Dr. Khondaker Golam Moazzem on imposing antidumping duty

Published in কালের কন্ঠ on Thursday, 28 January 2016

ডাম্পিংবিরোধী শুল্কে পিছিয়ে বাংলাদেশ

রাজীব আহমেদ

antidumping-dutyহাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উৎপাদন ও রপ্তানিতে বেশ ভালো করছিল বাংলাদেশি তিন প্রতিষ্ঠান তাসনিম কেমিক্যালস, সামুদা কেমিক্যালস ও এএসএম কেমিক্যালস। ভারত ও পাকিস্তানেই তাদের রপ্তানির পরিমাণ বেশি। তবে গত মাসে হঠাৎ করেই পাকিস্তান বাংলাদেশি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের ওপর ১৯.৩২ শতাংশ ডাম্পিংবিরোধী (অ্যান্টিডাম্পিং) শুল্ক বসিয়ে দেয়। ফলে বিপাকে পড়েছে ওই সব কম্পানি। পাকিস্তানে তাদের রপ্তানি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পণ্যের ডাম্পিং ঠেকাতে ৫০টি ব্যবস্থা নিয়েছে, অর্থাৎ শুল্ক বসিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারত আরো এগিয়ে, তারা অ্যান্টিডাম্পিংয়ের বিরুদ্ধে ৫৩৪টি ব্যবস্থা নিয়েছে। অন্যদিকে চীন নিয়েছে ১৭৬টি ব্যবস্থা। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একটি পণ্যেও ডাম্পিংবিরোধী শুল্ক বসাতে পারেনি। এমনকি কোনো পণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক বসাতে বাংলাদেশের কোনো উদ্যোগও নেই। অথচ বিভিন্ন দেশ নিজেদের বাজারদরের চেয়ে কম দামে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করে বলে অভিযোগ আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মূসক বা ভ্যাট আইন ও সম্পূরক শুল্ক আইন বাস্তবায়িত হলে কিছু পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যে সম্পূরক শুল্ক উঠে যাবে। তখন দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা ঝুঁকির মুখে পড়বে। নতুন পরিস্থিতিতে দেশীয় শিল্প রক্ষায় অ্যান্টিডাম্পিং, কাউন্টার ভেইলিং ও সেইগার্ড শুল্কই হবে একমাত্র উপায়। সে ক্ষেত্রে এসব শুল্ক বসাতে গবেষণা ও পর্যালোচনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশ আটটি পণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। পরে আলোচনা আর এগোয়নি। তবে বাংলাদেশে ডাম্পিংয়ের ঝুঁকি আছে।’

কোনো দেশ তার বাজারদর অপেক্ষা কম দামে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি করলে তা ডাম্পিং হিসেবে পরিগণিত হয়। ডাম্পিং করা পণ্য বাজার দখল করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্থানীয় শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। ডাব্লিউটিওর নিয়ম মেনে ডাম্পিং করা পণ্যের ওপর ডাম্পিংবিরোধী শুল্ক বা অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা যায়। তবে ডাম্পিংবিরোধী শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ থাকতে হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কোনো পণ্যে এখন অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে চাইলে সে দেশ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। এ কাজটি অবশ্য অনেক জটিল।

ভারতে ডিরেক্টর জেনারেল অব অ্যান্টিডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) নামের একটি সংস্থা আছে, যারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। তাদের একমাত্র দায়িত্ব কোন কোন পণ্যে এ ধরনের শুল্ক আরোপ করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করা। কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন কোনো পণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং আরোপের অনুরোধ জানালে তা নিয়েও কাজ করে। সম্প্রতি সংস্থাটি বাংলাদেশি পাটপণ্যে কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি আরোপ করার উদ্যোগ নিয়ে চিঠি দিয়েছে।

পাকিস্তানে এই দায়িত্ব পালন করে ন্যাশনাল ট্যারিফ কমিশন। ২০১৫ সালে দেশটি ‘অ্যান্টিডাম্পিং অ্যাক্ট’ ও ‘কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি’ অ্যাক্ট করেছে। পাশাপাশি ‘সেইফ গার্ড মেজারস অ্যাক্ট’ সংশোধন করে যুগোপযোগী করেছে। তাদের ট্যারিফ কমিশনকে শক্তিশালী করে আইনে সুনির্দিষ্টভাবে এসব শুল্ক আরোপ ও পর্যালোচনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে কাস্টমস আইনের অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হিসেবে এসব শুল্ক নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু ওই সংস্থায় এ জন্য নির্ধারিত কোনো কর্মী নেই। কাউকে এ বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক নজরদারি, পর্যালোচনা ও গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া নেই। বাংলাদেশের ওপর কেউ এ ধরনের শুল্ক আরোপ করার উদ্যোগ নিলে তখন বিরুদ্ধে অবস্থানপত্র তৈরির জন্য একেক সময় একেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ট্যারিফ কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং তাদের আইনেই ডাম্পিংবিরোধী, কাউন্টার ভেইলিং ও সেইগার্ড শুল্ক বিষয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা নিয়ে ট্যারিফ কমিশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে। ওই আইনে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য স্বল্প মেয়াদে বাইরে থেকে জনবল নেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছিল। কিন্তু সচিব কমিটি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরও এখনো সংশোধনীটি পাস হয়নি। ওই সংশোধনীতে আধুনিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে বিভিন্ন বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। পাশাপাশি ট্যারিফ কমিশনের নাম পরিবর্তন করে ‘ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন অব বাংলাদেশ’ রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছিল।

ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশ অ্যান্টিডাম্পিংয়ের মতো শুল্কগুলো নিয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি কাঠামো থাকা দরকার, যারা ঝুঁকির বিষয়গুলো নজরে রাখবে, গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করবে।’