Dr Khondaker Golam Moazzem on RMG export to Russia

Published in Alokito Bangladesh on Sunday, 23 November 2014.

সম্ভাবনাময় নতুন বাজার রাশিয়া

জাহিদুল ইসলাম

01_108591

ক্রয়ক্ষমতায় সক্ষমতার (পিপিপি) দিক দিয়ে রাশিয়ার অর্থনীতির আকার ষষ্ঠ বৃহৎ। দেশটির রয়েছে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ। তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও মূল্যবান খনিজসম্পদ রফতানি করে রাশিয়া অন্যতম সম্পদশালী দেশে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক চাহিদাও বাড়ছে। এর ফলে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই বাড়ছে রাশিয়ার পোশাক আমদানির পরিমাণ।

রাশিয়া প্রতিবছর ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমানের পোশাক আমদানি করে। মোট আমদানির ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ পোশাক যায় বাংলাদেশ থেকে। ২০১৩ সালে রাশিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় ৯ কোটি ২৩ লাখ ডলার মূল্যমানের পোশাক রফতানি হয়েছে। ২০১৩ সালে তা ৪৯ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে।

রাশিয়ায় অধিক হারে পোশাক রফতানিতে শুল্ক বাধাকেই বড় হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গেলেও তা এখনও বাংলাদেশকে দেয়নি রশিয়া। তাছাড়া দেশটি ২০১২ সালের আগস্টে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিস্নওটিও) সদস্য হলেও এলডিসি দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধা এখনও দেয়নি। বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, চীন, ভারত, ইটালি ও তুরস্কের মতো দেশগুলোর মতো উচ্চ হারে শুল্ক পরিশোধ করেই রাশিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, উচ্চ শুল্ক রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ইউরেশিয়া অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ায় বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পায়। এ অবস্থায় শুল্কহার কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশী পণ্য রাশিয়ার ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশটিতে অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন মেলায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশী পোশাকের একক প্রদর্শনীর আয়োজন হলে রাশিয়ায় আমাদের পোশাক রফতানি অনেক বাড়বে বলেও তিনি মনে করেন।

পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাশিয়ায় ১৪ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার লোকের বাস। দেশটির মোট দেশজ আয়ের (জিডিপি) পরিমাণ ২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৮ মার্কিন ডলার। জিডিপিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩ শতাংশ। মাথাপিছু গড় আয়ের পরিমাণ ১৪ হাজার ৬১২ ডলার।

২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় ২০ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার ডলার মূল্যমানের পণ্য রফতানি হয়েছে। একই সময়ে দেশটি থেকে আমদানি করা হয়েছে ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য। এক বছরে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

রাশিয়া ২০০৯ সালে ৩৬৭ কোটি ৪৩ লাখ ১০ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে- এর মধ্যে নিটওয়্যারের পরিমাণ ১৬২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর ওভেনের পরিমাণ ২০৪ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। পরের বছর দেশটি ৫৫৫ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করে। এক বছরে পোশাক আমদানির পরিমাণ বাড়ে ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ। ওই বছর ২৫৮ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারে নিট ও ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলারের ওভেন পোশাক আমদানি করে দেশটি।

২০১১ সালে রাশিয়ার পোশাক আমদানি বাড়ে ২১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ৩২৭ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারের নিট ও ৩৪৭ কোটি ৭০ হাজার ডলারের ওভেন মিলে ওই বছর রাশিয়া মোট ৬৭৪ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করে। ২০১২ সালে মোট ৮১৯ কোটি ৭০ লাখ ১০ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি হয়। ৪০৯ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের নিট ও ৪০৯ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের ওভেন পোশাক আমদানি করে রাশিয়া। এ বছরও আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয় ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এলেও আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪৮ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ডলারে। ওই বছর ওভেন পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ৪২৯ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। একই বছর ৪১৮ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের নিটওয়্যার আমদানি করে রাশিয়া।

অভ্যন্তরীণ বাজার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাড়িয়েছে রাশিয়া। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে দেশটি ৯ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। ২০১৩ সালে তা ৪৯ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার পোশাক আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ৫৭ দশমিক ৭৮ ও ৮৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে রাশিয়ার পোশাক আমদানি ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়লেও বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাশিয়ায় নিট পোশাক ও ওভেন পোশাক রফতানিতে বরাবরই শীর্ষে রয়েছে চীন। ২০১৩ সালে চীনের উদ্যোক্তারা রাশিয়ায় ১৭৮ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের নিট পোশাক রফতানি করেছেন। এ খাতে রাশিয়ার ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাজার চীনের দখলে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা তুরস্কের বাজার রয়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এর পরেই ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাজার দখল করে রাশিয়ায় নিট পোশাক রফতানিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাজার দখল করে রাশিয়ায় ওভেন পোশাক রফতানিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ খাতে চীনের পরেই রয়েছে বেলারুশ, ইটালি ও তুরস্ক।