Professor Mustafizur Rahman on cattle trade with India

“ভারত ছাড়া অন্য দেশ যেমন মিয়ানমার বা মালয়েশিয়াতে খেকে গরু আমদানি করা যেতে পারে। গরু যে আনতে হবে এমন কোন কথা নেই মাংস আনা যেতে পারে। কারণ সব চাহিদা মেটাতে দেশের খামারিদের ওপর এখনি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করা সম্ভব হবে না” বলছিলেন মি. রহমান।

Published on BBC Bangla on Sunday, 20 September 2015.

গরু ব্যবসা অবৈধ হলেও রাজস্ব পায় বাংলাদেশ সরকার

ফারহানা পারভীন

বিবিসি বাংলা, ঢাকা

বাংলাদেশের যেসব সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতের গরু আসে তার মধ্যে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত অন্যতম। আমি গিয়েছিলাম বেনাপোলের পুটখালি এলাকার এমন একটি স্থানে, যেটি পাঁচ একর জমির উপর-স্থানীয় ভাবে যাকে খাটাল বলা হয়।

সেখানে কয়েকশ বাঁশের ছোট ছোট ঘর উপরে টিনের ছাউনি। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গরু আনার পর কিছু সময়ের জন্য এখানে রাখা হয়।

যাতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরা দেখে-দাম করে কিনতে পারেন। কিন্তু গোটা এলাকা ঘুরে এবং এখানকার মানুষের সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে গত দুই এক মাসের মধ্যে এখানে কোন গরুর বিচরণ হয় নি।

পাশে গোয়াল ঘর সেটাও পরিত্যক্ত। এই খাটালের সামনে একটি খাবারের হোটেল। অলস সময় কাটাচ্ছেন কয়েকজন গরুর ব্যাপারী।

দশ দিন ধরে তারা এই পুটখালিতে রয়েছেন কোন গরু এই সীমান্ত পারি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে কিনা তার আশায়। লিয়াকত আলী, এখান থেকে গরু কিনে বিক্রি করেন চট্টগ্রামের বাজারে।

তিনি বলছিলেন “গত প্রায় একবছর ধরে লসের মধ্যে আছি, মহাজনের টাকা দিয়ে ব্যবসা করছি। লোকে বলে আজকালের মধ্যে গরু আসবে কিন্তু আসে না”।

যশোরের কোল ঘেঁষে ইছামতী নদী। এই নদী পার হয়ে গরু আসে ভারত থেকে। সম্প্রতি সেই নদীতে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের টহল বেড়েছে আরো বেশি। নদীতে নামানো হয়েছে স্পিডবোট। এ

খানকার যেসব ব্যবসায়ি সীমান্ত দিয়ে সরাসরি গরু নিয়ে আসেন তারা বলছেন পুটখালিতে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যন্ত গরু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিয়ে আসতেন। কিন্তু গত প্রায় নয় মাসে এই সংখ্যা কমেছে কয়েক গুন।

হাসান আলী পুটখালির একজন বড় ব্যবসায়ী বলছিলেন “এই খাটাল দেখছেন এখানে ভরা থাকতো গরু। এই পথ দিয়ে অন্তত দুই হাজার গরু আসতো দিনে, এখন একদম বন্ধ।

মাঝে মাঝে চুরিচামারি করে অন্য সীমান্ত দিয়ে আনা হচ্ছে,সপ্তাহে এক-দেড়শো হয় না। তারপর খবর পেয়ে যেতে যেতে কাড়াকাড়ি করে শেষ হয়ে যাচ্ছে”।

বাংলাদেশের সরকারি হিসেব মতে প্রতিবছর গড়ে ২০ লক্ষ গরু ভারত থেকে আনা হয়। সারা বছরে প্রয়োজন পরে ৪০ লক্ষের মত গরুর।

অর্থাৎ মাসে প্রায় ২ লক্ষ করে গরু এসেছে।বাংলাদেশ- ভারত গরু বানিজ্য নিয়ে গবেষণা করেছে বাংলাদেশের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ।

প্রতিষ্ঠানটির একজন গবেষক ও নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই গরু বাণিজ্য সমসময় হয়েছে অবৈধপথে।

তবে বাংলাদেশ তাদের মত করে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ভারত কখনো করেনি।

মি. রহমান বলছিলেন “ ভারত থেকে সীমান্ত পারি দেওয়ার পর বাংলাদেশে ঢুকলেই গরু গুলোকে মালিক বিহীন ঘোষণা করা হত।

