সমঝোতা, সহনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন – দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Published in Bangladesh Pratidin on 26 March 2014.

df-interview-march-26-2014

স্বপ্নের বাংলাদেশ

সমতার জন্য প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

রুহুল আমিন রাসেল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতা বলতে আমরা মুক্তি বুঝি। এই মুক্তির নাম দিয়েছি মুক্তির সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ। এবারের স্বাধীনতা দিবসে সবার আর্থ-সামাজিক মুক্তি চাই। এই মুক্তি আনতে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই। এই অধিকার কেবলমাত্র ভোটাধিকার নয়। অধিকার ও সুযোগের সমতা তৈরি করতে পারে এমন প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই। এ জন্য এই সমাজ ব্যবস্থা বদলাতে হবে বলে মনে করেন দেশ বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে সর্বজন শ্রদ্ধেয় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবক্ষয় উত্তোরণের পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে সার্বজনীন করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুধু ভর্তি নয়, সেখানে পড়তে যাওয়া শিশুরা যেন ঝরে না পড়ে সেজন্যে গুরুত্ব দিতে হবে। বেকারত্ব দূর করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অবক্ষয়ের জন্য দেশের জাতীয় নেতৃত্বকে দায়ী করে এই প্রগতিশীল লেখক বলেন, আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব পুঁজিবাদে বিশ্বাসী। এ কারণে এ দেশে সামাজিক বিপ্লব হয়নি। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তিন ধারায় চলে গেছে। সমাজে যে শ্রেণী বিভাজন রয়েছে, তার পরিচয় বহন করে এই শিক্ষাব্যবস্থা। আসলে এভাবেই দেশের মানুষকে বিভক্ত করা হয়েছে।

চিন্তাশীল গুণীজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, জাতীয় নেতৃত্ব পুঁজিবাদী সমাজে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে তারা প্রাথমিক শিক্ষার দিকে নজর দিচ্ছে না। বরং তারা মাদ্রাসা শিক্ষাকে উৎসাহিত করছে। দেশে প্রতি দুজন সাধারণ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা মাদ্রাসা শিক্ষায় যাচ্ছেন, তারা সেখানে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন। আর সেই হতাশা থেকেই তারা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন।


সমঝোতা, সহনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন,রাজনৈতিক সমঝোতা আর সহনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন। বাড়াতে হবে সংহতিবোধ, ঐক্যচিন্তা। স্বাধীনতা দিবসে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এ কথা বলেন। খ্যাতিমান এ অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করে বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে এমন অর্থনীতি চাই, যেখানে কেউ না খেয়ে রাতে ঘুমাতে যাব না। যেখানে সব যুবকের কর্মসংস্থান হবে। যেখানে সব যুবকের চাকরি হবে।’ তিনি বলেন, ‘এমন স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো শিশু জন্মগ্রহণের সময় মারা যাবে না। সন্তান প্রসবকালে কোনো মা মারা যাবেন না। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। বিপুল সংখ্যক মেয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বেরুবে। নারীর উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত হবে।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘প্রগতিমুখী রাজনৈতিক চর্চা বাড়াতে হবে। দেশে জনমুখী আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাও জরুরি।’


তাঁবেদারি-মোসাহেবি মুক্ত প্রশাসন চাই: ড. সা’দত হুসাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীন বাংলাদেশের সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন দলবাজি, তালাফি-তদবির, তাঁবেদারি, মোসাহেবি থেকে মুক্ত থাকবে এমন স্বপ্ন দেখেন সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন। তবে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এ স্বপ্ন পূরণের আশা খুবই সীমিত বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন সাবেক এই সফল সরকারি কর্মকর্তা। কেমন প্রশাসন চান- স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জানতে চাইলে নিজের এ স্বপ্ন ও আশঙ্কার কথা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান মুক্তিযোদ্ধা ড. সা’দত।

১৯৭১ সালের ২২ মে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে সীমান্ত অতিক্রমের আগে আশি মাইল হেঁটে অতিক্রম করেছেন সা’দত হুসাইন। বললেন, সেই দিনগুলোয় স্বাধীনতাই একমাত্র কাম্য ছিল। ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে ভাবনা ছিল না। কিন্তু স্বাধীনতার পর পরই প্রশাসন নিয়ে ভাবনা শুরু হয়। কিছু পদেক্ষপও নেওয়া হয়। কিন্তু আমি মনে করি ‘৭২-এর পর কোনো সরকারই প্রশাসনকে নিজের মতো চলতে দেয়নি, যে কারণে মেধাশূন্য প্রশাসন আজ একটি অতিপরিচিত বাক্য হয়ে সামনে চলে এসেছে। তিনি বলেন, জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত অনেক সরকার ও নানাবিধ সরকারব্যবস্থা দেখেছে। পার্লামেন্টারি পদ্ধতির গণতান্ত্রিক সরকার, রাষ্ট্রপতিশাসিত গণতান্ত্রিক সরকার, শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর আওতায় রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় সরকার, শক্তিবলে অধিষ্ঠিত পার্লামেন্ট সমর্থিত রাষ্ট্রপতিশাসিত কর্তৃত্ববাদী সরকার, সামরিক আইনভিত্তিক সামরিক সরকার, গণশক্তিভিত্তিক জাতীয় ঐকমত্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শাসনতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেনা সমর্থিত (নিয়ন্ত্রিত) অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সব শেষে শূন্যগর্ভ আমলাতান্ত্রিক সরকার সবই বাংলাদেশে ছিল।

এতগুলো সরকারের মধ্যে একটি সরকারও তত্ত্বভিত্তিক বা বৈজ্ঞানিক নীতিমালার আলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে নিবিড় অনুসন্ধান চালিয়ে যথোপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে দেশের উচ্চপদগুলো পূরণের ব্যবস্থা করেনি। বরং ক্ষমতাধর ব্যক্তি কিংবা ক্ষমতাচক্র, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, আপনজন, পরিচিতজন, লোকমুখে শোনা এবং পত্রপত্রিকা থেকে নাম জানা ব্যক্তিদের বেশির ভাগ উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করেছে। সাধারণত দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রতারণা ও দলবাজির মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিরা উচ্চপদ দখল করে বসে। নির্বাচন, নিয়োগ পরীক্ষা, পদোন্নতি, সার্চ কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া কিংবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষে থাকা ব্যক্তির একক পছন্দের মাধ্যমে সুউচ্চপদগুলো পূরণ করা হয়। অযোগ্য ব্যক্তিরা নানান অপকৌশল ব্যবহার করে পদ্ধতি-প্রক্রিয়াকে ভেঙে এবং বিকৃত করে ওপরের পদ দখল করছে। দলবাজি, তালাফি-তদবির, তাঁবেদারি-মোসাহেবি এ ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক। ড. সা’দতের মতে, প্রশাসনের উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্ম-অভিজ্ঞতার পূর্ণাঙ্গ তথ্য, তার পিতা-মাতার প্রাসঙ্গিক সাধারণ তথ্য এবং তার নিজের জীবনের সামগ্রিক তথ্যাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পরই নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে নবনিযুক্ত ব্যক্তির আওতাধীন প্রতিষ্ঠান যথার্থই কার্যকর হবে এবং মানুষ সরকার তথা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর শ্রদ্ধাশীল হবে। দেশে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা, সততা ও নৈতিকতার বিকাশ ঘটবে।