Dr Khondaker Golam Moazzem on US GSP

Published in Samakal on Thursday, 9 July 2015.

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাপে পড়বে বাংলাদেশি পণ্য

আবু হেনা মুহিব

স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল ১২৭ দেশের জন্য সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি কর্মসূচি নবায়ন করা হয়েছে। আগামী মাস থেকে এসব দেশ থেকে পণ্য নিতে মার্কিন আমদানিকারকরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে আফ্রিকার দেশগুলোকে বিশেষ আইনের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা আরও ১০ বছর বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়বে।

গত দু’বছর যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি কর্মসূচি কার্যকর ছিল না। বাংলাদেশসহ সব দেশের পণ্য আমদানিতে শুল্ক দিতে হয়েছে মার্কিন আমদানিকারকদের। এখন অন্য দেশগুলো জিএসপির আওতায় রফতানি করবে। গত দু’বছরে পরিশোধিত শুল্কও ফেরত পাবেন মার্কিন আমদানিকারকরা। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫৫৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করে ওবামা প্রশাসন। পরের মাসে জিএসপি কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হয়। এ কর্মসূচি নবায়ন করতে দুই বছর সময় লাগল। জিএসপি নবায়নের সময় বাংলাদেশের স্থগিত থাকা সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আর তা হলো না।

বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, মার্কিন জিএসপি নবায়ন হয়েছে বলে তারা শুনেছেন। বাংলাদেশেরও জিএসপি ফেরত পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গত ডিসেম্বরে জিএসপি পর্যালোচনার পর এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কার্যত নতুন কোনো তৎপরতা নেই। ইউএসটিআরের পক্ষ থেকেও আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আগামী শুনানি কবে হবে এ বিষয়ে নিশ্চুপ রয়েছ ইউএসটিআর। তিনি বলেন, জিএসপি নবায়নের সময় বাংলাদেশের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করা বৈষম্যমূলক আচরণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তির (টিকফা) আগামী বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

আফ্রিকার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে আলাদা অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা পাচ্ছে। বাণিজ্য উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে এসব দেশকে রক্ষায় ‘আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট’ (আগোয়া) নামে আইন করে ক্লিনটন প্রশাসন। ২০০০ সালে ২ অক্টোবর কার্যকর হওয়া ১৫ বছর মেয়াদি ওই আইন এ বছর শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে।

আগোয়াভুক্ত দেশগুলোর শুল্কমুক্ত সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে বাংলাদেশের রফতানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা অনুমান করা যায় জার্মানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জির এক জরিপ প্রতিবেদনে। গত মে মাসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী পাঁচ বছরে সাব সাহারান দেশগুলো পোশাক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ২০২০ সালের মধ্যে আফ্রিকা থেকে আমদানি বর্তমানের ১০ গুণ করতে চায় পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো। ২০৩৫ সালের মধ্যে আফ্রিকার সাব-সাহারান দেশগুলো পোশাক রফতানিতে এ খাতের এক নম্বর রফতানিকারক চীনের সমক্ষতা অর্জন করবে।

বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এতগুলো দেশ একসঙ্গে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে বাংলাদেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। অনেক দেশই কম-বেশি পোশাক রফতানি করে এখন। অন্য দেশগুলোর জিএসপি নবায়নের পর বাংলাদেশের এ সুবিধা পুনরুদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে জোর লবিং প্রয়োজন। পাশাপাশি তৈরি পোশাক যাতে জিএসপির আওতায় রাখে সে বিষয়েও সরকারের ভূমিকা জোরালো হতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, ‘খুব বেশি সমস্যা হবে না।’ কারণ, জিএসপি পাওয়া দেশগুলোর রফতানি পণ্য আর বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের মধ্যে মিল কম। অনেক দেশেরই রফতানি তালিকায় তৈরি পোশাক নেই। তবে স্থগিত হওয়ার আগে যে সব পণ্য মার্কিন জিএসপি সুবিধা পেত, সে সব পণ্য কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে জিএসপি স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে প্লাস্টিক সামগ্রী, সিরামিক, চা, ফার্নিচার, সবজি, তামাক জাতীয় পণ্য, খেলার সরঞ্জাম, রান্নাঘরের সামগ্রী, গলফ সামগ্রী, চশমা, লবণ, পাথর, সিমেন্ট, জাহাজসহ রফতানি তালিকার ছোটখাটো আরও কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেত। এসব পণ্য রফতানিতে মিশ্র প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কোনোটির বেড়েছে, কমেছে কোনোটির। সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি কিছুটা বেড়েছে।

প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির পরিচালক ইউসুফ আশরাফ সমকালকে বলেন, জিএসপি নবায়নের ফলে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়ল। গত দুই বছর কোনো দেশের জন্য মার্কিন জিএসপি ছিল না। এতে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত থাকলেও ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা ছিল। এখন জিএসপি নবায়ন করায় যেখানে অন্য দেশ শূন্য শুল্ক সুবিধা পাবে সেখানে বাংলাদেশকে গুনতে হবে ১৫ শতাংশ।

দেশের পোশাকের মোট রফতানি আয়ের ২০ শতাংশের বেশি আয় আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটেক্স) তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে পোশাক রফতানিতে প্রতিযোগীদের কাছে ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বরে তৃতীয় অবস্থান হারিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার কাছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান এখন ষষ্ঠ। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মেক্সিকো রয়েছে বাংলাদেশের আগে।