Professor Mustafizur Rahman on investment

বিভিন্ন রিপোর্টে আসছে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। কারণ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি একেবারে কম। এর অর্থ হল বিনিয়োগ হচ্ছে না।

Published in Jugantor on Wednesday, 4 November 2015.

বিনিয়োগ নিবন্ধনে চরম মন্দাভাব

মনির হোসেন

দেশে বিনিয়োগে চরম মন্দা চলছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে বিনিয়োগ নিবন্ধন ৫৬ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে দেশী ও বিদেশী মিলে ১৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। আগের তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুনে এর পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগ ১৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা কমেছে। ফলে এ খাতে প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান কমে আসছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন ভুল নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যাবে না।

জানা গেছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৩৩২টি কোম্পানি ১৩ হাজার ৭১৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে। কিন্তু এপ্রিল থেকে জুনে ৩৬৪টি কোম্পানি ৩১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছিল। এ হিসাবে বিনিয়োগ কমেছে ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ৫৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিনিয়োগ কমেছে ২৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।

আলোচ্য তিন মাসে ১৬টি বিদেশী এবং ২৪টি যৌথ মালিকানার কোম্পানি মিলে মোট ৪০টি কোম্পানি ৮৪৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে। আগের তিন মাসে এই নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে বিদেশী বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ৫০৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ৩৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আলোচ্য সময়ে সম্মিলিতভাবে মোট বিনিয়োগের ৩০ দশমিক ২৪ শতাংশ ছিল বস্ত্র খাতে। এছাড়া সেবা খাতে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ, রসায়ন খাতে ১৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং অন্য শিল্প খাতে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের রিপোর্টে বাংলাদেশে বিনিয়োগের নেতিবাচক অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ জন্য সংস্থাটি বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা হল দুর্নীতি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক নেতা এবং আমলাদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল। ঘুষ ছাড়া কর দেয়া যায় না। ব্যবসার ক্ষেত্রে পুঁজির সহজলভ্যতা নেই। এক্ষেত্রে ঋণের উচ্চ সুদ এবং বিভিন্ন বিলের কারণে ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। আর্থিক খাতে সুশাসন নেই ফলে বিনিয়োগও বাড়ছে না। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, অবকাঠামো, আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির দিক থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শীর্ষস্থানীয় ৫৬ জন ব্যবসায়ীর মতামতের ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোট ১৬টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। ৯৬ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করে রাজনৈতিক নেতাদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল।

বাংলাদেশের সমস্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অবকাঠামো। তৃতীয় সমস্যা হল সরকারের অস্থিতিশীলতা। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। পুঁজির সহজলভ্যতা না থাকা। ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমা হলেও এখনও সুদের হার কমছে না। সহজে ঋণও পাওয়া যায় না। সংস্থাটির বিবেচনায় অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে- নীতিনির্ধারণে অস্থিতিশীলতা, প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব, উচ্চ কর হার, করের বিভিন্ন আইনে জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, মূল্যস্ফীতি, নৈতিকতার অভাব, উদ্ভাবনী ক্ষমতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাদ্ধতা এবং জনস্বাস্থ্য। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে ৭ কোটি ২৪ লাখ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫৮০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে দেশে এফডিআই এসেছে ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে যা ছিল ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বিনিয়োগের নেতিবাচক অবস্থার কথা বলে আসছি। বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগ বাড়াতে সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ কমার মূল কারণ হল বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। তার মতে, বিনিয়োগ বাড়াতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা জরুরি। এছাড়া বাংলাদেশের নিয়মিত কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সমস্যা হল দুর্নীতি। আর দুর্নীতি দমনে গত কয়েক বছরে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন রিপোর্টে আসছে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। কারণ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি একেবারে কম। এর অর্থ হল বিনিয়োগ হচ্ছে না।