Dr Khondaker Golam Moazzem on factors for unattained revenue target

Published in The Daily Ittefaq on Saturday, 5 July 2014.

হ্রাস করা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর

রিয়াদ হোসেন

রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি আঁচ করে অর্থমন্ত্রী গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা করেছিলেন। কিন্তু অর্থবছর শেষে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, এই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আদায়ে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরের বেশকিছু সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি রাজস্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্তারা।

সমপ্রতি রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। বৈঠকে রাজস্ব কম আদায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের প্রতি। বৈঠকে কমিশনাররা জানান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের শত শত কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। কেবল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছেই এনবিআরের পাওনা প্রায় ৭শ’ কেটি টাকা। তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বকেয়া পরিশোধ করছে না। বকেয়া আদায়ের উপায় ঠিক করতে তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, এসব বকেয়া অর্থ পাওয়া গেলে চূড়ান্ত হিসাবে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর রাজস্বের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চূড়ান্ত হিসাবেও রাজস্বের ঘাটতি থেকেই যাবে। তিন হাজার কোটি টাকার ঘাটতি পূরণ সহজসাধ্য বিষয় নয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগও (সিপিডি) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। সিপিডি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, কমিয়ে আনা লক্ষ্যমাত্রা থেকে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হতে পারে। রাজস্ব নিয়ে এনবিআরের প্রাথমিক পরিসংখ্যান সিপিডি’র মতামতের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করছেন, বিগত অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি অন্যান্য কারণও রাজস্ব কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্বের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে-এটা ঠিক কিন্তু এর পাশাপাশি আমদানি কমে যাওয়া, বিনিয়োগ ও উত্পাদন কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার শ্লথ গতি রাজস্ব কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আদায় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এনবিআরের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের (২০১২-১৩) তুলনায় আদায় বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশের কম। অথচ চলতি অর্থবছরে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, চলতি অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। অন্যদিকে উত্পাদন ও অভ্যন্তরীণ চাহিদায় গতি আনা না গেলে চলতি অর্থবছরের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও দূরূহ হবে।