Dr Khondaker Golam Moazzem on marketing of public sector corporations

Published in Banik Barta on Sunday, 9 February 2014.

বিপণন ব্যর্থতায় পিছিয়ে পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশন

কোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্য-ব্যর্থতার অনেকটাই নির্ভর করে পণ্য ও সেবা বিপণনের ওপর। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দও রাখছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো পন্থাটি অবলম্বন করলেও ব্যতিক্রম রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনগুলো। বিপণনে এ ব্যর্থতায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে তারা।

সুমন আফসার

কোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্য-ব্যর্থতার অনেকটাই নির্ভর করে পণ্য ও সেবা বিপণনের ওপর। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দও রাখছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো পন্থাটি অবলম্বন করলেও ব্যতিক্রম রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনগুলো। বিপণনে এ ব্যর্থতায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে তারা।

চিনি, পাটজাত পণ্য, বস্ত্র, সার, টিউব লাইট, মোটরসাইকেল, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ আরো বেশ কয়েকটি খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, পরিবহন ও টেলিযোগাযোগ সেবা খাতেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু রয়েছে। পণ্য বা সেবার প্রচারণায় এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিগত সিদ্ধান্তের অভাবেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচারণায় গুরুত্ব দিতে পারছে না। প্রচারণার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি নির্দিষ্ট কিছু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছেই নিয়মিত পণ্য বা সেবা সরবরাহ করে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনগুলো। এর বাইরে পণ্য বা সেবা বিক্রির ক্ষেত্রে খুব বেশি আগ্রহী নয় তারা। পাশাপাশি অদক্ষ ও অতিরিক্ত জনবলও করপোরেশনগুলোর পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে দায়ী।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, অদক্ষতা ও অতিরিক্ত জনবলসহ আরো কিছু কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য বা সেবা দিতে পারছে না। বিপণন বিষয়টি উপেক্ষা করাও এর আরো একটি কারণ।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার (বিএসএফআইসি) আওতায় ১৫টি চিনিকল ও একটি যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দুর্বল বিপণন ব্যবস্থার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের চিনি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। মিলগুলোয় উৎপাদিত চিনির একটি অংশ সরবরাহ করা হয় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ফায়ার সার্ভিস, ক্যাডেট কলেজ, চিনিকলগুলোর রেশন দোকান ও আখচাষীদের মধ্যে। এর বাইরে চিনি বিক্রি করতে পারছে না চিনিকলগুলো। অথচ দেশী চিনিকলগুলোর চিনি গুণগত মানে আমদানি করা ও পরিশোধিত চিনির তুলনায় ভালো বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু দুর্বল বিপণন ব্যবস্থার কারণে প্রতিযোগী পরিশোধন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পেরে উঠছে না তারা।

বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থার (বিএসইসি) অধীন নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টি মুনাফা করলেও তিনটি কয়েক বছর ধরে লোকসানে রয়েছে। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে না ওঠায় তিন অর্থবছর ধরেই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। বিএসইসির লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেড (ইটিএল)।

ইটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে উৎপাদিত বাল্ব বিক্রি করা সম্ভব নয়। ফলে বাজারে আমদানি করা অন্য বাল্বের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে। মূলত সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ইটিএলের পণ্য সরবরাহ করা হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ২০০৯ সালে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করে। সেবার গতি ও দাম বিবেচনায় অধিকাংশ গ্রাহকই সন্তুষ্ট। তবে প্রচারণার অভাবে এ সেবার গ্রাহকসংখ্যা এখনো সীমিত। গত পাঁচ বছরে মাত্র ১৩ হাজার গ্রাহককে এ সেবার আওতায় আনতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে সেবার প্রচারণায় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ ব্যয় নিয়ে পরবর্তী সময়ে সরকারি নিরীক্ষায় আপত্তি তোলা হয়।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হক বলেন, মূলত একাধিপত্য বিস্তারের ধারণা থেকেই অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। এ কারণেই বিপণনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বিভিন্ন খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকই শক্তিশালী বিপণন কৗশল নিয়ে এগিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এতে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে।