Dr Moazzem sees no alternative to attract large private investment to implement budget FY17

Published in The Independent on Thursday, 3 June 2016

নতুন বাজেটে চার চ্যালেঞ্জ

সক্ষমতা, রাজস্ব আহরণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান

আবু সাইম

বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রতি বছর গড়ে ১৩ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য মতে দেশে গত দুই বছরে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ৬ লাখ। আর বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩১ হাজার, যার ৭৪ শতাংশই তরুণ-তরুণী। এই সংখ্যা গত দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাই নতুন বাজেটে এসব বেকারকে কর্মে প্রবেশ করানো সুযোগ সৃষ্টি বা অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতার প্রতিফলন ঘটানো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি অর্থনৈতিক কর্মকা-ে শ্রমশক্তির অধিকতর অংশগ্রহণ। গত ৫ বছরে দেশে প্রকৃত মজুরি বেড়েছে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে কর্মক্ষম জনশক্তির অংশগ্রহণের হার এখনো অনেক কম।

কর্মসংস্থান ছাড়াও নতুন বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা, রাজস্ব আহরণ ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, নতুন অর্থবছরের জন্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। প্রতি বছর টাকার অঙ্কে বাজেট বড় হচ্ছে। কিন্তু বছরের শুরুতে নেয়া সে অঙ্ক মাঝপথে বিয়োগের খাতায় নিতে হচ্ছে। একই অবস্থা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি)। মূল এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা সংশোধিত এডিপির ৭-৮ শতাংশও থাকে অধরা। রাজস্ব আহরণে ভাটার টান থাকে বছরের শুরু থেকেই। এতে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা ও আয়ের রেখা থাকে বিপরীতমুখী। অপর দিকে অনুকূল পরিবেশ থাকলেও বিনিয়োগে আসছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তা, যার ফলশ্রুতিতে থমকে আছে নতুন কর্মসংস্থান। হতাশায় লাখো বেকার। আর সামান্য অজুহাতেই বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। এতে মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা হচ্ছে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও। এরপর ভোক্তাদের ওপর আসছে

নতুন ভ্যাটের খড়গ। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে।

চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তা সংশোধন করে ২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। নতুন বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এদিকে বছরের শুরুতে নেয়া ১ লাখ কোটি টাকার এডিপি শেষ দিকে সাত হাজার কোটি টাকা কাটছাট করে ৯০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার এডিপি নিয়েছে সরকার।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, সক্ষমতার ঘাটতির কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আশানুরূপ বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিশেষ করে বিদেশি সাহায্য ব্যবহারের হার বেশ কম। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনছেন। এজন্য প্রস্তুতিমূলক কাজে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেন তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবিএম মির্জা আজিজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাজেটে যেসব টার্গেট নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রাজস্ব আহরণও বাড়াতে হবে। যা আয়করের মাধ্যমে বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। কারণ পরোক্ষ কর বাড়লে মূল্যস্ফিতি বাড়বে এবং দরিদ্র মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। চতুর্থত, যেসব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে, তা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বাজেটে দিক নির্দেশনা দিতে হবে। আর পঞ্চমত, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে জমির সংকট, অবকাঠামো অপর্যাপ্ত, গ্যাস, বিদ্যুতের সংকট, সার্বিকভাবে সুশাসনের অভাব দূর করতে হবে।

এ বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। কিন্তু মাঝপথে এসে তা কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আর মার্চ পর্যন্ত আদায় ছিল ১ লাখ ০১ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘করনীতিসহ প্রশাসনিক সংস্কার বিবেচনায় নিয়ে তারা এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু সংস্কার আশানুরূপভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না বলে ধারণা করছেন। এ প্রেক্ষাপটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ কমাতে হয়েছে।’ এদিকে আয়ে পিছিয়েপড়া এনবিআরের ওপর আগামী বছরেও এ বছরের চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাক বাড়িয়ে ২ লাখ ০৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের জন্য ইতিবাচক দিক হলো সামষ্টিক স্থিতিশীলতা। তবে চ্যালেঞ্জের দিক হচ্ছে এ স্থিতিশলীতা ব্যবহার করে প্রবৃদ্ধি অর্জন বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ করতে পারনে কি না_ এবং প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে কি না। বাজেট বাস্তবায়নে, পর্যাপ্ত বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তা নির্ভর করে বিনিয়োগ নির্ভার রাজস্ব কাঠামো আছে কি না। আবার আগামী বাজেটের জন্য সরকার রাজস্ব আদায়ে ভ্যাট নির্ভর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এখন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়ার কারণে রাজস্ব আদায় চাপের মুখে পড়বে। এর বিকল্প উপায় নিয়ে সরকার কি চিন্তা-ভাবনা করছে তাও দেখার বিষয়।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের মূলধন মজুদ বাড়াতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বর্তমানে বিনিয়োগ জিডিপির ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু মধ্যমেয়াদে কাঙ্ক্ষিত ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য এ বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ মজুদ বাড়াতে হবে।

বিনিয়োগ পিছিয়ে থাকার কথা মেনে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই_ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ গত কয়েক বছরে জিডিপির ২১-২২ শতাংশে সীমিত রয়েছে অথচ কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে এ হার ২৭ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন।

অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, এ মুহূর্তে অর্থনীতির সমস্যা হচ্ছে প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা। প্রবৃদ্ধিতে গতি আনতে হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। এখানেই বাংলাদেশের অর্থনীতি আটকে আছে। সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে বিনিয়োগকারীরা যেন বিনিয়োগে আসে তার পরিবেশ নিশ্চিত করা। কারণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিতে হবে। সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান বাড়াতে হবে। প্রথমত, দেশের অগ্রাধিকার প্রকল্প (মেগা প্রকল্প) যেগুলো রয়েছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে যথাসময়ে দক্ষতার সঙ্গে শেষ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি বিনিয়োগে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যেমন, ভৌত অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি_ এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। তৃতীয়ত, শিক্ষায় শুধু বরাদ্দ বাড়ালে চলবে না। এটাকে ট্রেড অরিয়েন্টেড করতে হবে। শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি না কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।

এদিকে অপর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। গত বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৬.২ শতাংশে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল। তবে বর্তমানে বিবিএসের তথ্য মতে গত এপ্রিলে দেশের মূল্যস্ফীতির হার তার আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে। এ সময় সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৮ ভাগ। তবে শহরে সাধারণ মূল্যেস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দরপতন বিবেচনায় এ বছর মূল্যস্ফীতি ৫.৮ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।