FY2015 Budget Proposal: Take opinions and recommendations into cognisance – Khondaker Golam Moazzem

Op-ed published in Samakal on Monday, 9 June 2014.

বাজেট প্রস্তাব : ২০১৪-১৫
মতামত ও সুপারিশ আমলে নিন

ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের পর সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং অন্যান্য মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজেটকে বিনিয়োগবান্ধব হিসেবে অভিহিত করেছে। শেয়ারবাজারের জন্য বাজেটে কিছু সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তবে বাজেটের পর প্রথম কর্মদিবসে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জেই সূচক কমেছে। বলা যায়, এই বাজারে অর্থমন্ত্রীর পদক্ষেপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমি আশা করব, গত কয়েক দিনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে বাজেট বিষয়ে যেসব মতামত ও সুপারিশ রাখা হয়েছে এবং আগামীতে রাখা হবে; অর্থমন্ত্রী বাজেট চূড়ান্ত করার আগে সেগুলো বিবেচনায় নেবেন। জাতীয় সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে। দেশের সব রাজনৈতিক দল সংসদে নেই। তাদের মতামতও নানাভাবে প্রকাশিত হবে। অর্থমন্ত্রী উদার মনোভাব নিয়ে চললে বিভিন্ন অংশের অভিমত ধারণ করেই আগামী অর্থবছরের বাজেটটি চূড়ান্ত করা সম্ভব।

প্রস্তাবিত বাজেটে আয় ও ব্যয় এবং দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার প্রাক্কলন রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অনেকে বলছেন, এ লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী। বর্তমান অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি। রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। আবার ব্যয় হয়েছে হিসাবের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় নতুন বছরের লক্ষ্যমাত্রা যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পূরণ করার মতো অবকাঠামো রয়েছে কি-না এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ হবে কি-না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সবার মত নিয়ে অর্থমন্ত্রী যদি তার বাজেট প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবমুখী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়, তা হবে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এ অর্থ আদায়ের জন্য রাজস্ব বোর্ডের অবকাঠামো সুবিধা যথেষ্ট কি-না, সেটা বিবেচনায় রাখা চাই। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে অনেক ক্ষেত্রে ছাড় প্রদান করা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ মত দিয়েছেন, নতুন কর আরোপ কিংবা বিদ্যমান কর হার বাড়ানোর সব সুযোগকে অর্থমন্ত্রী কাজে লাগাননি। অন্যদিকে, ব্যয়ের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধনজনিত রাজস্ব ব্যয় হিসেবে ২৬ হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি অংশ ব্যয় হবে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে। এসব ব্যাংকে পরিচালনার সমস্যা রয়েছে। ব্যবস্থাপনার দক্ষতা-মানও দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সেসবের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে জনগণের ট্যাক্সের এ খাতে ব্যয়ের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবেই।

আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ক্রমাগত বড় হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে মান নিয়ে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, আমরা যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছি, তার তুলনায় কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না। কোনো কোনো প্রকল্পে নির্ধারিত ফল পেতে অনেক বেশি সময় চলে যাচ্ছে এবং এ কারণেও ব্যয় বাড়ছে অনেক বেশি। পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি একটি অর্থবছরের বিভিন্ন প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখিয়েছে, প্রকল্প সমাপ্ত করার সময় বেশি লেগেছে ২৯ থেকে ২০০ শতাংশ। আর ব্যয় বেড়েছে ২৫ থেকে ২৫০ শতাংশ। পরের বছরগুলোর প্রকল্প পর্যালোনা করলেও কমবেশি একই ফল মিলবে বলে ধারণা করা হয়।

সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশীয় সূত্রে অর্থায়ন বাড়ছে। এটাকে অনেকেই ভালো লক্ষণ বলে মনে করেন। কিন্তু এর আরেকটি দিক রয়েছে। দেশীয় সূত্রে অর্থায়নের দায় তুলনামূলক বেশি। শুধু বিদেশি ঋণের তুলনায় বেশি পরিমাণে সুদ প্রদান নয়, এর আরেকটি সমস্যা হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ঘাটতি। বিদেশি সূত্রে প্রাপ্ত অর্থের তুলনায় দেশীয় অর্থের জন্য সুদ বাবদ ব্যয় বেশি পড়ে। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় মনে রাখা চাই। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের প্রদত্ত অর্থের ব্যয় সঠিক সময়ে সম্পন্ন হলো কি-না, কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটর করে থাকে। কিন্তু দেশীয় সূত্রে অর্থ গ্রহণ করা হলে এ বিষয়টি তেমনভাবে কার্যকর দেখা যায় না। সরকার চাইলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিংবা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এ অর্থের ব্যবহার যথাযথভাবে হচ্ছে কি-না, সেটা নিয়ে কারও কাছে তারা জবাবদিহি করে না। আগামী অর্থবছরে পদ্মা সেতুসহ কয়েকটি বৃহৎ অঙ্কের অবকাঠামো প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করতে চাইছে। এগুলোতে যেন অনিয়ম-দুর্নীতি না হয়, সেটা সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প মূল্যায়নে বরাদ্দ করা অর্থের কতটা ব্যয় হয়েছে_ সেটাই প্রধান মানদণ্ড হয়ে আছে। এখন সময় এসেছে এর গুণগত মান বিবেচনার। কাজটি সময়মতো হয়েছে এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি রয়েছে কি-না সেটা যেমন দেখতে হবে, তেমনি দেখতে হবে প্রকল্প থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে কি-না। ভারত, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে এবং অর্থনীতিতে তার সুফলও মিলতে শুরু করেছে।

বাজেটে বেসরকারি খাতকে উৎসাহ প্রদানে বেশ কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কর অবকাশের সময়সীমা বেড়েছে। ঢাকার বাইরে শিল্প স্থাপন করা হলে কর রেয়াত মিলবে। বিপুলসংখ্যক শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। পুঁজিবাজারের জন্য রয়েছে রাজস্ব সুবিধা। ছোট-বড় সব ধরনের বিনিয়োগকারী এ পদক্ষেপকে সাধারণভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। এখন জরুরি হচ্ছে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে অন্যান্য পদক্ষেপের প্রতি মনোযোগ প্রদান। দেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতি যথেষ্ট শ্লথ। পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছেন। এখন তাদের দিক থেকে করণীয় হচ্ছে নূ্যনতম মজুরি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করা। এর ফলে কর্মদক্ষতা বাড়বে এবং তাতে উদ্যোক্তারাও লাভবান হবেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ শিল্প নিয়ে যে শঙ্কা, সেটা দূর হবে। সরকার পোশাকের বাইরে আরও কিছু রফতানিমুখী শিল্পের জন্য সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাবও অর্থনীতিতে পড়বে বলে আশা করা যায়।

পরিশেষে বলব, অর্থমন্ত্রী তার আর্থ-সামাজিক লক্ষ্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখবেন এবং বাস্তবসম্মত পন্থা অনুসরণে মনোযোগী হবেন। এ লক্ষ্য অর্জনে যেসব আর্থিক, অবকাঠামো এবং অন্যান্য পদক্ষেপ জরুরি, সেগুলোও সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা চাই।

অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)