Money whitening options discourage honest taxpayers: Mustafizur Rahman

Published in যুগান্তর on Sunday, 24 April 2016

ব্যবসায়ীদের দাবি আবাসনে অব্যাহত রাখা

নতুন বাজেটে কালো টাকা থাকা না থাকা বিতর্ক

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

budgetকালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে আবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। খোদ অর্থমন্ত্রী চান না আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত থাকুক। তার ভাষায়, ‘মূলত অপ্রদর্শিত আয়, অবৈধ আয়। এ কারণে আয় বৈধ করার সুযোগ দেয়া ইউসলেস। এটা কেউ নেয় না। রাজস্ব আসছে না। বিনিয়োগকারীরা সুযোগ নিচ্ছে না, কারণ হচ্ছে দুদক।’ সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে অর্থমন্ত্রী এ মত প্রকাশ করেন। অপরদিকে আবাসন খাতসহ ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জোর দাবি বিনা প্রশ্নে এই সুযোগ নিশ্চিত করা। উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কালো টাকা বিনিয়োগের পক্ষে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তবে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার ফলে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন, ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা এ সুবিধা অর্থনীতির স্বার্থে বন্ধ করা উচিত বলেও মত ব্যক্ত করেছেন।

এনবিআরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আগামী বছরের বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এ সুবিধা বাতিল করতে হলে আইন পরিবর্তন বা সংশোধন করতে হবে। তবে স্পর্শকাতর এই বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, চলতি বছরও অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার চিত্র হতাশাজনক। অজানা ভয়ে অনেকেই এ সুযোগ নিচ্ছেন না। তবে আবাসন খাতেই বিনিয়োগ হয়েছে বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ করবর্ষে ১৫৭ জন করদাতা ১৭৬ কোটি ৯০ লাখ কালো টাকা সাদা করেছেন। এর বিপরীতে কর আদায় হয়েছে ২০ কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ করবর্ষে ২২২ জন করদাতা কালো টাকা সাদা করেছেন। ৬৭৬ কোটি টাকার বিপরীতে এনবিআর কর পেয়েছে ২৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৫-১৬ করবর্ষে অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ জন করদাতা ২ কোটি ৯২ লাখ কালো টাকা সাদা করেছেন। এর বিপরীতে এনবিআর কর পেয়েছে মাত্র ৭৪ লাখ টাকা। পরবর্তী সময় এনবিআর আর তথ্য হালনাগাদ করেনি।

বৈধ আয় কিন্তু তা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা হয়নি এমন অর্থকেই অপ্রদর্শিত অর্থ বলা হয়। সাধারণভাবে যা কালো টাকা নামে পরিচিত। তবে আয়করের ভাষায় কালো টাকা বলতে কিছু নেই। বৈধ উৎস থেকে অর্জিত অর্থও কালো হতে পারে। যদি টাকার মালিক তার আয়কর বিবরণীতে অর্থের উল্লেখ না করেন এবং ওই টাকা করযোগ্য হলেও কর না দেন।

এফবিসিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘নৈতিক কারণে আগের অপ্রদর্শিত আয়কে কম হারে কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করার সুযোগ না দেয়া। তবে মূলধনী বিনিয়োগকে উৎসাহিত এবং সম্পদ ও মূলধন পাচার প্রতিরোধে অপ্রদর্শিত আয়কে যদি বৈধ করার সুযোগ রাখা হয় তবে তা কর্মসংস্থান সৃষ্টির ও ভবিষ্যৎ রাজস্ব আয়ের উৎস উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে বিনিয়োগে প্রবাহিত করার সুযোগ রাখা।’

যদিও আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এর ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ১৯ বিবিবিবিবি ধারা অনুযায়ী, কালো টাকা বিনিয়োগ করে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বর্গমিটারপ্রতি একটি নির্দিষ্ট কর দেয়ার বিধান রয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছাড়া অন্য সরকারি সংস্থার নজরদারিতে না আসতে চাওয়ার কারণে কালো টাকা সাদা করা ব্যক্তির সংখ্যা কমে গেছে। কারণ নির্ধারিত করের অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করলে এনবিআর প্রশ্ন করে না। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারি অন্যান্য সংস্থা অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। এই ঝামেলা এড়াতে অনেকে চাইলেও কালো টাকা বিনিয়োগ করছেন না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিরোধী। এর দুটি কারণ। একটি এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। খুব কম টাকা এখন পর্যন্ত সাদা হয়েছে। দ্বিতীয়টি বারবার সুযোগ দিলে ভবিষ্যতের আশায় কালো টাকা অর্জনের প্রবণতা বাড়ে। বিনা প্রশ্নের ব্যবসায়ীদের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কালো টাকা অর্জন করলে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না এটা নৈতিকতাবিরোধী। এতে ঘুষ-দুর্নীতি আরও বাড়বে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। নৈতিক দিক থেকে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন। অর্থনৈতিক দিক থেকে বারবার সুযোগ দেয়া হলেও এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। খুব বেশি টাকা সাদা করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দিক থেকে সরকারের জনসমর্থনে ভাটা পড়তে পারে। কারণ যাদের টাকা আছে সরকার শুধু তাদেরই সুবিধা দেয় জনগণেরও এটা ভাববারও সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বারবার সুযোগ না দিয়ে একবারের জন্য সুযোগ দেয়া উচিত এবং বলা উচিত, সুযোগ না নিলে পরবর্তী সময় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ব্যক্তিগতভাবে নৈতিকতার দিক থেকে কালো টাকার সুযোগ দেয়াকে অনৈতিক বলে মনে করি। তবে বাস্তবতা এক জিনিস। আর নৈতিকতা অন্য। অর্থনীতিতে ক্রমশ কালো টাকার পরিমাণ বাড়ছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিনা প্রশ্নে সব খাতে কালো টাকার বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দিলে বিনিয়োগে আসতে পারে। এতে অর্থনীতি বেগবান হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। আবাসন খাতে মন্দা বিরাজ করছে। মন্দা কাটাতে কর দিয়ে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখলেও সরকারের অন্য সংস্থাগুলোর প্রশ্ন তোলার ভয়ে সেটি কেউ উন্মুক্ত করতে চাচ্ছে না। এর সঠিক সুরাহা প্রয়োজন।

রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভুইয়া বলেন, আবাসন খাতের নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সেক্টরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জড়িত। এদের কথা চিন্তা করে আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বিনা প্রশ্নে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া উচিত। বিশ্বের সব দেশেই এ ধরনের সুযোগ দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, দেশে ১৪ লাখ মানুষ ট্যাক্স দেয়। তার মানে বাকি যারা অর্থ উপার্জন করছে সবাই কি তাহলে অবৈধভাবে করছে? আয়কর রিটার্নে অর্থ প্রদর্শন না থাকলেও বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট-প্লট কিনতে পারেন সে সুযোগটা বাজেটে চাচ্ছি। সঙ্গে এই অর্থের ব্যাপারে যাতে কোনো সরকারি সংস্থা প্রশ্ন করতে না পারে সে বিধানও রাখতে হবে।