breeding and multiplication farms/centres for smallholder training, technology testing and demonstration,” the government plan said.

The SFYP has also emphasised the quality and productivity of the Bangladesh’s poultry industry.

Additional Research Director of the Centre for Policy Dialogue (CPD) Dr Khondaker Golam Moazzem said the local industry needs more investment, especially for developing the small and medium poultry farms to make the local market competitive.

Since the people’s nutrition level, especially of the rural population, is still very low, the government needs to encourage the small farmers with policy and fiscal support to make the poultry products available in the villages, he added.

The small farmers pulled out their investments due to the massive attack of the bird flu during 2007-2008 period.

Dr Moazzem urged the government for offering tax-holiday and some other incentives for a specific period to grow the industry in a bid to achieve the vision 2021 of the government.

Bangladesh Poultry Industries Association (BPIA) General Secretary Dr Munzur Murshid Khan said the Bangladesh’s poultry industry needs more investment with modern facilities and the government’s fiscal support to ensure adequate protein supply in 2021.

He said: “Our large industries are doing well. But we have thousands of small and medium poultry farms. Those need to be modernised to meet the local protein demands in the 2021 as well as to export the products abroad.”

Mr Khan said the avian influenza is one of the key enemies of Bangladesh’s poultry industrial growth.

“We need to focus on quality production of the eggs and meats. Besides, we have to go for processed and further processed food to make the industry more viable to supply adequate protein to the people,” he added.

Director General of the DLS Ajay Kumar Roy said the current growth of poultry is about 11 per cent.

“If we can continue the current growth rate, the vision 2021 achievement is possible,” he told the FE.

Industries said the size of the country’s poultry industry is worth nearly Tk 250 billion generating roughly 20 per cent of the jobs. The contribution to the gross domestic product of the poultry is nearly 2.4 per cent.


 

Published in নয়া দিগন্ত on Thursday, 28 July 2016

বিনিয়োগের সম্ভাবনা অফুরন্ত, সুযোগ কম

পোলট্রি শিল্পের হালচাল

জিয়াউল হক মিজান

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার দক্ষিণ ধল্লা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন। তিন বছর আগে ধার-দেনা করে প্রায় আট লাখ টাকা বিনিয়োগে তিনি বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন একটি পোলট্রি খামার। বিনিয়োগের বড় অংশ খরচ গয়ে গেছে স্থাপনা তৈরিতে। ফলে একসঙ্গে প্রয়োজনীয় মুরগির বাচ্চা ওঠাতে পারেন না তিনি। বাচ্চা ওঠালেও বিক্রির উপযুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেগুলোর খাবার জোগাড় করা সম্ভব হয় না। একই কারণে বছরের সব সময় বাচ্চা ওঠাতে পারেন না তিনি। অথচ বিদ্যুৎ বিল, খামারের জায়গা ভাড়া, দুইজন শ্রমিকের বেতন তাকে পুরোপুরিই পরিশোধ করতে হচ্ছে।

নিজের সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে আবুল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখার মতো আমার কোনো জমি না থাকায় ব্যাংকঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। মুরগির রোগসহ নানা কারণে পোলট্রি ব্যবসায়ীদের ওপর মানুষের আস্থা কম হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবেও কেউ ঋণ দিতে রাজি হন না। অথচ মাত্র দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারলে আমার খামার থেকেই সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। নতুন বিনিয়োগের অভাবে পুরনো বিনিয়োগও দিনদিন কমে যাচ্ছে জানিয়ে আবুল হোসেন বলেন, ব্যবসাটা ভালো কিন্তু প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাবে আমি দিনদিন লোকসানের দিকে যাচ্ছি।

