Dr Debapriya Bhattacharya on challenge for the upcoming budget

Published in Jai Jai Din on Thursday, 4 June 2015.

আজ বাজেট পেশ: অর্থ সংস্থানই বড় চ্যালেঞ্জ

আহমেদ তোফায়েল

আবুল মাল আবদুল মুহিত২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেট আসছে । এবারের বাজেটে মোট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ। এই বাজেটে অর্থসংস্থানই বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আজ বিকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাকালে বিশাল বাজেটের অর্থসংস্থান ও চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি জনকল্যাণমুখী স্বপ্নের কথাও বলবেন।

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যায়যায়দিনকে বলেন, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকাসহ কিছু সুবিধা রয়েছে। তবে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থসংস্থান করা।

একই ধরনের মতামত দেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।সরকারের বাজেটে অর্থসংস্থান বা পরিকল্পনা অনেকখানিই নির্ভরশীল রাজস্ব আয়ের ওপর। সেই রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি থাকছে চলতি অর্থবছরে। অর্থবছর শেষ না হতেই এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত আদায় হবে এর চেয়েও কম। এনবিআর সূত্রগুলো বলছে, সব মিলিয়ে আদায় হতে পারে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। ফলে বাজেটের বিশাল আকার করলেও অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে পিছিয়ে আছেন অর্থমন্ত্রী।

আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এই অর্থের একটি বড় জোগান আসবে রাজস্ব খাত থেকে। এই খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। করবহির্ভূত খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বিশাল ঘাটতি রেখে আগামী বাজেট তৈরি করা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘাটতি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮৬ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা মোট জিডিপির ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি বাজেট চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা বেশি। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৩০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে সরকার। বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা, বৈদেশিক অনুদান হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।

ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে ৫৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে নেয়া হবে ৩৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেয়া হবে।

এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধির আকাঙ্খা ৭ দশমিক ১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই হারে প্রবৃদ্ধি হলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যআয়ের দেশ হতে পারবে না। এ জন্য অবশ্যই গড়ে প্রতিবছর সাড়ে ৭-৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বর্তমান হারে প্রবৃদ্ধি হলে বাংলাদেশ বড়জোর নিম্ন মধ্যআয়ের দেশ হতে পারবে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যায়যায়দিনকে বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি সুবিধা নিয়ে এবার বাজেট প্রণয়ন করতে পারছেন অর্থমন্ত্রী। যেমন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল, সুদের হার নিম্নগামী, বাজেট ঘাটতি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এবং সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ইতিবাচক। এর ওপর আবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় সার ও অন্যান্য ভতুকি নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগও তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, সমস্যা হলো এতগুলো সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ এখনো চাঙা হলো না। সামষ্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক দিকগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য এবারের বাজেটের আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ।

এবারের বাজেট অন্যান্য বাজেটের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি কিছু নতুন বিষয় থাকছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের বিশেষ চমক থাকছে, যা বাজেটের দিন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করবেন।

জানা গেছে, এবারের বাজেটে অনেকগুলো বিষয় নতুন থাকছে। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট তৈরির একটি ঘোষণা। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো কাঠামো থাকবে না। জেলা বাজেটকে আরো সম্প্রসারণ করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক করার ধারণাও থাকতে পারে বাজেটে। গ্রামের মানুষকে সঞ্চয়ের সুবিধা দিতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যাপারে একটি ঘোষণা আসতে পারে। সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গ্রামীণ সঞ্চয় উৎসাহিত করতে সুদের হার শহরের চেয়ে বেশি করা হতে পারে। ব্যবসায়ীদের জন্য করপোরেট কর কমানো হচ্ছে। এর মধ্যে কমছে ব্যাংকিং খাতের করও। শেয়ারবাজারের জন্য থাকছে বিশেষ প্রণোদনা। ঋণের সুদের হার কমানোর একটি ঘোষণাও থাকছে বাজেটে। যদিও ইতোমধ্যে ঋণের সুদের হার কমানোর একটি উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়েছে। আগামীতে এটি আরো দৃশ্যমান হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের কর অবকাশ সুবিধা দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধার কথা থাকছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদীতে ট্যানেল নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেললাইন নির্মাণের বিষয়ে কথা থাকছে।

আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়নকে। সব মিলে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। সরকার মনে করে, মানবসম্পদের উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়বে। বেড়ে যাবে কর্মসংস্থান। এর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা, সশস্ত্র বাহিনী খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

আসন্ন বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যয় হবে ভর্তুকি, সুদ এবং বেতন খাতে। ওই তিন খাতে ব্যয় করা হবে ১ লাখ ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। মোট বাজেটের প্রায় ৩৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে এসব খাতে। ব্যয়ের দিক থেকে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৫ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বেশি গুণতে হবে সরকারকে। মূলত নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের কারণে চলতি বাজেটের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে।

আগামী বাজেটে মোট ব্যয়ের ১৪ দশমিক ২৮ যাবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এই হিসাবে নতুন অর্থবছরে এই খাতে ১২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা বাড়ছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী ১ জুলাই থেকে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন-ভাতার পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে।

জিনিসপত্রের দাম বাড়ুক বা না বাড়ুক, সরকারি চাকুরেদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানে পার্থক্য যে স্পষ্ট হবে, তা উপলব্ধি করেই নতুন অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি আড়াই লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রয়েছে।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতেও বরাদ্দ বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে এবার ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দ্বিগুণ করা ছাড়া অন্য উপকারভোগীদের সুবিধা বাড়ছে না। সরকার এর বদলে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হবে।