Professor Mustafizur Rahman on Bangladesh’s middle income status

Published in Prothom Alo on Thursday, 2 July 2015.

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ

শওকত হোসেন

নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায়। বিশ্বব্যাংক গতকাল বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করেছে।

বিশ্বব্যাংক মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। একটি হচ্ছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত হবে।

প্রতিবছর ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় অনুসারে দেশগুলোকে চারটি আয় গ্রুপে ভাগ করে। যাদের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলার বা তার নিচে, তাদের বলা হয় নিম্ন আয়ের দেশ। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এ তালিকাতেই ছিল।

যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি এটি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি বড় অর্জন ও মাইলফলকও বটে। এটির মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব যেমন রয়েছে, তেমনি বাস্তবেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়টি হয়েছে। সেসঙ্গে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জও।’

নির্ধারণের পদ্ধতি: মূলত ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে শুরু করে যেসব দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার, তারা মধ্যম আয়ের দেশের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আবার আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে শুরু করে ৪ হাজার ১২৫ পর্যন্ত হলে তা হবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং আয় ৪ হাজার ১২৬ ডলার থেকে শুরু করে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার হলে দেশগুলোকে বলা হয় উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। এর চেয়ে বেশি মাথাপিছু জাতীয় আয় হলে সেই দেশগুলোকে বলা হয় উচ্চ আয়ের দেশ।

বিশ্বব্যাংক ‘এটলাস মেথড’ নামের বিশেষ এক পদ্ধতিতে মাথাপিছু জাতীয় আয় পরিমাপ করে থাকে। একটি দেশের স্থানীয় মুদ্রায় মোট জাতীয় আয়কে (জিএনআই) মার্কিন ডলারে রূপান্তরিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে তিন বছরের গড় বিনিময় হারকে সমন্বয় করা হয়, যাতে করে আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের ওঠা-নামা সমন্বয় করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার। তবে বিশ্বব্যাংকের পদ্ধতি অনুযায়ী তা এখন ১ হাজার ৪৫ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণেই নতুন তালিকায় মধ্যম আয়ের দেশ হতে পেরেছে বাংলাদেশ। সরকারের ১০ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার কথা বলা আছে। এর আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হলো বাংলাদেশ।

নতুন তালিকায় চারটি দেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের তালিকায় নতুন করে ঢুকতে পেরেছে। যেমন: বাংলাদেশ, কেনিয়া, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তান। সার্কভুক্ত ভারত ও পাকিস্তান নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে অন্তর্ভুক্ত। সব মিলিয়ে এখন নিম্ন আয়ের দেশ ৩১টি, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ ৫১টি, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ৫৩টি এবং উচ্চ আয়ের দেশ ৮০টি।

সামনে আরও চ্যালেঞ্জ: সামগ্রিক বিষয়ে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন যে অর্জন, তাতে দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা এবং অবস্থান আরও সুসংহত হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ঋণবাজার থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি হবে। বাংলাদেশকে এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে গণ্য করা হবে। অন্য দিক থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শর্তও কিছুটা কঠিন হতে পারে। তাই এ জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি রাখা দরকার।

নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে চলে গেলেও বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকাতেই থাকবে। ফলে এলডিসির সুবিধাগুলোও বহাল থাকবে। এ তালিকা থেকে বেরোতে হলে তিনটি সূচক অতিক্রম করতে হবে। যেমন: অর্থনীতির নাজুকতার সূচক, মানব উন্নয়ন সূচক ও মাথাপিছু আয়ের সূচক। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এর মধ্যে প্রথম সূচকটি আমরা অতিক্রম করলেও অন্য দুই সূচক অতিক্রম করতে পারিনি।’

মধ্যম আয়ের ফাঁদ: আয় বাড়লেই তাকে এখন আর উন্নয়ন বলা হয় না। ফলে কেবল আয় বাড়িয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পর ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’-এ পড়ে আছে অসংখ্য দেশ। এর মধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো আটকে আছে বহুদিন ধরে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এমনকি চীন ও রাশিয়াও আটকে আছে মধ্যম আয়ের ফাঁদে। মূলত যারা কেবল আয় বাড়াতেই মনোযোগ দিয়েছে বেশি, অবকাঠামো, শিক্ষাসহ মানবসম্পদ উন্নয়ন, রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামুখী থাকার দিকে নজর দেয়নি, তারাই আটকে আছে এই ফাঁদে।