তাদেরকে বাংলাদেশের খাটালে রাখা হত। গরু প্রতি ৫০০ টাকা দিয়ে লাইসেন্সের মত দেওয়া হত তারপর সেগুলো বাংলাদেশে আসতো। আর এখান থেকে ১০০ কোটি টাকার মত সরকারের আদায় হয়। তবে এই ব্যবস্থা ভারত কখনো স্বীকৃতি দেয়নি”। গত ফেব্রয়ারী মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিএসএফকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে , যে কোনও মূল্যে সীমান্তে গরু পাচার ঠেকাতে হবে।

এর ফলশ্রুতিতেই অল্প কয়েকটি- সীমান্ত ছাড়া অন্য সব সীমান্ত দিয়ে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

আর তার প্রভাব পরে বেনাপোলের পুটখালি সীমান্তের মত প্রচলিত বড় সীমান্ত পথেও।

তবে এখান থেকে ১২ মাইল দুরে এ এলাকার সবচেয়ে বড় হাট বাঘাছড়া সাতমাইল হাট। সপ্তাহে শনি আর মঙ্গলবার বসে সেই হাট। সাতমাইল হাটে দেখলে মনে হবে হাট ভর্তি গরু। কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ী বলছেন অন্য সময়ের তুলনায় অন্তত ২০ হাজার গরু কম আছে এখন। হাটের তত্ত্বধানা থাকা আসাদুজ্জামান নয়ন বলছিলেন “ সপ্তাহে দুইদিন হাট হয়। প্রতি হাটে ২০ থেকে ২৫ হাজার গরু উঠে। কিন্তু এখন আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন সেটা, দুই থেকে আড়াই হাজার গরু আছে। এখানকার ৮০ ভাগ গরুক”।

হাটে গরু কমতি থাকায় গরু ব্যাবসায়িরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে দুরকমের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেখানে। প্রথমটা হল- দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যে ব্যাপারীরা এসেছেন তারা এত বেশি দামে কিনতে পারছেন না আর ২য়টি -কিনলেও ভোক্তা পর্যায়ে কেজি প্রতি দাম তারা অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ি সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলছিলেন আগে গরুর মাংস প্রতি কেজি পাওয়া যেত ২৭০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। আর এখন সেই দাম কেজি প্রতি ৩৮০ থেকে এলাকা ভেদে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

মি. রবিউল জানাচ্ছিলে ”আগে এক মণ ওজনের গরু কিনেছি সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকায়, এখন সেটা ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। এরপর রাস্তার খরচ আছে। আর একটা গরু জবাই করার পর দিনের মধ্যে সেটা বিক্রি করে ফেলতে হয়। দামও বেশি পরছে ক্রেতার কাছে”।

এদিকে গরুর মাংসের দামের আকাশছোঁয়া দাম হওয়াতে ক্রেতার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকার গাবতলির পশুর হাটের পাশে একটি মাংসের দোকানে..কথা বলছি এখানে মাংস কিনতে আসা দুইজন ক্রেতার সাথে।তারা বলছিলেন “ ছয়মাস আগেও মাংস কিনেছি পৌনে তিনশ টাকায় এখন সেটা চারশো টাকা হয়ে গেছে, আগে যেখানে চার কেজি কিনতাম এখন দুই কেজি কিনছি, ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে”

তবে শুধু যে মাংসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটাই নয়, বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের ওপর একটি ক্ষতিকর প্রভাব পরতে পারে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিপিডির গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান বলছিলেন কোরবানি ঈদে চামড়ার বাজারে একটি নেতিবাচক প্রভাব পরবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

তারপরেও ভারতের গরুর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিকল্প পথ খোজার কথা বলছেন তিনি।

“ভারত ছাড়া অন্য দেশ যেমন মিয়ানমার বা মালয়েশিয়াতে খেকে গরু আমদানি করা যেতে পারে। গরু যে আনতে হবে এমন কোন কথা নেই মাংস আনা যেতে পারে। কারণ সব চাহিদা মেটাতে দেশের খামারিদের ওপর এখনি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করা সম্ভব হবে না” বলছিলেন মি. রহমান। এদিকে আর কয়েক দিন পরেই কোরবানির ঈদ। বাংলাদেশের পানিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে শুধু কোরবানির ঈদেই ২৫ লক্ষ পশু জবাই হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও আস্বস্ত করা হচ্ছে চাহিদা মোতাবেক বাজারে গরু থাকার ব্যবস্থা করবেন

তারা। কিন্তু গরু বাণিজ্যের ওপর যারা নজর রাখেন তারা বলছেন ভারত থেকে গরু আসা কমে গেলে মধ্যমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদি তেমন সমস্যা না হলেও এ বছর যে অসুবিধাটা টের পাওয়া যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।