আবুল হোসেনের মতো দেশের বেশির ভাগ ুদ্র খামারিই এখন চরম পুঁজি সঙ্কটে ভুগছেন। শর্তানুযায়ী সম্পদ বন্ধক দিতে না পারায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ব্যাংকগুলো এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায় না। ইনফুয়েঞ্জা বা বার্ড-ফুসহ ঘন ঘন রোগবালাই হওয়ায় ব্যবসায়ের ঝুঁকিও অন্য যেকোনো শিল্পের চেয়ে বেশি। এর পরও যারা ঝুঁকি নিয়ে এ ব্যবসায় নামেন তাদের জন্য ইন্স্যুরেন্সেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান বা পুনর্বাসনের কোনো সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগও। ফলে নতুন করে এ ব্যবসায় নাম লেখাতে বহুবার আগপিছ ভাবছেন উদ্যোক্তারা। আবার সম্ভাবনাগুলো ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসায় বাড়তি বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছেন না বিদ্যমান উদ্যোক্তারাও। অথচ বিনিয়োগের জন্য এখনো অন্যতম আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হতে পারে সম্ভাবনাময় পোলট্রি শিল্প।

বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) আহ্বায়ক ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ফিআব) সভাপতি মসিউর রহমান এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে বর্তমানে মুরগির গোশতের উৎপাদন দৈনিক গড়ে ১৮৫১ মেট্রিক টন। প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে দুই কোটি ২০ লাখ ডিম। দেশের মানুষের চাহিদার প্রায় সবটুকু স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হলেও ১৬ কোটি মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে ডিম-মুরগির উৎপাদন বাড়াতে হবে কয়েক গুণ। সুযোগ রয়েছে এ খাতে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা বর্তমান ৬০ লাখ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার। এ জন্যে বিনিয়োগ প্রয়োজন আরো অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নানাবিধ প্রাকৃতিক সঙ্কট মোকাবেলায় ইন্স্যুরেন্সের সুযোগ না থাকা, বাজারজাতকরণে অহেতুক জটিলতা, গণহারে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগদান, অযৌক্তিক করারোপ এবং সর্বোপরি প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার অভাবে বিনিয়োগের কাক্সিত বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুবই ক্ষিণ বলে অভিমত দেন তিনি।

উদ্যোক্তাদের নেতা মশিউর রহমানের বক্তব্যের সাথে মিল পাওয়া যায় জাতিসঙ্ঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) কনসালটেন্ট ড. নীতিশ দেবনাথের অভিমতের সাথেও। নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি সমস্যা সমাধানের স্বার্থে এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের প্রাণিজ আমিশ নিশ্চিত করতে পোলট্রি খাতের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে পুষ্টি ও বিনিয়োগ দু’টিই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিনিয়োগ অন্তত দ্বিগুণ করার পাশাপাশি আগামী দিনের চাহিদা মেটাতে খামার ব্যবস্থাপনায় আরো আধুনিকায়নের প্রয়োজন হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পোলট্রি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর শিল্প। রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে একজন স্বচ্ছল খামারিও রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে পারেন। ২০০৫, ২০০৯ ও ২০১১ সালে দেশে এভিয়ান ইনফয়েঞ্জার (বার্ড-ফু) সংক্রমনে এমন অসংখ্য নজির বাংলাদেশে রয়েছে। তাই এমন একটি স্পর্শকাতর সেক্টরে ২০২১ সালের চাহিদা পূরণে যে বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তের কারণে এ শিল্পে আবারো অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। উৎপাদন খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা। আশার কথা হলো, গত প্রায় দুই বছর যাবৎ বার্ড-ফু নিয়ন্ত্রণে আছে এবং সরকার ও দেশীয় উদ্যোক্তারা মনে করছেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই সীমিত পরিসরে হলেও রফতানি শুরু করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে গরুর গোশতের ওপর থেকে সাবসিডি তুলে নেয়া হচ্ছে। মুরগির ওপর থেকেও সাবসিডি ধীরে ধীরে তুলে নেয়া হবে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু তখন আমাদের দেশে তুলনামূলক কম দামে ডিম ও মুরগি পাওয়া যাবে। এতে ওইসব দেশে বিলিয়ন ডলারের মার্কেট উন্মুক্ত হতে পারে বাংলাদেশের জন্য। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ মুসলিম দেশগুলো ‘হালাল খাদ্যের’ ব্যাপারে খুবই কঠোর অবস্থানে চলে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশে পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রির সাথে সোয়াইন ইন্ডাস্ট্রির সম্পর্ক আছে। সোয়াইন যেহেতু ইসলামে হারাম, তাই ওই সমস্ত দেশের পোলট্রি প্রোডাক্টের ব্যাপারে মুসলিম দেশগুলোতে আগ্রহ কমছে। তাছাড়া ওআইসিভুক্ত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে হালাল পোলট্রির গোশত ও ডিম রফতানি করার।

