Dr Khondaker Golam Moazzem on savings

Published in Janakantho on Monday, 3 August 2015.

সুদের হার কমলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে উলম্ফন
২০১৪-১৫ অর্থবছরে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

রহিম শেখ

লাগাম টানতে সুদের হার কমানো হলেও পুরো অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণে বিক্রি হয়েছে সঞ্চয়পত্র। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে এই বিক্রির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তিনগুণ বা সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এতো বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি। গেল অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে সঞ্চয়পত্রে ‘বিক্রির উলম্ফন’ ঠেকাতে সুদের হার কমানো হলেও বিক্রিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে সুদের হার আরেক দফা কমানোর দাবি তুলছেন অনেকেই।

জানা গেছে, ২০১৪Ñ১৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ২০১৫Ñ১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে সুদের হার কিছুটা বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে চাপ এবং নানামুখী আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসের শুরুতে অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ হারে কমানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু এরপরও এ খাতে বিক্রি ঠেকানো যায়নি। এ পরিস্থিতিতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের কেউ কেউ এ খাতের সুদের হার আরেক দফা কমানোর দাবি তুলছেন। যদিও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে বাজেট আলোচনায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সমালোচনা করেছেন।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪Ñ১৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এ খাতে নীট বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বেশি। এ বছর নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে মূল্য পরিশোধ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পুরো অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৩ হাজার ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূলত এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিক্রিই বেশি হয়ে থাকে। গেল অর্থবছরের ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এ সময়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ হাজার ৪২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।

আলোচ্য সময়ে মূল্য পরিশোধ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একক মাস জুন মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ১৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর আগে মে মাসে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এবং এপ্রিলে ২ হাজার ৯শ’ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আসে সঞ্চয়পত্রে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এতো বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও ব্যাংকের আমানতে সুদ হারের তুলনায় অনেক বেশি। এ জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গেল অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, শেয়ার বাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকেছেন সবাই। তিনি বলেন, ব্যাংক আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। তাই এর বিক্রি যতো বাড়বে সরকারের ঋণের বোঝাও ততো বাড়বে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার আরেক দফা কমানো যায় বলে তিনি মনে করেন। এদিকে সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যেও কেউ কেউ মনে করছেন, সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ার অর্থ হলো সরকার দায় বৃদ্ধি পাওয়া, সেইসঙ্গে সুদের অর্থ বাবদ বেশি অর্থ খরচ হওয়া। অন্যদিকে, এ খাতের সুদের হার বেশি হওয়ার অজুহাত তুলে ব্যাংকগুলোও ঋণের সুদের হার কমাতে চাইছে না। তারা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমলে কম সুদে আমানত নিয়ে কম সুদে ঋণ দিতে পারবে।

 

Published in Amader Shomoy

লাভের হার কমালেও বিক্রি বাড়ছে সঞ্চয়পত্রের

হারুন-অর-রশিদ

সুদহার কমিয়ে বিক্রি কমানোর চেষ্টা হলেও গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তিনগুণ বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি হওয়াই এর কারণ।

জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে সুদহার কিছুটা বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে চাপ এবং নানামুখী আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসের শুরুতে অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু তারপরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেনি।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে নিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বেশি। এ বছর নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

পুরো অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। এই সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার  ৩৯৬ কোটি এবং পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার। মূলত এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিক্রিই বেশি হয়ে থাকে।

গত অর্থবছরে ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এর পরিমাণ ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৪২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমলেও ব্যাংকের আমানতের সুদহারের তুলনায় তা অনেক বেশি। এজন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছেই। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমানোয় নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন সবাই। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি যত বাড়বে সরকারের ঋণের বোঝাও ততো বাড়বে।

জানা গেছে, ৫ বছরমেয়াদি পারিবারিক ও পেনশন সঞ্চয়পত্র কিনলে ১৩ দশমিক ৪৫ ও ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হতো। কিন্তু সুদহার কমানোর পর বর্তমানে এ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৫ বছরমেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে। ৩ বছরমেয়াদি ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদহার ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ৩ বছরমেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ এবং ৫ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম সমন্বয় করে মুনাফার হার ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের বিধানও বহাল রাখা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে গড় সুদহার গত অর্থবছরে কয়েকবার কমেছে। জুন শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।