Mustafizur Rahman suggests encouraging private investment for growth in employment generation

Published in বাংলাদেশ প্রতিদিন on Thursday, 16 June 2016

দিকনির্দেশনা নেই বাজেটে

কর্মসংস্থান কীভাবে হবে

মানিক মুনতাসির

টানা দুই বছর কর্মসংস্থানে ভাটা বিরাজ করছে। এই খড়া কাটাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনাও নিয়েছেন। কিন্তু এর জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমন কি নতুন অর্থবছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে তাও তিনি পরিষ্কার করেননি। তবে আগামী বছর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বরাবরের মতো ব্যক্তি খাতকেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। ২ জুন অর্থবিভাগ থেকে প্রকাশিত আগামী তিন বছরের জন্য মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-বিবৃতি শীর্ষক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ এই অর্থবছরে কর্মসংস্থানের জন্য ৬ দফা কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনাগুলো নিম্নরূপ : আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যক্তি উদ্যোগের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশকে উৎসাহিত করে বেকারত্ব দূর করা। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। বিদেশের শ্রমবাজারকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য উপযোগী করা। এর জন্য প্রয়োজনে কূটনৈতিক তত্পরতা বাড়ানো হবে। বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন দূতাবাস খোলা হবে এবং সরকারি খাতে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছয়টি পরিকল্পনার কোনোটিই অবশ্য নতুন কোনো উদ্যোগ নয়। এসব উদ্যোগ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও ছিল। তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জন করতে হলে এসব পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই বলে অর্থবিভাগের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে মাত্র ৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে প্রতি বছরে ৩ লাখ মানুষ চাকরি বা কাজ পেয়েছে। অথচ এ সময়ে দেশের কর্মবাজারে প্রবেশ করেছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। সে হিসাবে দেশে দুই বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। এর আগে ২০০২-০৩ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত প্রতি অর্থবছর চাকরি বা কাজ পেয়েছিল ১৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর প্রকাশিত জানুয়ারি-২০১৬ এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদায়ী বছরেও (২০১৫) আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশে কমংস্থানের হার কমেছে। চলতি বছরও কমবে। শুধু তাই নয়, পরের তিন বছর ২০১৯ সাল পর্যন্ত শ্রমবাজার ও চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হবে বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশে কর্মসংস্থান কমবে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হারে। এ ছাড়া ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কমবে ৪ শতাংশ হারে।

প্রস্তাবিত নতুন বাজেটেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন কর্মসংস্থানের জন্য ব্যক্তি খাতই বেশি ভূমিকা রাখছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ খাতের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তবে সরকারি খাতে চাহিদা অনুযায়ীই কর্মসংস্থান হচ্ছে। কেননা এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে আরেকটা ধাক্কা প্রয়োজন।

বিবিএসের সর্বশেষ প্রকাশিত (২০১৫ সালের অক্টোবরে) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এখনো কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ খাতের ৪৫ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এরপর সেবা খাতে ৩৪ এবং শিল্প খাতে ২১ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। কিন্তু আগামী বছরগুলোতে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি বা কৃষি খাতের বিকাশে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি তিন বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায়। সরকার বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণাধীন এলএনজি টার্মিনালে কাজ সম্পন্ন হবে। তখন বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় গ্যাস আমদানি করা হবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর দেশে গ্যাসের কোনো সংকট থাকবে। ফলে তখন কর্মসংস্থানও বাড়বে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে সরকারি বিনিয়োগও আরও বাড়াতে, পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলাসহ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।