বিভিন্ন পর্যায়ের খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, পোলট্রি শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবাধে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগদানও একটি উল্লেখযোগ্য বাধা। তাদের দাবি, বিদেশীরা দুই থেকে তিন শতাংশে সুদ হারে বিনিয়োগ এনে ছোট ও মাঝারি দেশী খামারিদের গিলে খাচ্ছে। আবার সুযোগ বুঝে তারাই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, ২০২১ সাল নাগাদ এ শিল্পে বিনিয়োগ ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে হলে পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। করহার যৌক্তিক করতে হবে। পোলট্রি খামারিদের জন্য বীমার ব্যবস্থা করতে হবে। বার্ডফুর ভ্যাকসিন আমদানি সংক্রান্ত জটিলতার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করতে হবে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। নতুন বিদেশী বিনিয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পাশাপাশি ইতোমধ্যে যাদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের সাথে দেশীয় খামারি ও উদ্যোক্তারা যেন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেন সেজন্য লেবেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করে দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম নয়া দিগন্তকে বলেন, এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে নানা কারণে আমাদের দেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ কাক্সিত হারে হচ্ছে না। বিশেষ করে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে বিনিয়োগ অনেক বেশি বাড়াতে হবে। আর পোলট্রি শিল্পের বিনিয়োগ তো কেবল অর্থনীতির স্বার্থে নয়, স্বাস্থ্যগত কারণেই এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশ মূলত ুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। পোলট্রি যেহেতু প্রতিটি পরিবারে, ঘরে ঘরে করা সম্ভব সেহেতু এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ বরাবরই থাকবে। তবে বিনিয়োগের প্রধান শর্ত, লাভসহ পুঁজি ফেরৎ পাওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এটি সরকারেরই দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 



Published in বণিক বার্তা on Saturday, 30 July 2016

গ্রামীণ কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি

চাষাবাদের প্রতিযোগী এখন পোলট্রি খাত

সাইদ শাহীন

জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদের ওপরই একসময় গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন সে অবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে জমিতে চাষাবাদের অবদান কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমছে। কর্মসংস্থান ও আয়ের নানামুখী উত্স থাকলেও গ্রামীণ পরিবারের আয়ের অন্যতম উেস পরিণত হয়েছে পোলট্রি খাত। গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাষাবাদের প্রতিযোগী হিসেবে ক্রমেই আত্মপ্রকাশ করছে পোলট্রি খামার। আর এ তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটের (এফপিএমইউ) পৃথক দুই গবেষণায়।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে গ্রামীণ মানুষের মোট কর্মসংস্থানের ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল জমি চাষবাদকেন্দ্রিক (ফার্মিং)। এ হার ২০০৮-০৯ সালে কমে দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশে। আর ২০১৩-১৪ সালে তা আরো কমে ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। অর্থাত্ এ সময় ধরে চাষাবাদকেন্দ্রিক কর্মসংস্থানের হার ক্রমাগত কমেছে।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এফপিএমইউর ‘ন্যাশনাল ফুড পলিসি প্ল্যান অব অ্যাকশন অ্যান্ড কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান: মনিটরিং রিপোর্ট ২০১৬’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্রমেই গ্রামীণ পরিবারের আয়ের অন্যতম উেস পরিণত হচ্ছে পোলট্রি খাত।

এফপিএমইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৫ শতাংশ পরিবার পোলট্রি খাতে  যুক্ত ছিল। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ১ শতাংশে। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা উন্নীত হয় ৪৯ শতাংশে। দুই বছরের ব্যবধানে পরিবারের আয়ে পোলট্রি নির্ভরতা বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। চাষাবাদের গুরুত্ব হ্রাসের বিপরীতে পোলট্রি খাতে এ নির্ভরতা বৃদ্ধি অবশ্যই খাতটিকে গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

