Professor Mustafizur Rahman on funding for land acquisition and projects

Published in আলোকিত বাংলাদেশ on Tuesday, 9 February 2016

উন্নয়নে স্থবিরতা কাটানোর উদ্যোগ

ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প প্রস্তুতিতে হচ্ছে তহবিল

জাহিদুল ইসলাম

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা কমিয়ে আনতে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পাওয়ার আগেই প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগিয়ে নিতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে সংস্কার করা হচ্ছে এ সংক্রান্ত আইন। ভূমি অধিগ্রহণে গড়ে তোলা হচ্ছে আলাদা একটি তহবিল। তাছাড়া প্রক্রিয়ার পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে রাখতে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফান্ড’ নামে আলাদা একটি তহবিল। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফাস্টট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্প অনুমোদন ও সংশোধনে বেশকিছু নীতিমালা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার এডিপি হাতে নেয় সরকার। চলতি অর্থবছরে তা ১ লাখ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করে। সাত বছরে এডিপির আকার চারগুণে উন্নীত হলেও বাড়ছে না বাস্তবায়নের হার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে মাত্র ২৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলছে এডিপি কাটছাঁটের প্রক্রিয়াও।জানা যায়, ৯০ দিনের মধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প অনুমোদনের বাধ্যবাদকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাবের কারণে। গড়পড়তায় প্রতিটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে তিনগুণের বেশি সময় লাগছে। তাছাড়া অনুমোদনের পরপরই প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায়। অনেক ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করার আগেই প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এর ফলে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে বাড়তি সময়ে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হচ্ছে। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বেড়ে যাচ্ছে প্রকল্পের সংখ্যা। এ অবস্থার অবসানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প অনুমোদনে জটিলতা অর্থনীতির স্বাভাবিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে মামলাসহ নানা জটিলতায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ আটকে আছে বছরের পর বছর। এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া উচিত।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প প্রণয়ন এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। বিষয়টা অবশ্যই ইতিবাচক। প্রকল্প প্রণয়ন ব্যবস্থায় দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। তবে শুধু অর্থ বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না, এ খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে অর্থের চাইতে বেশি বাধা সৃষ্টি করে আইনি সমস্যা। প্রতিটি প্রকল্পের ভূমি নিয়ে কোনো না কোনো মামলা করা হয়। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দিকে ফাস্টট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্কফোর্সের প্রতিনিধিদের বৈঠকে নতুন করে আলোচনায় আসে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতার নানা বিষয়। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অযাচিত কালক্ষেপণ হয়। এ অবস্থায় ভূমি অধিগ্রহণে আলাদা তহবিল গঠনে বিস্তারিত আলোচনা হয় সভায়। আলোচনা শেষে বিষয়টি উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরীন জানান, প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফান্ডের কাজ চলছে। অনেক সময় প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব হয়। আবার প্রকল্পের অনুকূলে ভূমি অধিগ্রহণেও বাড়তি সময় লাগে। এ অবস্থায় অর্থ সঙ্কটের কারণে যেন কোনো প্রকল্পের কাজ আটকে না থাকে এ লক্ষ্যে তহবিল গঠন করা হচ্ছে।

জানা যায়, বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও কারিগরি সমীক্ষায় প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফান্ডের অর্থ ব্যয় করা যাবে। প্রকল্পের দলিল প্রণয়ন ও সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কাজেও ব্যয় হবে এ তহবিলের অর্থ।