Dr Debapriya Bhattacharya on FY2016 budget financing

Published in The Daily Ittefaq on Friday, 5 June 2015.

বাজেট উচ্চাভিলাষী নয় বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ
অর্থনীতিবিদদের অভিমত

আহসান হাবীব রাসেল

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে  বাজেট বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তারা। বাজেট প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, বাজেটে আয়ের সংস্থান করাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বড় এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বাস্তবায়নের জন্যও দক্ষতা দেখাতে হবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদেরকে।

অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেছেন, বাজেটের যে আকার তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তবে বাস্তবায়নই হলো মূল কথা। বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। আর এডিপি বাস্তবায়নে ১ জুন থেকেই অর্থ ছাড় করা দরকার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি আদায় সম্ভব। তবে মূল্যস্ফীতির যে হার ধরা হয়েছে তা ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জিং। যেহেতু সরকারি বেতন বাড়ানো হবে। এর প্রভাবে বেসরকারি বেতনও বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে দেশের মূল্যস্তরে। খাত ভিত্তিক পর্যালোচনায় তিনি বলেন, শিক্ষা খাত ও প্রযুক্তি খাতে পৃথকভাবে বরাদ্দ দিলে ভাল হতো। আর স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা তুলনামূলক কম। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর বহু লোক বিদেশে চিকিত্সা সেবা নিতে যায়। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও চিকিত্সা সেবা উন্নত করার জন্য এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। এবারের বাজেটে সব ধরনের রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে। এতে রপ্তানি খাত অনুত্সাহিত হবে। তাই এ বিষয়ে সরকারের বিবেচনা করা প্রয়োজন। এছাড়া নৌ পথের উন্নয়নে এ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন। বিশেষ করে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে সেটি আদায় কঠিন। আবার উন্নয়ন ব্যয়ের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত তাও বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত  এডিপির মাত্র ৫৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। শেষে অবশ্য দেখা যাবে বাস্তবায়ন  অনেক বেড়েছে। তবে সেখানে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি বলেন, বাজেট দেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে বেশি শুরুত্ব দেয়া উচিত। প্রথমত, যথার্থভাবে আয়-ব্যয়ের হিসাব করা। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। এটি করা গেলে কর্মসংস্থান বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগও আসবে। তৃতীয়ত, সামাজিক খাত, বিশেষ করে- কর্মসংস্থানমূলক কারিগরি শিক্ষা, সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা দরকার।

বাজেটের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিসটিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বা অবাস্তব বলছি না। তবে বাজেটে ব্যয়ের কাঠামো বিবেচনা করে আয় সংস্থান করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ আয় সংস্থান করতে গিয়ে যেসব আয়ের উত্স প্রাক্কলন করা হয়েছে, তার কিছু কিছু অর্জন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তাছাড়া বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে পদক্ষেপ তাও দেখছি না। এবার ন্যূনতম আয়কর নির্ধারণ ও শিশু বাজেট পেশ করা ইতিবাচক দিক।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়াতে গিয়ে এবারের বাজেটে সরকারের রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেতন বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে বেতন বাড়ানোর ফলে তাদের সেবাও যেন বাড়ে, সে বিষয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন। আর সরকার এবারে বাজেটে যে আয়ের দিকে নজর দিয়েছে এর মধ্যে কিছু দিক রয়েছে ইতিবাচক।

অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন বলেন, এবারের বাজেটে কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক খাত সংস্কারে কমিশন গঠন অন্যতম। যদিও এ কমিশন গঠনের ফলে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তবে বিত্তবান ও অতি বিত্তবানদের উপর সম্পত্তি কর আরোপের বিষয়ে বলা হলেও সেটি এ বাজেটেও করা হয়নি। শুধু সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এ বাজেটে গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে যে ধরনের গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল তা দেয়া হয়নি।