এদিকে ওয়ার্ল্ড’স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের (ওয়াপসা) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ খামারই ক্ষুদ্র আকারের। এসব খামারের প্রতিটির গড় মুরগি উৎপাদনক্ষমতা তিন থেকে সাত হাজার। ফলে দেশের পোলট্রি খাত অনেকটাই দরিদ্র পরিবার ও ক্ষুদ্র খামারভিত্তিক।

ওয়াপসার মতে, ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দৈনিক প্রায় সাড়ে চার কোটি ডিম ও প্রায় সাড়ে চার হাজার টন মুরগির মাংসের প্রয়োজন হবে। মাংস ও ডিমের এ চাহিদা মেটাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাড়তি বিনিয়োগ প্রয়োজন ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থনৈতিক নির্ভরতা বাড়লেও খাতটিতে রয়েছে নানা  সংকট। খাতটি এমনিতেই বিনিয়োগ খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের ভবিষ্যত্ পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এসব ক্ষুদ্র খামারিকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রোটিনের চাহিদা মেটানো ও পরিবারের আয় সৃষ্টিতে আগামীতে পোলট্রি খাতের সম্ভাবনা আরো বিস্তৃত হবে। তাই উৎপাদন ও বিপণন কাঠামোয় ক্ষুদ্র এসব খামারিকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। পোলট্রি উৎপাদনে অত্যাবশ্যকীয় চিকস, ফিড ও অন্যান্য উপকরণ সহনীয় মূল্যে সহজলভ্য করতে হবে। বিনিয়োগ তহবিল শক্তিশালী করতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। বার্ড ফ্লুসহ রোগবালাই দমনের পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৬ ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কো-অর্ডিনেশন কমিটির (বিপিআইসিসি) তথ্যমতে, দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষ চাহিদার ৪৫ শতাংশ এখন পোলট্রি খাতনির্ভর। বর্তমানে খাতটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের। ছোট-বড় খামার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫৫-৬০ লাখ ব্রয়লার বাচ্চা ও প্রায় চার-পাঁচ লাখ লেয়ার বাচ্চা উৎপাদন হয়। ছোট-বড় খামার থেকে

দেশে প্রতিদিন গড়ে পোলট্রি মাংস উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টন।

বিপিআইসিসির তথ্যমতে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ ডিম ও মাংস গ্রহণে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। জাপানের মানুষ বছরে গড়ে ৬০০টি ডিম খায়। আর বাংলাদেশের মানুষ বছরে গড়ে ডিম খায় মাত্র ৫০টি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বছরে গড়ে   ৫০ দশমিক ১ কেজি মুরগির মাংস খায়। আর বাংলাদেশের মানুষ মুরগির মাংস খায় মাত্র ৩ দশমিক ৬৩ কেজি। তাই বাংলাদেশে পোলট্রি খাতের মাধ্যমে মাংস ও ডিমের চাহিদা আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পোলট্রির উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ বৃদ্ধির হার আরো কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫৪ শতাংশে।

এ বিষয়ে বিপিআইসিসি আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, দেশের সিংহভাগ পোলট্রি খামার ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে উঠেছে। কিন্তু খাতটিতে সরকারের দিকনির্দেশনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতির এ সময়ে দেশে অবস্থানরত বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না তারা। এতে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। তাই খাতটির উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও দেশীয় উদ্যোক্তা সহায়ক স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। পাশাপাশি ডিম ও মাংস আমদানিকে বেশি উত্সাহ না দিয়ে দেশীয় উৎপাদকদের প্রতি নজর দেয়াও প্রয়োজন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পোলট্রি খাতের অবদানকে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। খাতটিতে যেহেতু ক্ষুদ্র খামারি ও দরিদ্র পরিবার নিয়োজিত রয়েছে, তাই তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। সামনের দিনে তা আরো বাড়ানো হবে।