উন্নয়ন চিন্তা করতে হবে এসডিজিকে ঘিরেই – দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

In an interview, Debapriya Bhattacharya explains how ideas of development from now onwards would revolve around the SDGs, published in Prothom Alo on Thursday, 12 November 2015.

প্রথম আলো কার্যালয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
উন্নয়ন চিন্তা করতে হবে এসডিজিকে ঘিরেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) একটি বৈশ্বিক বৈপ্লবিক কর্মসূচি। একে এড়িয়ে এখন উন্নয়ন পরিকল্পনা করার সুযোগ কম। ২০৩০ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ আগামী ১৫ বছরের সার্বিক উন্নয়নের চিন্তা করতে হবে এসডিজিকে ঘিরেই।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গতকাল বুধবার প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসব কথা বলেছেন। প্রথম আলোর সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এসডিজির ওপর আলোচনায় অতিথি ছিলেন তিনি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) থেকে এসডিজিতে রূপান্তরের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এমডিজিতে কিছু সূচকের উন্নতির কথা বলা হয়েছিল। মূল দর্শনটি ছিল মানবসম্পদের উন্নয়ন। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিন্তাটা ছিল না এখানে। এমডিজির পথ ধরেই এসেছে এসডিজি। এমডিজির যত দোষই থাকুক না কেন, নিঃসন্দেহে এর সাফল্য পাওয়া গেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ২০১০ সাল থেকেই বলা হচ্ছিল যে এমডিজির তো উত্তরসূরি থাকা দরকার। সেই উত্তরসূরিই হচ্ছে এসডিজি। চেয়েছিলাম ‘এমডিজি প্লাস’ বলে কিছু হোক। শেষ পর্যন্ত এসডিজি হলো এবং ভালোই হলো। অবশ্য এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যও খুঁজে পান দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নে সরকারের দায়িত্বই ছিল প্রধান। কিন্তু এসডিজি সরকার একা করতে পারবে না। এর জন্য বেসরকারি খাতকেও যুক্ত রাখতে হবে।

দেবপ্রিয় বলেন, এসডিজিতে বলা হচ্ছে, শুধু নিজ দেশের উন্নয়ন করলেই হবে না; এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের আয়-বৈষম্যের যে ফারাক রয়েছে, সেটাও কমিয়ে আনতে হবে। চোখের সামনে এখন যে এসডিজি আছে, তা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বড় এক সুযোগ। তিনি মনে করেন, একটি মানবিক জীবন গড়ে তোলার জন্য সুযোগটি কাজে লাগানো দরকার। শুধু সুযোগ নয়, বৈশ্বিক ও দেশীয়—দুই দিক থেকেই এসডিজি নতুন একটি হাতিয়ার। এই হাতিয়ার নিয়েই এখন যুদ্ধ শুরু করতে হবে।

টাকা কোথা থেকে আসবে, সেই চিন্তা থেকেই বেসরকারি খাতের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি এসেছে বলে জানান ড. দেবপ্রিয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সবাই বুঝে গেছে যে ধনী দেশগুলো বর্তমানে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে যে সাহায্য করে, আগামী দিনে তার পরিমাণ খুব একটা বাড়বে না।’

সন্ত্রাস দূর, মানব পাচার রোধ ও নারী-শিশুর প্রতি অত্যাচার বন্ধ, আইনের শাসন কায়েম, পাচার বা চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধার এবং দুর্নীতি কমানো—এই পাঁচটি হলো এসডিজির লক্ষ্য। আর অভীষ্ট হচ্ছে ১৬টি। অভীষ্টের মধ্যে স্বাস্থ্যকর, সমৃদ্ধ, সবুজ পৃথিবীময়, অংশীদারিমূলক, ন্যায়বিচারভিত্তিক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন—এ ছয়টি হচ্ছে মূল। এর বাইরেও লক্ষ্য আছে ১৭টি।

দেবপ্রিয় বলেন, ন্যায়বিচার না থাকলে উন্নয়ন গ্রহণযোগ্য নয়। আবার ন্যায়বিচার পেলেই হবে না, মানুষকে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগও দিতে হবে। এসডিজিতে গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়টি আনা হয়েছে, যা এমডিজিতে ছিল না।

আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে ফারাক কমাতে না পারলে এসডিজি শুধু নামেই থাকবে উল্লেখ করে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরেন সিপিডির এই বিশেষ ফেলো। দেবপ্রিয়র মতে, এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, টাকা পাচার বন্ধ করা, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং পাইপলাইনে থাকা বিদেশি সহায়তা ব্যবহার করতে পারার মাধ্যমে।

এমডিজির ৭০-৮০ শতাংশ অর্থায়ন সমস্যা নিজেদের উৎস থেকেই মেটানো হয়েছে বলে তথ্য দেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এমডিজির একটি বিষয় নিয়ে কেউই কথা বলছেন না। গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবেদনও হয়নি। সেটি হচ্ছে, মোট ভূমির কত অংশ বনভূমি থাকতে হবে—এ বিষয়ে এমডিজিতে যে লক্ষ্য ছিল, তা থেকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে।

এসডিজির ব্যাপক সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেও এর একটা জায়গা নিয়ে হতাশ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এর লক্ষ্য অর্জনে কোন দেশ কতটুকু এগোল, সে বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই, সময়সীমাও নেই। দেবপ্রিয় বলেন, প্রথমে বলা হয়েছিল যে চার বছর পর পর সবাই প্রতিবেদন জমা দেবে। পরে ‘৪’ সংখ্যাটি তুলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে অনেক কিছুই শিথিল করা হয়েছে।