Dr Khondaker Golam Moazzem savings certificate and small investors

Published in The Daily Janakantha on Saturday, 16 May 2015.

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ

এসএম আলমগীর

সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জায়গা ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। কয়েক বছর ধরেই শেয়ারবাজারে চলছে চরম মন্দা। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হারও কমানো হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমাল প্রায় ২ শতাংশ হারে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে চরম ক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর।

রাজধানীর মিরপুর কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম মজুমদার। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন বছরখানেক হল। পেনশনের টাকা এবং জমানো অর্থ মিলে ১৫ লাখ টাকার মতো হবে। চিন্তা ছিল সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগের লভ্যাংশ দিয়ে মেটাবেন সংসারের ব্যয়। কিন্তু সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশ কমানোয় সে চিন্তা থেকে সরে এসেছেন। কেননা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোয় তার লভ্যাংশ কমে যাবে। এতে বিপাকে পড়তে হবে তাকে সংসারের ব্যয় মেটাতে। কেবল সিরাজুল ইসলাম নয়, তার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সব বিনিয়োগকারীই পিছু হটছেন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে। চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য সব জায়গা সঙ্কুচিত হওয়ায়।

গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কথা জানান। তিনি জানান, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ কমানো হয়েছে। এতদিন এ সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থাকলেও এখন এর হার নেমে এসেছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে। এ ছাড়া পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রেও প্রায় একই হারে সুদ কমানো হয়েছে। তবে আগের বিনিয়োগকারীরা পূর্বের সুদ হারেই লভ্যাংশ পাবেন। নতুন ধার্যকৃত সুদ হার বাস্তবায়ন হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।

এর আগে ব্যাংক আমানতের সুদের হারও কমানো হয়। স্থায়ী আমানতে সুদ হার ০.৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের বিপরীতে নতুন নির্ধারিত এ সুদ হার কার্যকর হয়েছে গত মার্চ থেকে। আর শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। কিন্তু এখানেও সুদ হার কমানোয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। এদিকে পেনশনের সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র ছাড়া বাজারে থাকা সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উেস কর নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সুদের অর্থ তুলতে গেলে ১০ শতাংশ হারে আয়কর কাটা হচ্ছে। সুদের হার কমানোর পাশাপাশি উেস কর কেটে নেওয়ার বিষয়টি মধ্যবিত্তের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাই নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি।

সরকারি এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমি মনে করি এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এর ফলে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কেননা তারা সীমিত আয়ের লোক। একইসঙ্গে এখানে নির্দিষ্টভাবে ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করার সুযোগ নেই। তাই এখানে বড় বিনিয়োগকারীরা আসছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সুদের হার কমাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বিতরণ কমিয়ে আদায়ের হার বাড়ালে ব্যাংকের সুদের হার এমনিতেই কমে যাবে। এভাবে সুদের হার কমানো কোনো যুক্তি হতে পারে না।

সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ৯ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আট মাসেই তা হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এজন্য ভবিষ্যত্ ঋণের বোঝা কমাতে পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের সুদ হার দুই শতাংশ করে কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ২৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আর এতেই রাশ টানার উদ্যোগ নিল সরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসানের বিষয়টির দিকে তাকানো হয়নি।

জানা যায়, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদ বা মুনাফা ছিল ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ সুদ দেওয়া হতো। আর তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় ও ব্যাংক মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ২৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের আসল-সুদ বাবদ ৮ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। ফলে সঞ্চয়কারীদের নিট বিনিয়োগ অর্থাত্ সরকারের এ খাতে ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন সকালের খবরকে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোয় সবচেয়ে বেশি সঙ্কট দেখা দেবে এ খাতে নতুন বিনিয়োগে। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকদেরও বিনিয়োগের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে। যদিও আগে ৯-১০ শতাংশ হারে সুদের লভ্যাংশ নিয়ে অভ্যস্ত ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ১৩ শতাংশের ওপরে পেয়ে আসছেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক বিনিয়োগ করেছেন। হঠাত্ করেই সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ চরমভাবে কমে যাবে।