CPD study on LDC cited

Published in Kaler Kantho on Thursday, 19 March 2015.

রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনিয়োগে হচ্ছে সার্বভৌম তহবিল

শেখ শাফায়াত হোসেন

প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বিনিয়োগের লক্ষ্যে ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ধরনের তহবিল মূলত দেশের বাইরে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে সেই অর্থ দিয়ে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়।

তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীকে সভাপতি করে একটি কমিটিও করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ৯ মার্চ এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিষয়টি কমিটির সদস্যদের জানানো হয়েছে। ওই কমিটি তহবিল গঠনের সম্ভাব্যতা, তহবিলের কার্যপ্রণালি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এর উত্তম ব্যবস্থাপনার নীতিগত ও কারিগরি দিকগুলো পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই তহবিল গঠন ও পরিচালিত হবে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ওই প্রতিবেদন জমা দিতে হবে কমিটিকে।

জানা গেছে, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ তহবিল। কোনো দেশ বা জাতির বৈদেশিক লেনদেনে আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হলে উদ্বৃত্ত রিজার্ভ দিয়ে এ ধরনের তহবিল গঠন করা হয়। সার্বভৌম সম্পদ তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকও গঠন করতে পারে এবং এ ধরনের তহবিলের সামষ্টিক অর্থনীতি বা বাজেটীয় গুরুত্ব থাকে।

এই তহবিল থেকে স্টক, বন্ড, ভূমি, মূল্যবান ধাতুর মতো প্রকৃত এবং আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। বেসরকারি পুঁজি তহবিল অথবা হেডজ ফান্ডের মতো বিকল্প বিনিয়োগেও এই তহবিল ব্যবহার হয়। এই তহবিল বিনিয়োগ হয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।

তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকেই প্রথমে এ ধরনের তহবিলের আবির্ভাব হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের তহবিল গঠন করা সম্ভব হলে সেটি মূলত অবকাঠামো খাতে, বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও সার্বভৌম সম্পদ তহবিল কমিটির সভাপতি এস কে সুর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তহবিল গঠনের জন্য এখন পর্যন্ত কেবল একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি শিগগিরই একটি বৈঠকে বসবে। তার পরই জানা যাবে এই তহবিল কী কাজে ব্যবহার হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেসব দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেশি সেসব দেশ তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত রিজার্ভ অন্য দেশের কাছে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে যাতে সেখান থেকে কিছু আয় হয়। চীন, কুয়েত, কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন তহবিল আছে।’

জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ থেকে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিকে তহবিল গঠনের সম্ভাব্যতা, তহবিলের কার্যপ্রণালি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এর উত্তম ব্যবস্থাপনা করার ক্ষেত্রে আইন, নীতি ও কারিগরি দিকগুলো পর্যালোচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ আর এম নজমুস্ ছাকিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, যুগ্ম সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহসান উল্লাহ, প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল, অর্থ বিভাগের উপসচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন, সিনিয়র সহকারী সচিব আবু দাইয়ান মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক বিষ্ণুপদ সাহা এবং উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম।

এর আগে ২০১২ সালে সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার একটি উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। মূলত পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ওই বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু আজও পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘আমরা আজকেও (বুধবার) এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রাথমিক ওই আলোচনায় প্রথমে অংশগ্রহণে আগ্রহী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তাদের বক্তব্য শোনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর কমিটি একটি বৈঠক করে বাকি সিদ্ধান্ত নেবে।

জানা গেছে, ২০১১ সালে স্বল্পোন্নত ৪৮টি দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা আরো বাড়ানোর পাশাপাশি একটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়েছিল জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড)। এ ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা ভালো বলে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখন পর্যন্ত এ ধরনের তহবিল গঠন করতে পারেনি। তবে বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশে এ ধরনের তহবিল রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে চীনের তহবিলই সবচেয়ে বড়। যার আকার প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তহবিল আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের, যার পরিমাণ এক লাখ ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নরওয়ে, সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, হংকং, কানাডা, কাতার, রাশিয়া, কাজাখস্তান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি। বিশ্বব্যাপী সার্বভৌম সম্পদ তহবিল পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে; যার নাম সভরেন ওয়েলথ সেন্টার (এসডাব্লিউসি)।