Dr Khondaker Golam Moazzem on RMG sector and political quagmire

Published in Jaijaidin on Wednesday, 28 January 2015.

অস্থিরতার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা
তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা আজ মাঠে নামছেন

মেসবাহুল হক

চলামান হরতাল, অবরোধে সহিংসতার কারণে আবারো বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। এরই মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৪০ শতাংশ ক্রয় আদেশ বাতিল হয়েছে বলে দাবি করছে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবার রাজপথে নামছেন বস্ত্র এবং তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা।

অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তাদের মতে, এখনই সমস্যার সমাধান না করা হলে আবারো বিশ্ববাজারে অবস্থান হারাবে বাংলাদেশ। তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। তাই এ রকম সঙ্কটময় পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রপ্তানি লক্ষ্য থেকে থাকতে হবে বহুদূরে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ওভেন (শার্ট, প্যান্ট) পোশাকের রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ সময় রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪৩ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। তবে রপ্তানি হয়েছে ৫৯৬ কোটি ২৭ লাখ ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ পণ্যের রপ্তানি কমেছে দশমিক ৩৫ শতাংশ।

আর নিট (গেঞ্জি, সোয়েটার) পোশাকের রপ্তানি আয় কমেছে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২১ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। তবে রপ্তানি হয়েছে ৬০৬ কোটি ১৫ লাখ ৮০ ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন-বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, গত ছয় মাস ভালো সময় পার হলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে পোশাক খাত। আর এখন রাজনৈতিক পরিবেশে যে সহিংসতা চলছে তা অব্যাহত থাকলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর অ্যাকর্ড ও এলায়েন্স প্রতিবেদনে, বাংলাদেশের মাত্র ২ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ইতিবাচক ভাবমূর্তিই তুলে ধরে। কিন্তু সহিংস রাজনীতির কারণে এর সুফল ঘরে তোলা যাচ্ছে না।

বিজিএমইএ বলছে, চলতি অর্থবছর পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক দিনের হরতাল-অবরোধে ৬৯৫ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। আর প্রতিদিন এই শিল্পে প্রকৃত উৎপাদনের মূল্যমান হচ্ছে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে পোশাক খাত। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে পোশাকশিল্পের মালিকরা বলছেন, দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে না এলে চলতি অর্থবছর পোশাকের পাশাপাশি সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। এমনকি গতবারের প্রবৃদ্ধিও ধরে রাখা অসম্ভব।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম যায়যায়দিনকে বলেন, আর্থিক ক্ষতির চেয়ে বেশি সঙ্কট দেশের ভাবমূর্তিতে। সবচেয়ে বড় কথা এ রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি ক্রেতা দেশে আসতে চাচ্ছেন না। এমনকি আগে ক্রয় আদেশ দিয়েছিল কিংবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এমন প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের ক্রয় আদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ বাতিল করে দিয়েছে।

তিনি জানান, জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ক্রয় আদেশ পেয়ে থাকেন গার্মেন্ট মালিকরা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা টানা হরতাল-অবরোধে ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন না। উদ্যোক্তারা তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে। তবে শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশি ক্রেতারা নতুন করে কাজ দিতেই চাচ্ছেন না। এভাবে বারবার সমস্যায় পড়লে এ শিল্পটি আর সামনের দিকে এগুতেই পারবে না। কারণ বিকল্প খুঁজে ক্রেতারা বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোকে বেছে নেবে। তখন এমনিতেই এ শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।

এ অস্থিতিশীল পরিবেশকে স্বাভাবিক করতে ব্যবসায়ীদের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, কয়েকদিন আগে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটা সম্ভব হয়নি। এখন এসব অরাজকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জানাতে ব্যবসায়ীরা রাজপথে নামবেন। এর অংশ হিসেবে আজ গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ছাড়াও বিটিএমএ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতের উদ্যোক্তা মানববন্ধন করবেন। আর ৩০ জানুয়ারি গার্মেন্ট শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ রাজধানীতে সমাবেশ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিক। বছরের শেষ দিকে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। সব মিলিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে এবং ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানি ৫ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার পথনকশা প্রস্তুত করতে গত ডিসেম্বরে অ্যাপারেল সামিটের আয়োজন করে বিজিএমইএ। তবে ঠিক এক মাস পর আবার রাজনৈতিক অস্থিরতায় সব চিত্র পাল্টে গেছে। অস্থিরতা আরো দীর্ঘমেয়াদি হলে বিদেশি ক্রেতারা তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ মিয়ানমার, ভারতসহ অন্যান্য দেশে চলে যাবে। এতে এ খাত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিতে পড়বে।