Professor Mustafizur Rahman on unutilised ODA

Published in Prothom Alo on Tuesday, 4 November 2014.

মন্ত্রিসভার বৈঠকে পর্যালোচনা
অব্যবহৃত সাহায্য এখন ১৯৩০ কোটি ডলার

বিশেষ প্রতিনিধি

বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে না পারায় পাইপলাইনে অর্থের স্তূপ জমেছে। এর পরিমাণ এক হাজার ৯৩০ কোটি ডলার, যা টাকার অঙ্কে প্রায় এক লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কখনোই এত বিপুল পরিমাণ সাহায্য পাইপলাইনে আটকা পড়েনি।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে গতকাল সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এটা খুব খারাপ ও অপ্রত্যাশিত। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরনির্ভরতা কমিয়ে স্বাবলম্বী হলে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর এত নির্ভর করতে হবে না। সরকারের লক্ষ্য সেদিকেই যাওয়া।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ গতকাল পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, পাঁচটি কারণে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে: জনবল নিয়োগে বিলম্ব ও ভূমি গ্রহণে জটিলতা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন ও অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা, কেনাকাটায় বিলম্ব এবং দরপত্র তৈরি ও মূল্যায়ন শেষ করে কার্যাদেশ দেওয়া ও অনেক ক্ষেত্রে পুনরায় দরপত্র আহ্বান। ভূমি প্রসঙ্গে বলা হয়, একদিকে জমি কম ও মূল্যবান, অন্যদিকে তা খণ্ডিত। তাই প্রকল্পের জন্য জমি পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কর।

উন্নয়ন সহযোগীদের কারণেও প্রকল্পের কাজ দেরি হচ্ছে বলে মত দিয়ে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, তাদের অনাপত্তি পেতে অনেক ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়। বিশেষ করে বড় প্রকল্পের অনাপত্তি দিতে দাতাদের স্থানীয় কার্যালয়গুলো কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে। এ ছাড়া পরামর্শক নিয়োগে দুই পক্ষের ঠেলাঠেলির কারণেও প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হয়।

প্রতিবছর উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির মাত্র ১৮ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়। আগামী অর্থবছরে এই বাস্তবায়নের হার ২২ শতাংশে এবং পর্যায়ক্রমে তা ২৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইআরডি। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়ে ছয় বছর সময় লাগে। এটি কীভাবে চার বছরে নামিয়ে আনা যায়, সে লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথাও বৈঠকে বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মাদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমাদের বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের পরিস্থিতি ভালো। তবে এটা আরও ভালো করতে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন। আমরা পাইপলাইনের অব্যয়িত অর্থ উন্নয়নের জন্য খরচ করতে চাই।’

বৈঠকে বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশি মঞ্জুরির প্রতিশ্রুতি ও অবমুক্তির বিষয় তুলে ধরে বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দাতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আট হাজার ৬৮৯ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে ছয় হাজার ৭৫৯ কোটি মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিজেদের সম্পদ আহরণ বাড়িয়ে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা আছে। তার পরও বৈদেশিক সাহায্যের দরকার আছে। এখন পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ আসে দাতাদের কাছ থেকে। তাই অবকাঠামোর উন্নয়নে এই সহায়তার প্রয়োজন এখনো রয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও ফলভোগীরা সময়মতো সুফল পান না বলে মত দেন ওই অর্থনীতিবিদ।

গতকালের বৈঠকে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সভা করার পাশাপাশি প্রকল্পের নজরদারি জোরদার, ক্রয় পরিকল্পনা তৈরি, আগে থেকে দরপত্র তৈরি করে রাখা, উন্নয়ন সহযোগীদের সম্মতি বা অনুমোদন দ্রুত নেওয়া এবং দাতাদের স্থানীয় কার্যালয়গুলোকে ক্ষমতা দেওয়া।

বৈঠক সূত্র জানায়, এ-সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে একজন মন্ত্রী জানান, এক-এগারোর প্রভাব এখনো প্রশাসনের ওপর রয়েছে। নিয়মের বাইরে এবং লিখিত নির্দেশ ছাড়া কেউ কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চায় না। ওই মন্ত্রী আরও বলেন, প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাইলে ফাইলের টেবিল ভ্রমণ কমাতে হবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয় বলে তিনি মত দেন।