Dr Debapriya Bhattacharya on inequitable growth and inequality

Published in Alokito Bangladesh on Sunday, 28 September 2014.

জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না দরিদ্ররা
অবকাঠামো সঙ্কট জলবায়ু পরিবর্তন

জাহিদুল ইসলাম

এক দশক ধরে দেশজ আয়ে (জিডিপি) প্রতি বছর প্রায় ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থনীতির আকার বাড়লেও দেশের দরিদ্র মানুষ এর সুফল কতটুকু পেয়েছে- এমন প্রশ্ন রয়েই গেছে। সরকারের হিসাবে এখনও দেশের সাড়ে ২৬ শতাংশ মানুষ চরম দরিদ্র। সর্বশেষ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দৈনিক ১ দশমিক ২৫ পিপিপি ডলারের কম আয় করে, এমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪৩ শতাংশের বেশি। আয়বৈষম্য কয়েক বছরে বেড়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে আঞ্চলিক দারিদ্র্যবিমোচনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্য নিরসন ও সম্পদের আঞ্চলিক অসমতা কমিয়ে আনতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প ও মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে ৯৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প। উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ৯৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকায় নেয়া হয়েছে অন্য একটি প্রকল্প। কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে অবহেলিত এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে অর্থনীতির গতি আনার লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আঞ্চলিক দারিদ্র্য কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দারিদ্র্য নিরসনের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হবে। আঞ্চলিক দারিদ্র্য নিরসনে নেয়া প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকারের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক বছর ধরে জাতীয় আয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠী আনুপাতিক হারে এর সুফল পাচ্ছে না। এর ফলে সম্পদের বৈষম্য কমায় সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে নেয়া প্রকল্পগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও অবকাঠামো সঙ্কটের কারণে কিছু এলাকার মানুষ পিছিয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, আঞ্চলিক দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে নেয়া প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এ বিষয়ে সৃজনশীল নতুন কিছু করতে হবে। বৈষম্য কমাতে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন-সহযোগীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। পাইপলাইনে আটকে থাকা বিদেশি সহায়তাও এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের তৈরি করা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় আয়ের মাত্র ৫ দশমিক ২২ শতাংশের মালিক সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ মানুষ। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ১৯৯২ সালে ২০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয় ছিল জিডিপির ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। সম্পদে দরিদ্র মানুষের অংশীদারিত্ব কমে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। আঞ্চলিক দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্রে ফুটে উঠেছে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রণীত এ মানচিত্রে বলা হয়েছে, দেশে দারিদ্র্যের গড় হার ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ হলেও রংপুর বিভাগে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।