Dr Debapriya Bhattacharya on infrastructure and development

Published in Alokito Bangladesh on Sunday, 29 March 2015.

বিদেশি বিনিয়োগে মন্থর গতি
এক বছরে কমল পাঁচ শতাংশ: রাজনৈতিক অস্থিরতাই বড় কারণ

জিয়াদুল ইসলাম

টানা তিন বছর বৃদ্ধির পর গত বছর বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। কমার হার প্রায় ৫ শতাংশ। তবে ২০১৩ সালের মতো ২০১৪ সালেও ১৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। এ সময় সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ম্যানুফ্যাকচারিং তথা শিল্প খাতে। আর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। বিদেশি বিনিয়োগের ওপর সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্ভে প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসার গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। এর জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাব, অবকাঠামো সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিকে দায়ী করেছেন তারা। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপও করেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি অর্থবছরে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে আগামীতে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমার আশঙ্কাও করেছেন তারা।

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ১৯তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের ‘বিশ্বায়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও উন্নয়ন’ নিয়ে এক কর্ম-অধিবেশনে বলা হয়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের চেয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ব্যয় অনেক কম। শ্রমের মজুরি ছাড়াও গ্যাস ও বিদ্যুতের সেবামূল্যও তুলনামূলক কম। তবে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ সহজলভ্য নয়; বরং নতুন সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের তালিকায় শেষের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই ব্যবসা করার ব্যয় কম হলেও সুযোগ কাজে লাগছে না। এতে আশানুরূপ হারে বাড়ছে না প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। জানা গেছে, বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশিদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বর্তমানে অন্তত ১৭টি খাতে কর অবকাশ-সুবিধা পাচ্ছেন বিদেশিরা। বিদেশিদের মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিধিবিধান শিথিল করা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে বিশ্বের ৬৬টিরও বেশি দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকিগুলো থেকে নামমাত্র বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশে প্রত্যাশিত হারে বিনিয়োগ না বাড়ার জন্য কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করেন। এগুলো হলো গ্যাস, বিদ্যুৎ, জমি ও অবকাঠামোর অভাব এবং দুর্নীতির সমস্যা। তার মতে, একদিকে দেশে বিনিয়োগ নেই, অন্যদিকে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। সে অর্থই আবার বিদেশি বিনিয়োগ বলে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ কম আসার পেছনে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। দশম জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা কাজ করেছে, সেটি গেল বছরও অব্যাহত ছিল। এ কারণে গেল বছর দেশে দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও কমে থাকতে পারে। তিনি মনে করেন, চলতি বছরও বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে যেতে পারে- যদি না চলমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সালে দেশে এফডিআই এসেছে ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার- যা ২০১৩ সালের একই সময়ের চেয়ে ৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার বা ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। ২০১৩ সালের পুরো সময় দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার। গেল বছরও বিদেশি বিনিয়োগের সিংহভাগই এসেছে রিইনভেস্টেড আর্নিংসের মাধ্যমে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সালে নতুন বিনিয়োগ বা ইক্যুইটির পরিমাণ ছিল মাত্র ২৮ কোটি ডলার। রিইনভেস্টেড আর্নিংসের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ইন্ট্রা-কোম্পানি লোনের পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ সালে দেশে প্রথমবার বিদেশি বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ২০১১ সালে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। ২০১২ সালে তা বেড়ে হয় ১২৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আর ২০১৩ সালে এফডিআই আসে ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এটি ২০১২ সালের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এর পরিমাণ ১৮ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছে ১৩ কোটি ডলার। ১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার এসেছে পাকিস্তান থেকে। সিঙ্গাপুর ও নরওয়ে থেকে এসেছে যথাক্রমে ১১ কোটি ডলার ও ১০ কোটি ডলার।

বর্তমানে কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, টেক্সটাইল, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো, ব্যাংকিং, টেলিকমিউনিকেশনসহ আরও অনেক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। তবে ২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি ৭২ কোটি ২৮ লাখ ডলারের বিনিয়োগ এসেছে ম্যানুফ্যাকচারিং বা শিল্প খাতে। ৩৯ কোটি ডলার এসেছে টেক্সটাইল খাতে; ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে এসেছে ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার; ব্যাংকিং খাতে এসেছে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ডলার; যোগাযোগ ও অবকাঠামোতে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার; টেলিকমিউনিকেশনে ২২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে; সেবা খাতে এসেছে সাড়ে ৬ কোটি ডলার; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেল খাতে এসেছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।